কিশোরগঞ্জে অটোচালক মোশারফ হত্যার বিচারের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অটোচালক অধিকার রক্ষা কমিটির উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ মে) কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের অটোচালক মোশারফ হোসেন হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার ও অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নিশ্চিতের দাবি জানানো হয় এ মানববন্ধনে।

মানববন্ধনে বক্তারা মোশারফের পরিবারের পক্ষে ন্যায়বিচার চেয়ে বলেন, এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরও অভিযুক্তরা আইনের ফাঁক গলে জামিনে মুক্ত হয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা মোশারফের শোকার্ত পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে—এটি কোনোভাবেই সহ্য করা যায় না।

বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মানুষ নন্দী বলেন, মোশারফকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, অথচ আজও বিচার পায়নি তার পরিবার। এই বিচারহীনতা সমাজে আরও সহিংসতাকে উস্কে দিচ্ছে। আমরা সরকার ও প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে।

কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু আহমেদ, বলেন,
মোশারফের বাবা ন্যায়বিচার না পেয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এখন তার চাচা শুকুর মাবুদ মামলা চালাচ্ছেন, কিন্তু অর্থনৈতিক সংকটে তা কঠিন হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রকে এই পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে!”

কিশোরগঞ্জ অটোচালক অধিকার রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক আলাল মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অভিযুক্তরা মনির মিয়া, আশরাফুল, শান্ত মণ্ডল এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ কি কোনো ন্যায়বিচার? আমরা চাই, তাদের দ্রুততম সময়ে গ্রেপ্তার করে কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হোক। কিশোরগঞ্জ থেকে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, এবাদুল ইসলাম, সরাফত আলী, শাহীন মিয়া প্রমুখ।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিচার বিভাগের কাছে জরুরি হস্তক্ষেপ, চেয়ে বলেন: মোশারফ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত দ্রুততম সময়ে শেষ করতে হবে।

অভিযুক্তদের জামিন বাতিল করে অবিলম্বে কারাগারে পাঠাতে হবে। মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নিষ্পত্তি করে দোষীদের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করে মোশারফের পরিবারকে সরকারি সহায়তা ও সুরক্ষা দেওয়ার জোরালো দাবি
বক্তারা।

উল্লেখ্য, কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার দক্ষিণ গোবিন্দপুর গ্রামের সুলতান উদ্দিনের ছেলে মোশারফ। ২০২১ সালের ২ নভেম্বর রাত ৮টার দিকে চার ব্যক্তি কিশোরগঞ্জ শহরের বটতলা থেকে মোশারফের অটোরিকশা ভাড়া করে। তারা অটোরিকশা নিয়ে নান্দাইলের সুরাটি বাজারের পাশে গিয়ে মোশারফকে কুপিয়ে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় মোশারফের বাবা থানায় মামলা করেন।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি নান্দাইল থানার তদন্তের এক পর্যায়ে ময়মনসিংহের ডিবির ওপর তদন্তের দায়িত্ব পড়ে। তদন্ত করেন ডিবির এসআই পরিমল চন্দ্র সরকার। এর পর বিভিন্ন সময় নান্দাইলের রহিমপুরের সোহরাব উদ্দিনের ছেলে মনির উদ্দিন (২৬), বারঘড়িয়া গ্রামের উজ্জ্বল মণ্ডলের ছেলে শান্ত মণ্ডল (২০), উত্তর জাহাঙ্গীরপুরের মৃত আব্দুল বারিকের ছেলে আশরাফুল ইসলাম মানিক (২৫) ও তারাপাশা গ্রামের শাহজাহান সিকদারের ছেলে শাহজালাল সিকদারকে (২৫) গ্রেপ্তার করা হয়। ছিনতাই করা অটোরিকশাটিও উদ্ধার হয়েছে। গ্রেপ্তার চারজনই হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা আরও বলেন, যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে আরও কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে। আমরা ন্যায়বিচার চাই—কোনো সমঝোতা নয়!

মোশারফ হত্যাকাণ্ড কেবল একটি হত্যাকাণ্ড নয় এটি আমাদের সমাজের আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। অটোচালক অধিকার রক্ষা কমিটি এর এই আন্দোলন শুধু একটি পরিবারের জন্য নয়, বরং নিপীড়িত মানুষের ন্যায়বিচারের লড়াই।