খাগড়াছড়িতে আদিবাসী খেয়াং নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষনের পর নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাতে বান্দরবান জেলা থানচি উপজেলা ২নং তিন্দু ইউনিংনে মংখয় পাড়া(খেয়াং পাড়া) এক আদিবাসী খেয়াং নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষন ও ধর্ষনের পর নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে এবং ধর্ষনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সাধারন শিক্ষার্থী ব্যনারে মংগলবার (৬ মে) সকাল সাড়ে ১১টায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা শাপলা চত্বরে সমবেত হন।
এর আগে শিক্ষার্থীরা খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাংগন থেকে র‌্যালি বের হয়ে শহরে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিন করে শাপলা চত্বর মুক্ত মঞ্চে এসে প্রতিবাদ সমাবেশ করে।

প্রতিবাদ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা পাহাড়ে নারীরা অনিশ্চয়তায় ভুগছেন বলে দাবি করেন। কিছুদিন আগে রাঙ্গামাটির কাউখালীতে একজন পাহাড়ে তরুণীকে ধর্ষনের ঘটনা ঘটে ফের গত ৫ই মে বান্দরবান জেলার থানছি উপজেলায় আবার বাঙালি কয়েকজন ছেলে দ্বারা একজন পাহাড়ি নারীকে সংঘবদ্ধ ভাবে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

ধর্ষণের মতো এরূপ জঘন্য কাজকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় এবং ধর্ষকারী৩জন শ্রমিকদেরকে খুজে আটক করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

এসময় প্রতিবাদ সমাবেশে সাধারন শিক্ষার্থী আকাশ ত্রিপুরা সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, সাধারন শিক্ষার্থী কবিতা চাকমা, ত্রিপিটক চাকমা, রকিন ত্রিপুরা, কৃপায়ন ত্রিপুরা, সুভাষ চাকমা, বাংলাদেশ মারমা ষ্টুডেন্ট কাউন্সিল’র জেলার সাধরন সম্পাদক উক্যনু মারমা, জবা ত্রিপুরা, খন্জন ত্রিপুরা প্রমূখসহ সাধারণ শিক্ষার্থী।

এদিকে বান্দরবানের থানচিতে এক খেয়াং নারীকে(২৯) সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে ধর্ষকদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টাস্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে ইউপিডিএফভুক্ত ৪টি সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ।

মঙ্গলবার (৬ মে) হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি কনিকা দেওয়ান, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি জিকো ত্রিপুরা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অমল ত্রিপুরা সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক যুক্ত বিবৃতিতে এই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ থানচিতে খেয়াং নারীকে ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তবরতী সরকারের সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের পরিস্থিতি যেভাবে পরিবর্তন হওয়ার কথা ছিল তার কিছুই হয়নি। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীসহ সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা আজ চরম হুমকির সম্মুখীন। বান্দরবানে জুমে ধান রোপন করতে যাওয়া খেয়াং নারীকে সংঘবন্ধ ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা তারই উদাহরণ।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবত সংঘটিত ধর্ষণ-হত্যাসহ নারীর ওপর যৌন নিপীড়নের ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা না হওয়ায় বার বার এ ধরনের ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। সরকার-প্রশাসন পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণকে জাতিগত নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার কারণে এ ধরনের ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না।

এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণের মেডিকেল রিপোটর ওপর রাষ্ট্রীয় সংস্থার গোপন নিষেধাজ্ঞা জারি থাকা এবং এর মাধ্যমে অপরাধীদের নির্দোষ প্রমাণ করে রেহাই দেওয়া। থানচির খেয়াং নারীকে হত্যার ঘটনায়ও প্রাথমিক সুরহতাল রিপোর্টে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি বলে পুলিশ ও স্বাস্থ্যকর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

যা সত্য ঘটনাকে আড়াল করে অপরাধীদের রক্ষার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে থানচিতে খেয়াং নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে গ্রেফাতরপূর্বক যথাযথ বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং পাহাড়-সমতলে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।

উল্লেখ্য, গতকাল (৫ মে) বান্দরবানের থানচি উপজেলার তিন্দু ইউনিয়নের ৮নং ওয়াডের মংখয় পাড়া এলাকায় নিজ জুমে ধান রোপন করতে গেলে তিন সন্তানের জননী ওই খেয়াং নারীকে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর ‍নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। পরে এলাকাবাসী অনেক খোঁজাখুঁজির পর তার মরদেহ উদ্ধার করে।

হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

অপরদিকে বান্দরবানের থানচি উপজেলার মংখয় পাড়ায় এক খেয়াং নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে ধর্ষণকারীদের গ্রেফতারপূর্বক যথাযথ শাস্তির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ খেয়াং স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (বিকেএসইউ)।

গত সোমবার(৫ই মে ২০২৫) বিকেএসইউ’র কেন্দ্রীয় তথ্য প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক স্বাধীন খেয়াং স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সোমবার(৫ই মে ২০২৫ খ্রি:) বান্দরবানের থানচি উপজেলার ২নং তিন্দু ইউনিয়নের ৮নং ওয়াডের মংখয় পাড়ায়(খিয়াং পাড়া) তিন সন্তানের জননী চিংমা খিয়াং (বয়স: ২৯বছর) নামের একজন জুম্ম নারীকে তিনজন বাঙালি শ্রমিক কর্তৃক জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে।

এ ঘটনায় বাংলাদেশ খেয়াং স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (বিকেএসইউ) তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে ধর্ষণকারীদের গ্রেফতার পূর্বক যথাযথ শাস্তির দাবি জানিয়েছে।”

স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “চিংমা খেয়াং প্রতিদিনের মতো আনুমানিক সকাল ৭ঘটিকায় নিজেদের জুমে একা কাজ করতে যান। দুপুরে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় হলে তিনি না ফিরলে পরিবারের লোকজন ও গ্রামবাসী খোঁজাখুজি শুরু করেন। এসময় তারা জুমে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাওয়ার চিহ্ন দেখতে পান।

তা অনুসরণ করে খুঁজতে খুঁজতে আনুমানিক বিকাল ৩ঘটিকার সময় চিংমা খিয়াং এর লাশ পাওয়া যায়। চিমাং খিয়াং গত ৪ঠা মে ২০২৫ তারিখে জুমে যাওয়ার পথে রাস্তা নির্মাণে কাজে নিয়োজিত তিনজন বাঙালি শ্রমিককে দেখতে পেয়ে ভয়ে বাড়িতে পালিয়ে আসেন। চিংমা খিয়াং জুমে যাওয়ার পথে ঔৎপেতে থাকা তিনজন বাঙালি শ্রমিক জোরপূর্বক তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যা করেছে।”

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, “পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি ‘আদিবাসী’ নারীর উপর নিপীড়ন, শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ, হত্যাসহ মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটেই চলেছে। প্রায়শই এসব ঘটনা সংঘটিত হওয়ায় বাংলাদেশ খেয়াং স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (বিকেএসইউ) গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে এযাবৎ সংঘটিত জুম্ম নারীর উপর নিপীড়ন, ধর্ষণ, হত্যাকান্ডের ঘটনার বিচার ও অপরাধীদের দ্রæুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে প্রশাসন ব্যর্থ হওয়ার কারণে এসব ঘটনা ক্রমশ সংঘটিত হচ্ছে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ধর্ষণকারীদের অতিদ্রæুত গ্রেফতার পূর্বক যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করণে প্রশাসনের নিকট দাবি জানানো হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকাল ৬টার সময় চিংমা খিয়াং ধানের বীজ বপনের জন্য জুমে গিয়েছিলেন। জুম থেকে দুপুরে বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও তিনি না ফিরলে পরিবারের লোকজনের মধ্যে সন্দেহ হয়। পরে গ্রামবাসীদের সাথে নিয়ে খোঁজাখুঁজির পর এক পর্যায়ে তারা জঙ্গলে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার চিহ্ন দেখতে পায় এবং তা অনুসরণ করে খুঁজতে খুঁজতে বিকেল ৩টার দিকে তার লাশ খুঁজে পায় তারা।

নির্মাণাধীন থানচি-রেমাক্রি-লেইক্রি সড়কের নালায় লাশটি বিবস্ত্র অবস্থায় পড়েছিল। মাথা থেতলানো, চোখ উপড়ে ফেলা ও রক্তাক্ত অবস্থায় লাশটি পাওয়া যায় বলে তারা জানান।

কারা এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে তার বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি। তবে স্থানীয়দের ধারণা, তিন জন সেটলার বাঙালি(শ্রমিক) তাকে জুম থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে।

উল্লেখ্য বান্দরবানের থানচি উপজেলার তিন্দু ইউনিয়নের ৮নং ওয়াডের মংখয় পাড়া(খিয়াং পাড়া) এলাকায় চিংমা খিয়াং (২৯) নামে এক নারীকে হত্যার অভিযোগ যায়। গত সোমবার(৫ই মে ২০২৫) এ ঘটনা ঘটে। হত্যার শিকার হওয়া চিংমা খিয়াং মংখয় পাড়ার সুমন খিয়াং-এর স্ত্রী। তিনি ৩ সন্তানের জননী।

আরো উল্লেখ্য, এর আগে গতকাল(৪ঠা মে) চিংমা খিয়াং তাদের জুমের দিকে রাস্তায় কাজ করা ৩জন বাঙালিকে অশোভন আচরণ করতে দেখে ভয়ে জুম থেকে বাড়িতে পালিয়ে এসেছিলেন বলে পরিবারের সূত্রে জানা গেছে।