হ্যাটট্রিকে ইতিহাস গড়লেন শান্তি মার্ডি, আনন্দে ভাসছে জন্মভুমি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ

ভুটানের বিপক্ষে অনূর্ধ্ব ২০ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে দুর্দান্ত হ্যাটট্রিক করে বাংলাদেশকে ৪-১ গোলের জয় এনে দিয়েছেন, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পলাশবাড়ী গ্রামের শান্তি মার্ডি।
এই কৃতিত্বে শুধু জাতীয় দলের জয়ই নয়, আন্তর্জাতিক নারী ফুটবলে ইতিহাস গড়লেন শান্তি। এক ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা প্রথম আদিবাসী নারী ফুটবলার হিসেবে তার এই অর্জনে উৎসবে মেতে উঠেছে পুরো এলাকা।
সাফ নারী অনূর্ধ্ব ২০ চ্যাম্পিয়নশিপের চলতি আসরের তৃতীয় ম্যাচে মঙ্গলবার রাতে ঢাকার বসুন্ধরা কিংস এরেনায় ভুটানের বিপক্ষে মাঠে নামেন শান্তি মার্ডি। জাতীয় দলের হয়ে ২০ নম্বর জার্সিতে খেলা শান্তি তিনটি গোল করেন। দলের পক্ষে আরেকটি গোল করেন মুনকি আক্তার।
এই সাফল্যের খবরে শান্তির গ্রামের বাড়ীতে শুরু হয় আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ, ঢাকঢোল ও নাচ-গান। এলাকার মানুষদের মধ্যে দেখা যায় দারুণ উৎসাহ- উদ্দীপনা।
শান্তি মার্ডির বাবা বাবু লাল মার্ডি বলেন, আমার মেয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। ওর জন্য সবাই দোয়া করবেন, ভবিষ্যতে যেন আরও ভালো কিছু করতে পারে। তবে ঘরে টিভি না থাকায় মেয়ের খেলা সরাসরি দেখতে না পারার আক্ষেপও করেন তিনি।
বীরগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পলাশবাড়ী গ্রামের আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায় পরিবারে জন্ম শান্তির। বাবা কৃষিশ্রমিক, মা গৃহিণী। চার ভাই,বোনের মধ্যে শান্তি দ্বিতীয়। বর্তমানে সে দক্ষিণ পলাশবাড়ী উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেনির ছাত্রী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল শান্তির। ২০১৭ সালে দ্বিতীয় শ্রেনিতে পড়ার সময় আন্তঃ প্রাথমিক নারী ফুটবল টুর্নামেন্টে বীরগঞ্জ উপজেলার হয়ে চ্যাম্পিয়ন হন শান্তি। এরপর স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক মোঃ নাজিরুল ইসলাম এবং সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাজিম উদ্দীনের উৎসাহে তার ফুটবলচর্চা গতি পায়।
পরে বোদা ফুটবল একাডেমির পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন বিপুলের হাতে পড়ে মূলত জাতীয় পর্যায়ে উঠে আসার সুযোগ পান।
এখন পর্যন্ত উপজেলা, জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে অর্ধশতাধিক পুরস্কার ও ট্রফি অর্জন করেছেন শান্তি মার্ডি।
স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক নাজিরুল ইসলাম বলেন, শান্তি শুধু একজন ফুটবলার নয়, সে এখন সংগ্রাম আর স্বপ্নের নাম। সঠিক পরিচর্যা পেলে এ রকম খেলোয়াড়রা একদিন আন্তর্জাতিক ফুটবলেও দেশের নাম ছড়িয়ে দেবে।
মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমান চৌধুরী বলেন, শান্তি আমাদের গর্ব।
এই অর্জন শুধু তার একার নয়, পুরো এলাকার।এত প্রতিকূলতার মাঝেও সে যা করেছে, তা সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ী।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর আহমেদ বলেন, শান্তি মার্ডির সাফল্যে আমরা গর্বিত। একজন আদিবাসী পরিবারের সন্তান হয়েও সে দেশের পতাকা তুলে ধরেছে। তাকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের এই জয় ও শান্তির হ্যাটট্রিক কেবল একটি ম্যাচের গল্প নয়, এটি ফুটবলে প্রান্তিক নারীর উঠে আসার সাহস ও স্বপ্নেরও গল্প।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন