মাদারীপুরে শুধু ওসি’র বাড়ির জন্য সোয়া তিন কোটি টাকার সেতু নির্মাণ

অবিশস্য হলেও সত্য মাদারীপুরে শুধুমাত্র একজন ওসি’র বাড়ির জন্য সরকার সোয়া তিন কোটি টাকা খরচে একটি কালভার্ট সেতু নির্মাণ করেছে। সম্প্রতি সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষে সেতুতে শিলান্যাস স্থাপন করা হলে এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়। অনেকেই দাবী করছেন, ছোট্ট এই সেতুটি নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত শেষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবী করছেন স্থানীয় সচেতন নাগরিকেরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের ইটেরপুল থেকে পাথুরিয়ারপাড় সড়কের ছয়না গ্রামের কামাল মোল্লার বাড়ির সামনে ‘বরিশাল খালের’ উপরে একটি কালভার্ট সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। কামাল মোল্লার বড় ভাই মোস্তাফিজুর রহমান মোল্লা শরীয়তপুরের জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

বর্তমানে তিনি ঢাকার উত্তরা হাইওয়ে থানায় কর্মরত রয়েছেন। কামাল মোল্লার বাড়ির কথা সেতুর শিলান্যাসে উল্লেখ থাকলেও মূলত ওসি মোস্তাফিজুর রহমানই মূলত ওই বাড়ির মালিক বলে একাধিক স্থানীয় ব্যক্তি জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, কামাল মোল্লার ভাই শরীয়তপুরের জাজিরা থানায় দীর্ঘদিন ওসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে ঢাকার উত্তরা হাইওয়ে থানায় কর্মরত আছেন। মূলত তিনি গত বছর তাদের ফসলি জমিতে বালু ফেলে একটি বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ করছেন।

নতুন এই বাড়ি যেহেতু ইটেরপুল-পাথুরিয়াপাড় সড়কের ‘বরিশাল খালে’র পূর্ব পাড়ে অবস্থিত। তাই তিনি জাজিরা থানায় ওসি থাকাকালীন সময়ে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে সরকারের মন্ত্রণালয়ে বিশেষ তদবির করে শুধু তার নিজের বাড়ির জন্য এই সেতুটি পাস করিয়ে আনেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এডিপি প্রকল্পের আওতায় মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়েনের ছয়না গ্রামের কামাল মোল্লার বাড়ির নিকট খালের উপওে আরসিসি কালভার্ট নির্মাণ কাজ ৩ কোটি ২৩ লাখ ৮৭ হাজার ৯৬ টাকায় আবরার এন্টারপ্রাইজের সাথে চুক্তি করে। যা চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হয়।

মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি এডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, ছয়না গ্রামের বাসিন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর (ওসি) মোস্তাফিজ। তিনি তাদের ফসলি জমিতে অবৈধভাবে বালু ভরাট করে নিজের ভাইদের নামের আড়ালে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। এত টাকা তিনি কোথায় পেলেন এই প্রশ্ন রইলো?

এছাড়া তিনি জাজিরা থানায় ওসি থাকার সময়ে সরকারের মন্ত্রণালয়ে প্রভাব খাটিয়ে তদবিরের মাধ্যমে শুধু মাত্র নিজের একটি বাড়ির জন্য একটি কালভার্ট সেতু নির্মাণ করেছেন। তাও সেতুটির শিলান্যাস দেখে জানতে পারলাম এত ছোট্ট একটি সেতু নির্মাণ করতে সরকার সোয়া তিন কোটি টাকা খরচ করেছে। যা অবিশ্বাস্য ও অস্বাভিক। এই সেতু নির্মাণ কাজের অনিয়মের সাথে যারা জড়িত তাদের সকলের তদন্ত পূর্বক সরকারি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী করছি।

এই বিষয়ে কথা হয় ইন্সপেক্টর মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের যৌথ পরিবার। পরিবারে প্রায় ৪০ জন সদস্য। সবাই এক সাথে থাকি। আর ওই বাড়িটি আমার নয়। আমার ভাই তুলতেছেন। আমাদের নতুন বাড়িতে যাতায়াতের ব্রীজটি আমরা সবার মতনই তদবির হয়ে এনেছি। কিন্তু এই রকম আরো ব্রীজ আছে এলাকায় খোজ খবর নিয়ে দেখেন। শুধু আমরা একারাই এরকম ব্রীজ করাইনি।’

এই বিষয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ বিলুপ্ত হওয়ায় তদকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান ওবায়দুর রহমান খান আত্মগোপনে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াদিয়া শাবাব জানালেন, আমিতো এখানে নতুন এসেছি। আমি কিছুই জানি না। আপনি যখন বললেন, আমি বিষয়টির খোজ খবর নেবো। একটি বাড়ির জন্য একটি সেতুতো নির্মাণ হওয়ার কথা নয়।