চট্টগ্রামের মহামায়া লেকের জলপ্রপাতের কলকল শব্দে লুকিয়ে থাকে প্রকৃতির গানের সুর

স্বচ্ছ পানির জলাধারের চারপাশ সবুজ চাদরে মোড়া। দেখে মনে হবে কোনো সুনিপুণ শিল্পীর সুনিপণ কারুকাজ। এমনই এক দর্শনীয় স্থান চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মহামায়া লেক। লেকটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভ্রমনপিপাসুরা প্রতিদিন এখানে ভিড় জমান। কাপ্তাই লেকের পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ মহামায়া লেক।

১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনবিশিষ্ট লেকটি চট্টগ্রাম শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার উত্তরে মিরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদিঘি বাজার থেকে দেড় থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বে পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৭-২০০৮ সালে প্রকল্পটির কাজ শুরু করা হয় এবং ২০০৯ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এই হ্রদটি তৈরি করতে ৩৩৬০ হেক্টর জমি ব্যবহার করা হয় এবং এর পেছনে প্রায় ২৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। ২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বর লেকটি উদ্বোধন করা হয়।

সরেজমিনে মহামায়া লেক ঘুরে দেখা গেছে, পাহাড়ের পাদদেশের কোলঘেঁষে আঁকাবাঁকা লেকটি যেন সৃষ্টিকর্তার অপার সৃষ্টি। ছোট-বড় কয়েকটি পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত এ মহামায়া লেকের অন্যতম আকর্ষণ পাহাড়ি ঝরনা। এর পাশাপাশি লেকের ভিতরে রয়েছে পানির পরিমাপ মাপার জন্য একটি রেগুলেট বা ব্রিজ যে খানে দাঁড়িয়ে পর্যটকরা লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে। নীলাভ জলরাশিতে ডিঙি নৌকা কিংবা ইঞ্জিনচালিত বোট নিয়ে হারিয়ে যেতে পারেন অপরূপ সৌন্দর্যের মাঝে। এসব নৌকার প্রতিটির ভাড়া ওঠানামা করে ৬০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে।

বন্ধুবান্ধব ও পরিবার-পরিজন নিয়ে পানির কলকল ধ্বনিতে মুখর লেকে নৌভ্রমণ ভীষণ আনন্দদায়ক। লেকের চারপাশে পাহাড়ের বুক চিরে ছুটে চলা যে কোনো পর্যটককে এটি মুগ্ধ করবেই। গোধূলীলগ্নে সূর্য্য যখন অন্তিম নীলিমায় ডুবে যায়, তখন লেকের পরিবেশ মোহনীয় হয়ে ওঠে। পিকনিকের জন্য মহামায়া লেক দারুণ একটা জায়গা এখানে রয়েছে পিকনিকের সেট। এখানে এসে আপনি রান্না করেও খেতে পারেন। অনেকে লেকের কোলে অবস্থিত বিস্তীর্ণ ভ‚মিতে ফুটবল কিংবা ক্রিকেট খেলায় মেতে ওঠে। শিশুদের জন্য রয়েছে পর্যপ্ত খেলার জায়গা।

মহামায়া লেকে প্রায় সারা বছরই পযটকদরে পদচারণায় মূখর থাকে। বিভিন্ন স্কুরে শিক্ষা সফর পুর্নমিলনী ঈদ ট্যুর সারা বছর চলে এখানে। এর ফলে সব বয়সী মানুষের বিচরণ দেখা যায় এ স্পটে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বেরত মো. হানিফ বলেন, প্রতিদিন দূর দুরান্ত থেকে মহামায়া লেকে প্রচুর পর্যটক ঘুরতে আসেন। তাদের কথা চিন্তা করে মহামায়াকে ঢেলে সাজানো হয়েছে নিরাপত্তার চাদরে। সুবিশাল লেকে রয়েছে পর্যটকদের জন্য ইঞ্জিন চালিত বড় বোট, ছোট বোট, কায়াকিং বোট, প্যাডেল বোট। এ বোট দিয়ে যাওয়া যাবে লেকের গহীনে প্রকৃতিক ঝরনায়। লেকের পাশে আছে পিকনিক স্পট সেখানে প্রতিদিন কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পিকনিকের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা আনন্দে মেতে উঠেন।

এখন শীতের মৌসুম প্রায় আমাদরে এ খানে পিকনিক দৈনিক ২-৪ টি পিকনিক হয়। পরিবার পরিজন নিয়ে মহামায় এলে খাবারের জন্য ভালো মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে সে খানে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হয়। পারিশেষে বলা যায় মহামায়া লেক ভ্রমনের জন্য অন্যতম দর্শনীয় স্থান। এ শীতে মহামায়া লেকে ঘুরেব আসতে পারেন পরিবার পরিজন নিয়ে।

কি ভাবে যাবেন মহামায়া:
দেশের যে কোনো স্থান থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঠাকুরদীঘি এলাকায় নামতে হবে। নেমেই দেখবেন স্পটের নাম লেখা সাইনবোর্ড। তো সিএনজি নিয়ে স্পটের একদম গেট পর্যন্ত চলে যেতে পারেন অথবা আপনি যদি হাঁটতে পছন্দ করেন তাহলে ১০ মিনিট হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন স্পটের গেটে। তার পর টিকেট কেটে ভিতরে ঢুকতে হবে। প্রতি টিকেটের মূল্য জন প্রতি ১০ থেকে ৩০ টাকা মধ্যে।