নওগাঁর মান্দায় বিয়ের নামে প্রতারণা, স্বামীর সিষ্কৃতি চেয়ে আদালতে স্ত্রীর মামলা

নওগাঁর মান্দায় বিয়ের নামে প্রতারণা, স্বামীর সিষ্কৃতি চেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন জান্নাতুন নেছা নামে এক ভুক্তভোগী অসহায় মহিলা। ভুক্তভোগী মহিলা জান্নাতুন নেছা উপজেলার গনেশপুর ইউনিয়নের গনেশপুর গ্রামের মোঃ সাইফুল ইসলাম এর মিয়ে ভুক্তভোগী ঐ অসহায় মহিলা জানান গত ২০২৪ সালের ১৪ আগষ্ট মোবাইলের মাধ্যমে পরিচয় হয় একই ইউনিয়নের মিরপুর গ্রামের আতাউর রহমানের ছেলে শাহীনের সঙ্গে।
মিয়েটির এর পর গড়ে উঠে প্রেমের সম্পর্ক বিয়ের প্রবোহন দিয়ে নিয়ে যায় ঢাকায়। এক পর্যায়ে ভুয়া কাবিল নামা করে বিয়েও করে মিয়েটিকে বিয়ে করে ছয় মাস থাকে ঢাকাতে। এর পর নিজ জেলা নওগাঁ নিয়ে এসে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেন তারা। কিন্তু বছরের মাথায় এসে মেয়েটিকে নিয়ে কিছুদিন সংসারও করেছেন শাহীন আলম।
মেয়েটির অভিযোগ, ছেলেটিকে আবারও বিয়ে দিতে চাইছে তার পরিবার, মিয়েটি জানায় বিয়ের জন্য ‘পাগল প্রায়’ হয়ে ওঠেন ছেলেটি। কিন্তু ছেলেটি পরিবারের ছিল ঘোরতর আপত্তি। তখন ছেলেটি মেয়েটি ফাঁকি দিয়ে চলে আসেন ছেলেটির নিজ বাড়ি মান্দা উপজেলার গনেশপুর ইউনিয়নের কাঞ্চন গ্রামে। তখন এই মিয়েটি পড়েছে এখন মহাসংকটে। ছেলেটি তখন মেয়েটিকে এই বলে বোঝান, ‘সংসার তো আমরা করব; আমরা হ্যাপি থাকলেই সব ঠিক।’
তার এমন আশ্বাসে পরিবারকে একরকম জোর করেই বিয়েতে রাজি করান মেয়েটি। এভাবে পরিচয়ের এক বছর না পেরোতেই মিয়েটিকে চিনেনা সেই ছেলেটি। ‘ডিভোর্স দিয়ে দিছি’ বলে বাসা ছেড়ে চলে যায় ছেলেটি,এখন ছেলেটির পরিবারের সদস্যরাও তাকে হত্যার হুমকি দেয়। এরই একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে বাবার বাড়ি চলে যায় মেয়েটি। এই মিয়েটি অভিযোগ, ‘স্বপ্নের সংসার’ ছেড়ে বাবার বাড়ি চলে যাওয়ার আগে নওগাঁ সদর থানায় গিয়েছিলেন তার সঙ্গে প্রতারণার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে।
কিন্তু থানা থেকে জানানো হয়, যথা যথ প্রমাণ না থাকায় ছেলেটি বিরুদ্ধে অভিযোগ নিতে পারবে না তারা। এদিকে ছেলেটিকে তার পরিবার আবারও বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। এমন পরিস্থিতিতে সংকটে মিয়েটি বাদ্য হয়ে নওগাঁ কোটে মামলা করেন মিয়েটি ঐ প্রতারক ছেলেটির উপর।
মিয়েটি কান্নাজড়িত কণ্ঠে গতকাল রবিবার এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘বিয়ের নামে প্রতারণার শিকার হয়ে এখন আমি ও আমার পরিবারের লোকজনের জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।’ তিনি বলেন, ‘‘আমি সেই দিন থেকে স্বপ্ন বোনা শুরু করি; একটা মেয়ে ঠিক যেভাবে সংসারের স্বপ্ন বোনে। আমিও নিজেকে তার মনমতো তৈরি করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি।
এর মধ্যে তার পরিবার আমাকে অনেক কটু কথা শোনায়। কিন্তু সব সময় তার সাপোর্ট ছিল। ভরসা দিত ‘সব ঠিক হয়ে যাবে’। তারা সব সময় তাকে আবার বিয়ে করানোর এবং আমাকে মেরে ফেলারও হুমকি দিতে থাকে। কিন্তু সে আমাকে শুধু ধৈর্য ধরতে বলে। আর আমি তাই করি।” শ্বশুরবাড়ির এমন আচরণের পরও ছেলেটির কথা বিশ্বাস রেখেছিলেন নুসরাত।
অপেক্ষায় ছিলেন স্বামীর ভরসার আসার। কিন্তু কোনো কিছুই আর ঠিক হয়নি জানিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নুসরাত। বলেন, ‘আমিও এই আশাতেই থাকি। তবে কয়েক মাস না যেতেই তার আচার-আচরণে পরিবর্তন দেখতে পাই। নোংরা ভাষায় কথা বলতে থাকে। আমার দিনমজুর বাবাসহ পরিবারের সবাইকে ছোট করতে থাকে। তারা আমাদের থেকে অর্থবিত্তে অনেক এগিয়ে প্রতিটা মুহূর্তে জাহির করতে শুরু করে।’
তার পরিবারের মানুষ আমাকে হুমকি দিতে থাকে এবং প্রাণনাশেরও হুমকি দেয়। এ কথা বলতে বলতে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেন নুসরাত। বেশ কিছুক্ষণ পর তার সঙ্গে আবার কথা হয় এই প্রতিবেদকের সাথে। এ সময় তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এখন আমার জীবন ঝুঁকির সম্মুখীন।
আমি মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়েছি। যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমি আমার পরিবারের অশান্তির কারণ হতে চাই না। আমার জীবনের যে ক্ষতি সে করেছে তার নোংরা স্বার্থ চরিতার্থ করতে, এর প্রতিকার কী? সত্যিই কি দেশের আইন মেয়েদের পাশে আছে? আমি সবার কাছে নিজের আমার সুন্দর একটা জীবন চাই। প্লিজ, হেল্প মি। আমি এই ভদ্র মুখোশধারী প্রতারকের চেহারা সবার কাছে সাংবাদিকদের দিয়ে উন্মোচন করে দিলাম।
আমি ওর শাস্তি চাই।’নুসরাতের কাছ থেকে এসব অভিযোগ সুনার পর (ছেলেটা) বক্তব্য জানতে তার মোবাইল নম্বরে গত রাতে থেকে এখন পর্যন্ত ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে,তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
নওগাঁ সদর থানার কোনো কর্মকর্তা কেন সাহায্য করেননি, তা জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আলম সিদ্দিক বলেন, ‘থানায় এসে এ ধরনের অভিযোগ করলে তা নেয়া হবে না- এমনটা হওয়ার কথা না। আমার আসলে জানা নেই। আমাদের যদি কোনো গ্যাপ থেকে থাকে সেটা আমি দেখছি। ভুক্তভোগীকে থানায় পাঠিয়ে দেন, তার কথা সুনে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন