নরসিংদীর রায়পুরা নির্বাচন অফিসে জাবেদ এর হাত দিয়ে ১২ লক্ষ টাকার ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা নির্বাচন অফিসের কম্পিউটার অপারেট জাবেদ। ঘুষ ছাড়া কোনো কাজই করেন না তিনি। নতুন ভোটাররা ভোটার হতে গেলে তার কাছে সর্বপ্রথম যেতে হয়। তাঁর কাছে ভোটার হতে হলে প্রত্যেক নতুন ভোটারকে গুনতে হবে ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা।

যারা টাকা দিতে পারেন না, মাসের পর মাস ঘুরেও ভোটার তালিকায় তাদের নাম ওঠে না। ফলে ভোটার হওয়া থেকে অনেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।

জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল সংশোধন ও ভোটার স্থানান্তসহ সব কাজই তিনি টাকার বিনিময়ে করেন। শুধু তাই নয়, নারী সেবাপ্রত্যাশীদের পেলে অসদাচরণ ও হেনস্থা করার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

এর আগে এই রায়পুরা নির্বাচন অফিসে সংবাদ কর্মী রুদ্র এসব ঘুষ বাণিজ্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত করলে দুদক তদন্ত করে অভিযান চালিয়ে একজনকে আটক করে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগে জানা যায়, কম্পিউটার অপারেট জাবেদ যোগদানের পর থেকে নির্বাচন অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেন। ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সেবাপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে নানা কৌশলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি নির্বাচন অফিসে ভোটার হতে এসে হেনস্তার শিকার হন রায়পুরা চরঅঞ্চলের বাসিন্দা শাহিনুর আক্তার। তিনি সংবাদ কর্মী রুদ্রকে জানান, গত তিন মাস আগে ফিঙ্গার দিয়ে গেছে আমি কিন্তু টাকা না দেওয়ার কারণে জাবেদ আমার এটি আপলোড দেয়নি, বিভিন্ন অজুহাতে আমাকে শুধু ঘুরাতে থাকে।

তিনি আরো বলেন, আমি বিষয়টি নির্বাচন অফিসারকে জানাতে গেলে তিনি প্রথমে আমাকে বলেন, বোরকা খুলে মুখ বের করেন। মুখ খোলার পর তিনি আমার চেহারার দিকে শুধু তাকিয়ে থাকেন। বলেন, মেয়েরা অনেক চালাক। আপনার কাগজপত্রে ঝামেলা আছে। কালকে আসেন।

কালকে গেলে বলে পরদিন আসেন। আর আমি অফিসে গেলেই আজে-বাজে কথা বলতে থাকেন। একপর্যায়ে আমার কাছে ৮ হাজার টাকা দাবি করেন। ওই টাকা আমি দিতে রাজি না হওয়ায়- আমাকে ভোটার বানাবেনা বলে জানিয়ে দেন কম্পিউটার অফিসার জাবেদ। ওনার আচরণে মনে হয়েছে, মেয়েদের পেলেই তিনি এমন আচরণ করেন।

একাধিক সেবাপ্রত্যাশী জানান, ভোটার হওয়ার জন্য ভোটারপ্রতি আমরা ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়েছি। কিন্তু আমাদের এনআইডি কার্ড এখনো বের হয়নি। কেউ কেউ টাকার বিনিময় জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল সংশোধনের জন্য আবেদন করেছেন। আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। তাই নাম প্রকাশ করলে নির্বাচন অফিস থেকে কম্পিউটার অপারেটর জাবেদ ঝামেলা বাধাবে।

এ বিষয়ে আজ রায়পুরা উপজেলা নির্বাচন অফিসে সংবাদ কর্মী রুদ্র গেলে পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রতি ফিঙ্গারে নির্বাচন অফিসারকে দিতে হয় ১৫০০ টাকা, প্রতি সপ্তাহে দুই দিনে আনুমানিক ২০০ থেকে ২৫০ টি ফিঙ্গার নেওয়া হয়। এই প্রতিটি ফিঙ্গারের কাছ থেকে জাবেদ ২৫০০ টাকা করে নিচ্ছে। সে নিজে রাখে ১০০০ টাকা এবং ১৫০০ টাকা দিচ্ছে তার অফিসারকে।

এবিষয়ে সংবাদ কর্মীরা তথ্য নিয়ে জিজ্ঞাস করিলে তিনি অফিস থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান। এবিষয়ে রায়পুরা উপজেলার নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ আতাউল হক এর কাছে জানতে চাইলে তিনি এবিষয়ে সদ উত্তর দেন নাই। উল্টো তিনি অফিসে সকাল ৯ টায় থাকার নিয়ম থাকলেও তিনি আসেন দুপুর ১ টায়। এই ধেরি করে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি সংবাদ কর্মীদেরকে ম্যানেজ করার চেষ্টা চালায়।

রায়পুরা উপজেলা নির্বাচন অফিসের অনিয়ম, ঘুষ বানিজ্য সহ সকল তথ্য তুলে ধরা হবে আগামী সাত পর্বে।