পূর্ণাঙ্গ সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয় : ইসিকে জামায়াত

এক যুগ পর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে ‘জরুরি সংস্কার’ সেরে তারপর ভোট, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালু এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের দাবি তুলে ধরেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) নির্বাচন ভবনে গিয়ে কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে বেরিয়ে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ার সাংবাদিকদের বলেন, নো ইলেকশন উইদাউট রিফর্মস।

তবে এক্ষেত্রে সব সংস্কার সুপারিশ নয়, নির্বাচন সংক্রান্ত যেসব সুপারিশ ‘অতি জরুরি’ সেগুলো আগে সারতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, অন্তত নির্বাচন প্রক্রিয়ার সাথে যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান ও অর্গানগুলো জড়িত, সেগুলোর সংস্কার করে নির্বাচন দিতে হবে।

নির্বাচনকে ‘নিরপেক্ষ’ করতে যে সময়টুকু প্রয়োজন, সেটা নিয়ে নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান রেখে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জনগণ চায় স্থানীয় সরকার সচল হোক, আমরাও চাই জাতীয় নির্বাচনের আগে হোক স্থানীয় নির্বাচন।

এমনকি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের বর্তমান আইনও বাতিলের দাবি জানিয়েছে আদালতে রায়ে ১২ বছর আগে নিবন্ধন হারানো দলটি।

মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে জামায়াতের প্রতিনিধি দলে ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদসহ মোট ছয়জন।

অন্যদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন, চার নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবদুর রহমানেল মাসুদ, তাহমিদা আহমদ ও আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এবং ইসি সচিব আখতার আহমেদ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

২০১৩ সালে নিবন্ধন বাতিলের পর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে জামায়াতের প্রথম কোনো বৈঠক হল। এর আগে দলটির নিবন্ধন থাকা অবস্থায় বার্ষিক অডিট রিপোর্ট দিতে ইসি সচিবালয়ে গিয়েছিলেন জামায়াত প্রতিনিধিরা।

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি জানতে গত রোববার বিএনপির তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ইসির সঙ্গে বৈঠক করে। তার চার দিনের মাথায় নিজেদের অবস্থান জানাল তাদের এক সময়ের জোটসঙ্গী জামায়াত; নির্বাচনের অনেক বিষয় নিয়েই এখন তাদের ভাবনা ভিন্ন।

বিএনপি যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন চায়। জাতীয় নির্বাচনের আগে আর কোনো নির্বাচন তারা মানতে রাজি নয়। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও তাদের ঘোর আপত্তি। মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ৩০০ আসনে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে তাদের দল। ইতোমধ্যে প্রাথমিকভাবে প্রার্থীও চূড়ান্ত করা হয়েছে।

নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক করার বিষয়ে মতবিনিময় হয়েছে। সক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ২৩ দফা দাবি আমরা জানিয়েছি।

তিনি বলেন, সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন নয়। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন করলে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। সেই সময় দিতে জামায়াত প্রস্তুত।

আমরা সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের পক্ষে বলেছি। বাংলাদেশের জন্য এটি প্রয়োজন, সংসদ কার্যকরের জন্য প্রয়োজন। প্রবাসী ভোটারদেরও ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে।

সংসদের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে বিএনপির যে আপত্তি, সে বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জনগণের আকাঙ্ক্ষা স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হোক।

শর্ত পূরণ না হওয়ার যুক্তি দিয়ে এক রিট মামলার রায়ে ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে হাই কোর্ট। তাদের জন্য বরাদ্দ মার্কা দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের তালিকা থেকে বাদ দেয় নির্বাচন কমিশন।

জামায়াত আপিল বিভাগে গেলেও ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে দলটির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেই আপিল পুনরুজ্জীবনের আবেদন করা হয় জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে। গত ২০ অক্টোবর তা পুনরুজ্জীবিত করার আদেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত। ফলে দলটির নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার আশা তৈরি হয়।

সেই প্রসঙ্গ ধরে এক প্রশ্নে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, নিবন্ধনের বিষয়ে তারা আদালতে ‘ন্যয়বিচার’ পাবেন বলে আশা করছেন।

রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন বিধি কঠোর, তা বাতিল করা উচিত। সবার রাজনীতি করার অধিকার আছে।