পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় প্রবাসী যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু, থানায় মামলা
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের তাফালবাড়িয়া এলাকার কামাল হাওলাদার নামে প্রবাসী এক যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।
এ ঘটনায় মঠবাড়িয়া থানায় একটি অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, মৃত কামালের শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মারা যাওয়ার পুর্বে সে বমি করেছে বলে জানা গেছে। স্ট্রোক বা হার্ট এ্যাটাকজনিত কারণে তার মৃত্যু হতে পারে বলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ধারনা করেছেন। এজন্য প্রাথমিকভাবে ইউডি মামলা করা হয়েছে।
তবে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন পেয়ে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ ঘটনায় ইতোপূর্বে থানায় কোন লিখিত অভিযোগ বা জিডি করার বিষয় অবগত নন বলেও জানিয়েছে তিনি।
কামাল হাওলাদার (৪৫) ৬নং ওয়ার্ড তাফাল বাড়িয়া গ্রামের মৃত রুস্তম হাওলাদারের (রুস্তম চৌকিদার) পুত্র।তার কোন স্ত্রী সন্তান নেই। হেনা আক্তার (রানী) নামে তার বিবাহিত এক বোন পার্শ্ববর্তী খেঁতাছিড়া এলাকায় থাকে। পরিবারে লোক বলতে ৮০ বছরের একমাত্র বৃদ্ধ মা ছাড়া আর কেউ নেই তার।
গত ২৩ নভেম্বর (শনিবার) সন্ধ্যায় সাপলেজা এলাকার কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী কামালকে বাড়ি থেকে ধরে এনে জিম্মি করে বেধড়ক মারধর করে। কামালের বোনের কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে।টাকা না পেয়ে তাকে রাত ১০টা পর্যন্ত পাশবিক নির্যাতন করে।হাসপাতালে নিতে বাধা দেওয়ায় ২৬ নভেম্বর (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় বাড়িতে চিকিৎসাবিহীন থাকা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ সময় তাকে মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করে।
জানা গেছে, কামালের বোন রানীর সাথে বাবুরহাট এলাকার আব্দুল কাদেরের পুত্র মানিকের সাথে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। গত ২২ নভেম্বর (শুক্রবার) রানী পার্শ্ববর্তী চরদুয়ানি এলাকা থেকে ভাড়াটিয়া লোকজন এনে তার প্রতিপক্ষ মানিকের ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে। স্থানীয়রা এ হামলা প্রতিহত করে।পরদিন সাপলেজা এলাকা থেকে একদল সন্ত্রাসী ১৬টি মটরসাইকেলের বহর নিয়ে রানীর ভাই কামালকে বাড়ি থেকে ধরে মারধর করতে করতে সাপলেজা বাজারে নিয়ে আসে।
এ দৃশ্য বাবুবাজারে থাকা সিসি ক্যামেরায় সংরক্ষিত আছে। পথিমধ্যে গফুর হাওলাদার বাড়ির ব্রীজের ওপর রেখে হাত পা বেধে তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এরপর সাপলেজা বাজারে নিয়ে প্রথমে একটি অফিসে রেখে মারধর করা হয়। এ সময় সে অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে চেতনা ফিরে আসলে সাপলেজা মাছবাজারের তলসেটে নিয়ে বুকের ওপরে নিচে লোহার রড দিয়ে চাপা দিয়ে টর্চার করা হয়।
কামালের ব্যবহৃত মোবাইল থেকে তার বোন রানীকে কল দিয়ে কান্নার চিৎকার শোনানো হয় এবং ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। রাত ১০টার দিকে স্থানীয় একজন সমাজসেব ও কামালের এক বন্ধুর মাধ্যমে তাকে উদ্ধার করা হয়। মেডিকেলে ভর্তি হয়ে যাতে মামলা করতে না পারে সেজন্য তাকে হাসপাতালে নিতে না দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
কামালের বোন রানী বলেন, আমার ভাইকে মারধর করার পর তারা আমাকেও খুঁজতে থাকে। আমি আত্মগোপনে থেকে ২৫ নভেম্বর আমার ভাইকে নিয়ে দক্ষিণ গুলিশাখালী সেনা ক্যাম্পে গিয়ে ঘটনার সাথে জড়িতদের নাম উল্লেখ করে একটি লিখিত অভিযোগ প্রদান করি।
ওই অভিযোগের বাদি ছিল আমার ভাই নিজেই।সেনাবাহিনী বিবাদীদের ডেকে শালিস মেনে দেয়। এরপর সেখান থেকে হাসপাতালে যেতে যাইলে বিবাদীরা বাধা দেয়।আমরা অনুপায় হয়ে বাড়িতে চলে আসি।বাড়িতে চিকিৎসা ছাড়াই আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়। আমার ভাইকে যারা হত্যা করেছে আমি তাদের ফাঁসি চাই।
এ ব্যাপারে স্থানীয় বিএনপি নেতা ও ইউপি সদস্য মাহাবুব হোসেন জানান, মারামারির মত একটা ঘটনা ঘটেছে। তবে এ ঘটনার পর সে স্বাভাবিক ছিল। বাড়িতে স্বাভাবিক কাজ কর্মও করেছে। হঠাৎ কেন মারা গেল- এটাই এখন রহস্যজনক বিষয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন