পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৭তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে

খাগড়াছড়ি রামগড়ে অগ্রণী শিশু-কিশোর কেন্দ্রের র‍্যালি ও সমাবেশ

খাগড়াছড়ি-পার্বত্য জেলার রামগড় উপজেলায় পার্বত্য চুক্তির অসারতা তুলে ধরে র‌্যালি ও সমাবেশ করে অগ্রণী শিশু-কিশোর কেন্দ্র। জেলার রামগড়ে সোমবার (২ ডিসেম্বর) সকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অসারতা তুলে ধরে র‌্যালি ও সমাবেশ করেছে ‘অগ্রণী শিশু-কিশোর কেন্দ্র’ নামে একটি সংগঠন।

র‌্যালি ও সমাবেশের ব্যানার ক্যাপশনে লেখা ছিল, “ও সন্তু গো, আন্দোলনের কথা বলো, এক যে ছিল শান্তিচুক্তি, অনেক হলো”।

প্রথমে কয়েক শ’ শিশু, কিশোর-কিশোরীর অংশগ্রহণে রামগড় উপজেলার খাগড়াছড়ি-ঢাকা মহাসড়কে একটি র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালি শেষে তারা সমাবেশ করেন। পার্বত্য চুক্তির অসারতা তুলে ধরে রামগড়ে র‌্যালি ও সমাবেশ করে অগ্রণী শিশু-কিশোর কেন্দ্র।

এসময় তারা “ঈঐঞ অপপড়ৎফ রং ধ ফবধফ ষবঃঃবৎ; পার্বত্য চুক্তি কাগুজে দলিল ছাড়া কিছু নয়; আমাদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বন্ধ কর; পার্বত্য চুক্তি সরকারের হিমঘরে, তার আশা ছেড়ে দাও” ইত্যাদি শ্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

সমাবেশ লিটন চাকমার সভাপতিত্বে ও ধনু ত্রিপুরার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন কলেজ ছাত্র শান্ত চাকমা ও নারী সমাজের প্রতিনিধি শর্মিলা চাকমা।

বক্তারা বলেন, ১৯৯৭সালের ২রা ডিসেম্বর আজকের এই দিনে তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকারের সাথে সন্তু লারমা যে চুক্তি করেছেন আজ ২৭বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। এ চুক্তির মাধ্যমে জুম্ম জনগণ হত্যা, ভূমি বেদখল, নিপীড়ন-নির্যাতন ছাড়া কোন সুফল পায়নি। অপরদিকে সন্তু লারমা ও পিসিজেএসএস সরকারের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে ৫০হাজার টাকাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন।

সন্তু লারমা আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারে বসে জুম্ম জাতিকে ধ্বংস করে চলেছেন।

বক্তারা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি জুম্ম জনগণের একটি মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। সন্তু লারমা চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন না করে অনির্বাচিত আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে বসে থেকে শাসকগোষ্ঠির জুম্ম দিয়ে জুম্ম ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছেন। সন্তু লারমার এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে ছাত্র-যুব সমাজসহ সকল জনগণকে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

বক্তারা আরো বলেন, চুক্তির দীর্ঘ ২৭বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামে বহু রক্তক্ষয় হয়েছে। জুম্ম জনগণ অপূরণীয় ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তাই যে চুক্তি ২৭বছরেও বাস্তবায়ন না হয়ে জনগণের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় সে চুক্তির আশায় আমাদের আর বসে থাকলে হবে না। আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতির অস্তিত্ব রক্ষার্থে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

সমাবেশ শেষে জুম্ম জনগণের সাথে প্রতারণা ও জাতি ধ্বংসের নীলনক্সা বাস্তবায়নের অভিযাগে শিশু-কিশোরসহ উপস্থিত লোকজন চুক্তি স্বাক্ষকারী পক্ষদ্বয়ের(শেখ হাসিনা ও সন্তু লারমা) কুশপুত্তলিকায় জুতাপেতা করেন, থুথু ছিটিয়ে নিন্দা-ঘৃণা জানান। পরে আগুন দিয়ে কুশপুত্তলিকা পোড়ান তারা।

উল্লেখ্য, ১৯৯৭সালের ২রা ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সঙ্গে ঐতিহাসিক পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বিরাজমান রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটাতে সক্ষম হয়।
সরকারের পক্ষে জাতীয় সংসদের তৎকালীন চীফ হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ ও পাহাড়িদের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় ওরফে সন্তু লারমা এ চুক্তিতে সই করেন।

এরপর কেটে গেছে ২৭টি বছর। কিন্তু এখনো এই চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন নিয়ে বিতকের শেষ হয়নি। এখনো মাঝে মধ্যে অশান্ত হয়ে পড়ে পার্বত্য অঞ্চল। প্রায়ই ঘটছে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত, সহিংসতা ও গুম, অপহরণ ও চাঁদাবাজি। চুক্তি সইয়ের ২৭বছর পেরিয়ে গেলেও পাহাড়িদের মধ্যে চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে রয়েছে নানান অভিযোগ।

তাদের অভিযোগ, চুক্তির মূল ধারাগুলো আজও বাস্তবায়ন হয়নি। ভূমি সমস্যার ও মিশ্র পুলিশ প্রশাসন ক্ষমতা দেওয়ার সমাধানও হয়নি। পাহাড়ে বসবাসরত সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। রয়েছে নানা হতাশা ও বঞ্চনা। পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৭তম বর্ষপূর্তিতে পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তৎকালীন শান্তি বাহিনীর আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) পক্ষে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে পৃথক পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।