নাটোরের রোজী মোজাম্মেল মহিলা কলেজ পদের দ্বন্দ্বে এইচএসসির ফল বিপর্যয়
এবছর ১৩১ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৬৯ জনই অকৃতকার্য হয়েছেন। মূলত গভর্নিং বডির সভাপতি আর অধ্যক্ষ পদ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে অন্তদ্বন্দ্বে ফলাফলে এমন বিপর্যয় নেমে এসেছে। মুখ থুবরে পড়েছে গুরুদাসপুর পৌর সদরের রোজী মোজাম্মেল মহিলা কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থা।
কলেজের ৬ বছরের ফলাফলের তালিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৬ বছরে এইচএসসির ফলাফলে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী জিপিএ-৪ পয়েন্টের নিচে পেয়েছেন। অকৃতকার্য হয়েছেন ১৫৩ জন। এর মধ্যে চলতি বছরেই ৬৯ জন রয়েছেন। তাছাড়া এই সময়ে জিপিএ-৫ পেয়েছেন মোটে ২৫ শিক্ষার্থী।
কলেজ সূত্র জানাগেছে, ২০১৫ থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৯ বছরে পরিচালনা কমিটির সভাপতি বদল করা হয়েছে ১০ দফায়। অধ্যক্ষ বদলেছে ৭ বার। সভাপতি এবং অধ্যক্ষ এই দুইটি পদের দ্বন্দ্বেই ভেঙে পড়েছে শিক্ষাব্যবস্থা।
যে কারণে এমন বিপর্যয়।
২০১৫ থেকে ২৪ সাল পর্যন্ত পদের দ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে পৌঁছে। অবসরে যাওয়ার আগে বিভিন্ন পদে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ করে কয়েক কোটি টাকা বাণিজ্য করেন সাবেক অধ্যক্ষ ইব্রাহিম হোসেন। এরপর ওই বছরেই মায়া রানী চক্তবর্তীকে ভারপ্রাপ্ত করে আরো কিছু জনবল নিয়োগ করা হয়। আওয়ামী লীগের এই সময়ে নিয়োগ বাণিজ্যে আওয়ামীপন্থী কয়েকজন শিক্ষক আর্থিকভাবে লাভবান হন।
দুই বছর পর রুহুল করিম আব্বাসীকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ করে শূণ্যপদে অধ্যক্ষ হিসেবে মাহাতাব উদ্দিন নামের এক ব্যক্তিকে নিয়োগ করা হয়। তবে শিক্ষকদের একটা অংশ এই নিয়োগের বিরুদ্ধে ছিলেন। আওয়ামী লীগ নেতা শাহনেওয়াজ আলীকে সরিয়ে সভাপতি পদে আওয়ামী লীগ নেতা আবু হানিফকে আনা হয়। তার সময়ে অধ্যক্ষ মাহাতাব উদ্দিনকে কলেজ থেকে বিতারিত করা হয়।
এরপর সভাপতি পদে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম আসেন। এই সময়ে দফায় দফায় রুহুল করিম আব্বাসী এবং মাহাতাব উদ্দিন অধ্যক্ষ পদ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ান। একপর্যায়ে রুহুল করিম আব্বাসীকে সরিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয় উপাধ্যক্ষ আবুল কালামকে। এতে করে শিক্ষকরা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ায় পাঠদান ব্যবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে।
সবশেষ আওয়ামী লীগের পতনের পর বিএনপি নেতা আবু হেনা মোস্তফা কামাল রঞ্জুকে সভাপতি করা হলেও নিজেকে অধ্যক্ষ দাবি করে বিএনপি নেতা ওমর আলীকে কমিটির সভাপতি করেন আবুল কালাম। এনিয়ে আবরো দ্বন্দ্ব শুরু হয়। সবশেষ আবু হেনা মোস্তফা কামাল রঞ্জুকে আবারো এডহক কমিটির সভাপতি করে স্বপদে ফিরে আসেন মাহাতাব উদ্দিন।
সূত্র বলছে, ২০০১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের চেয়ারে বসানো হয় ইব্রাহীম হোসেন, সায়মা চৌধুরী, একরামুল হক, আবুল কালাম আজাদ, মায়া রানী, রুহুল করিম আব্বাসী, মাহতাব উদ্দিনকে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, গভর্নিং বডির সভাপতি আর অধ্যক্ষ পদ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে বছরজুড়েই দ্বন্দ্ব চলে। এসব কারণে ঠিকমতো পাঠদান করানো হয়না। একারণে ফলাফল খারাপ হওয়ায় কমছে শিক্ষার্থী সংখ্যাও।
কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বলেন, ছাত্রী-শিক্ষকের প্রেমের পর বিয়ে, নিয়োগ বাণিজ্য, আর্থিক অনিয়ম, সভাপতি, অধ্যক্ষ পদ নিয়ে দ্বন্দ্বসহ নানা কারণে কলেজটির শিক্ষা ব্যবস্থা মুখ থুবরে পড়েছে। কলেজের প্রশাসনিক কার্যক্রমসহ শিক্ষার্থীদের ফলাফলে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে এসেছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সেলিম আক্তার বলেন, সভাপতি বা অধ্যক্ষ পদের দ্বন্দ্বের জেরে কলেজের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রভাব পড়ছে। ফলাফলের দিকে নজর দিতে শিক্ষকদের নির্দেশনা দেওয়া হবে।
কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ব্যারিষ্টার আবু হেনা মোস্তাফা কামাল রঞ্জু বলেন, নিয়োগ বাণিজ্য, পদের দ্বন্দ্বসহ নানা কারনে কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। শিক্ষক-অভিভাবকদের নিয়ে সভা ডেকে শিক্ষা ব্যবস্থায় গতি ফেরাতে কাজ করবেন তিনি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন