১০ বছরের জন্য খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ

নানান সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় ও আর্থিক ব্যবস্থা পুনর্গঠনের লক্ষ্যে নীতিসহায়তা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এ বিষয়ে সব ব্যাংককে নির্দেশনা পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নতুন নীতিমালায় মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টের বিপরীতে সর্বোচ্চ ১০ বছরের জন্য খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দেয়া যাবে। এক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতারা দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ড পাবেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট খাতের সর্বনিম্ন সুদহারের চেয়েও ১ শতাংশ কম সুদে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠন করা যাবে। সব ব্যাংকই ঋণগ্রহীতাদের এ সুবিধা দিতে পারবে। তবে ৩০০ কোটি টাকা বা তার বেশি ঋণের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাছাই কমিটির নীতিসহায়তা চাইতে পারবে ব্যাংকগুলো।

জাল-জালিয়াতি বা অন্য কোনো প্রতারণার মাধ্যমে নেয়া ঋণের ক্ষেত্রে অবশ্য এ সুবিধা দেয়া যাবে না। এমনকি ব্যাংক থেকে চূড়ান্তভাবে ঘোষিত ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা এ সার্কুলারে বর্ণিত সুবিধা পাবে না। কেবল প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতার ক্ষতির পরিমাণ এবং প্রতিষ্ঠানের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাকে যথাযথভাবে বিবেচনায় নিয়ে পুনঃতফসিল, পুনর্গঠন বা এক্সিটের মেয়াদকাল নির্ধারণ করতে হবে।

এরই মধ্যে খেলাপি ঋণ দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এ অবস্থায় গত জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি কমিটি গঠন করে বিশেষ বিবেচনায় খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দিয়ে আসছিল। এখন তা ব্যাংকগুলোর হাতে ছেড়ে দেয়া হলো।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ৩০ জুন বিরূপ মানে শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ বিবেচনায় ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে পুনঃতফসিল করা যাবে। এজন্য আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে আবেদন করতে হবে। ব্যাংক থেকে তা নিষ্পত্তি করতে হবে আবেদনের ছয় মাসের মধ্যে। নীতিসহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় ডাউন পেমেন্ট চেক বা অন্য কোনো ইনস্ট্রুমেন্টের মাধ্যমে দিলে তা নগদায়নের পর থেকে ছয় মাস গণনা করতে হবে। ডাউন পেমেন্টের অর্থ ব্যাংকের অনুকূলে নগদায়নের আগে নীতিসহায়তার আবেদন কার্যকর করা যাবে না। এর আগে তিন বা তার বেশি পুনঃতফসিল করা ঋণে অতিরিক্ত ১ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট আদায় করতে হবে।

নীতিসহায়তা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি নিতে হবে না জানিয়ে নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, এ বিষয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিতে হবে। একাধিক ব্যাংক থেকে ঋণের বিপরীতে নীতিসহায়তার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক বা সবার সম্মতিতে নীতিসহায়তার উদ্যোগ ও সভা আয়োজন করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, প্রকৃত আদায় ছাড়া ব্যাংকের আয় খাতে স্থানান্তর করা যাবে না। তবে সাধারণ প্রভিশন সংরক্ষণের জন্য স্থানান্তর করা যাবে। এ ধরনের সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণে নতুন সুবিধা দেয়া যাবে। এক্ষেত্রে অতীত লেনদেনসহ সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করতে হবে। আর ২০২২ সালে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল আমদানির জন্য বাকিতে খোলা এলসির ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার অপ্রত্যাশিত বিনিময় হারজনিত ক্ষতির মোট পরিমাণ হিসাবায়ন করতে হবে গত বছর জারি করা সার্কুলারের নির্দেশনা অনুযায়ী। কোনো গ্রাহক চাইলে পুনর্গঠন বা এককালীন এক্সিট সুবিধা নিতে পারবে।

মেয়াদকাল নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় উপস্থাপিত স্মারকে এবং সভার কার্যবিবরণীতে সুস্পষ্ট কারণ সুনির্দিষ্টভাবে লিখতে হবে। সুবিধা দেয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ব্যাংক ও গ্রাহক সোলেনামার মাধ্যমে চলমান মামলার স্থগিতের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পরবর্তী সময়ে কোনো গ্রাহকের দেয়া সুবিধার কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে তার অনুকূলে প্রদত্ত সব সুবিধা বাতিল হবে এবং ব্যাংক ঋণ আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে।