সাতক্ষীরার দেবহাটার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলফা কারাগারে
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সদস্য ও দেবহাটা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আলফেরদৌস আলফাকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে সাতক্ষীরা আদালতে হাজির করে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেন। এসময় সাতক্ষীরা আমলী আদালত ৭ এর বিচারক রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে আলফাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
পরে পুলিশ তাকে সাতক্ষীরা কারাগারে প্রেরণ করে।
আলফেরদৌস আলফা (৫০) সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার উত্তর কোমরপুর গ্রামের আবুল কাশেম সরদারের ছেলে।
সাতক্ষীরা কোর্ট জিআরও অফিসের একটি দায়িত্বশীল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দেবহাটা থানায় দায়েরকৃত একটি চাঁদাবাজি ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় আলফাকে গ্রেফতার করেন যৌথবাহিনীর সদস্যরা। দেবহাটা থানার মামলা নং ২। তারিখ -২-১১-২০২৪। জিআর ৯২/২৪।
দেবহাটা থানার ওসি হযরত আলী বিষয়টি নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের জানান, যৌথবাহিনীর সদস্যরা আলফাকে কোমরপুর গ্রামের একটি খামারবাড়ি থেকে গ্রেফতার করে থানায় সোপর্দ করেন। এরপর তাকে আজ বুধবার সাতক্ষীরা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রেরণ করা হয়।
উল্লেখ্য, আলফেরদৌস আলফা খুব ছোট বেলা থেকেই চোরাচালানের সাথে জড়িত। চোরাকারবারীদের কুলি থেকে কোটিপতি বনে যাওয়ার পর আলফাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সাতক্ষীরা জেলা সহ দেশের বিভিন্ন জেলার কুখ্যাত চোরাকারবারীদের সাথে নেটওয়ার্ক স্থাপন করে চুটিয়ে চালাতে থাকে তার অবৈধ কারবার। বিশেষ করে আওয়ামী সরকারের আমলে আলফা হয়ে উঠে বেপরোয়া। তৎকালীন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, সাবেক এমপি প্রয়াত মুনসুর আহমেদের পালিত পুত্র বনে যাওয়া আলফা ধরাকে সরাজ্ঞান করতে থাকে। নিজ এলাকাসহ জেলায় গড়ে তোলে চোরাকারবারীদের সিন্ডিকেট। এক সময় সাধারণ সদস্য হিসেবে নাম লেখায় আওয়ামী লীগের খাতায়। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার এমপি, মন্ত্রিদের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। এরপর সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামের বাপজান হয়ে ওঠে এই কুখ্যাত চোরাকারবারী আলফা। সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামের পাশাপাশি এক মহিলা নেত্রীর ছত্রছায়ায় স্বৈরাচার সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাথেও গড়ে ওঠে সখ্যতা। পুলিশ চলতো তার কথায়। একপর্যায়ে দেবহাটা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়নপত্রও আলফা ক্রয় করেছিল কিন্তু পরবর্তীতে দলীয় সিদ্ধান্তে তাকে সরে যেয়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করতে হয়েছিল। অবশ্য জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামসহ শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতার আশীর্বাদ ও সহযোগীতায় নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল সে কিন্তু বিধি বাম হওয়ায় বেশিদিন উপজেলা চেয়ারম্যান পদে থাকা হয়নি তার। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পরিষদ বিলুপ্ত করায় তার চেয়ার চলে গেছে।
আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী এই সদস্য এর আগে জেলা পরিষদের সদস্যও হয়েছিলো। অনেক ক্ষমতাশালী এই চোরাকারবারী আলফেরদৌস আলফা জেলার নেতাদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে সাতক্ষীরায় ছাত্র আন্দোলন নস্যাৎ করার সকল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল বলে অভিযোগ উঠেছিলো বিভিন্ন পর্যায় থেকে। গত ৫ আগষ্ট খুনি হাসিনা পালিয়ে গেলে জেলা আওয়ামীলীগের নেতাদের মতো সে-ও আত্মগোপনে চলে যায়। কিছুদিন পর বরাবরের মতো অদৃশ্য শক্তিতে আবারো প্রকাশ্যে এসে তার পুরনো কারবার শুরু করে। তবে, সন্ত্রাসী, চাঁদবাজিসহ একাধিক মামলার আসামি আলফাকে যৌথবাহিনীর সদস্যরা অবশেষে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। যদিও এর আগে ওয়ান ইলেভেনের সময় যৌথবাহিনী ও পরে পুলিশের হাতে মাদকসহ একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছে আলফা। সাত বছরের কারাদণ্ডও হয়েছে তার।
চলতি বছরেও স্বর্ণ চোরাচালান মামলায় তাকে ও তার সহোদরকে খুলনায় কারাগারে যেতে হয়েছে।
আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী সদস্য আলফা এখন অঢেল ধন সম্পদের মালিক। দুদকে অনেকবার অভিযোগ হলেও কোন কাজ হয়নি। স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের আমলে জেলা পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা তাকে তোয়াজ করেই চলতেন। খুলনার শেখ হেলাল থেকে শুরু করে অনেক বড় বড় রাজনৈতিক নেতা ও সরকারের আমলারা আলফার আর্শীবাদে তুষ্ট হতেন।
আলফার বাড়ীতে ভীড় জমাতেন রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি পুলিশ ও কথিত সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের হর্তাকর্তারা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন