বিশেষ সম্পাদকীয়…
পরাধীনতার শৃংখল ভেঙ্গে নতুন সূর্যের প্রত্যাশায় ‘নুতন বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক পরিক্রমা শুরু হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২৬মার্চ। পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশকে জায়গা করে দিতে যে মহান ব্যক্তিরা নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছিলেন তাদের প্রতি রইলো আমার বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।
দেশের প্রতি সেই শ্রদ্ধা থেকেই ২০১৪ সালের এ’দিনেই পথচলা শুরু করেছিল অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘ournewsbd’। দেশ-বিদেশে বাংলা ভাষীদের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির কথা বিবেচনা করে গুটি গুটি পায়ে ‘আওয়ার নিউজ বিডি’ আজ ২য় বছরে পদার্পণ করলো। আর এরই মাঝে অতি স্বল্প সময়ের মধ্যেই ‘OurNewsBd’র ফেসবুক পেজে লক্ষাধিক পাঠক লাইক ও শেয়ার করে জানান দিয়েছেন তাদের ভালোবাসা ও পাঠকপ্রিয়তাকে। যা সত্যিই অনেকটা বিরল। সেই অপ্রত্যাশিত সহযোগিতায় আমরা অনুপ্রানিত হয়ে পাঠকের চাহিদার প্রত্যাশাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়ার চেষ্টা করেছি। আমাদের এ পথচলায় অনিচ্ছাকৃত যত ভুল কিংবা ত্রুটি তার দায়ভার সবটুকু আমার। আর যত সাফল্য তার সবটুকু পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের। ‘আওয়ার নিউজ বিডি ডটকম’ এর ১ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর এদিনে সকল পাঠক, সাংবাদিক, বিজ্ঞাপনদাতা, শুভানুধ্যায়ী, আমার সহকর্মী ও এই লেখা যারা পড়ছেন তাদের জানাচ্ছি আমার শুভেচ্ছা ও প্রাণঢালা অভিনন্দন।
ভোরের সূর্যের আলোয় মেশানো হিমেল বাতাসের মতো ‘আওয়ার নিউজ বিডি’কে আকড়ে ধরে আজো যারা আপ্রাণ কর্মপ্রচেষ্টা চালাচ্ছেন এটিকে প্রতিষ্ঠিত করতে তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।
স্বদিচ্ছা, আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টা যে কাউকেই সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে পারে। ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে স্বপ্নের বাস্তবায়ন মানুষকে সফলতা দান করে। সংবাদ মাধ্যমকে ভালবেসেই শখের সংবাদকর্মী হিসেবে এ জগতে আমার প্রবেশ। বিভিন্ন আঞ্চলিক ও জাতীয় দৈনিকে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ সরবরাহ করে অল্প দিনেই আমার শখের পেশাকে নেশায় পরিণত করে ফেলি। সময়ের পরিক্রমায় নতুন নতুন অনেক স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম। স্বপ্ন দেখলাম, প্রত্যাশা করলাম- আধুনিক বিশ্বায়নের যুগে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল চালু করার। সেই স্বপ্নের সঙ্গী হয়ে যিনি আমাকে অনুপ্রেরণা দিলেন, তিনি আমার একান্ত বন্ধু ও বড়ভাই সমতুল্য- ‘আওয়ার নিউজ বিডি’র সম্পাদকমন্ডলির সভাপতি মহোদয়। শুরু করলাম আমাদের মিশন। অবশেষে উল্লিখিত বন্ধু কাম বড়ভাই’র প্রচেষ্টায় ২০১৪ সালের প্রথম দিকে ‘আওয়ার নিউজ বিডি’র প্রধান পৃষ্ঠপোষক, প্রকাশক ও আমরা দু’জন মিলে আলোচনায় বসলাম। প্রধান পৃষ্ঠপোষকের নির্দেশনায় আমরা কয়েকজন কাজ করতে শুরু করলাম। প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও প্রকাশকের আন্তরিকতা আমাকে মুগ্ধ করলো। কোন পদে আসীন হবেন না- শর্তে তাঁরা আমার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তাদের সাধ্যমত সবটাই করলেন। অবশেষে অনেক অনুরোধের পর শর্ত ভাঙ্গিয়ে তাদেরকে একসাথে পথ চলতে এক প্রকার বাধ্যই করলাম। ধিরে ধিরে সকলের প্রচেষ্টা, বিশেষ করে প্রধান পৃষ্ঠপোষক মহোদয় যিনি একজন বিশ্বমানের ব্যক্তিত্ব হয়েও তাঁর ওয়ার্ডপ্রেস থিম ডেভেলপার কোম্পানীর (ওয়ার্ল্ড র্যা কিং-এ টপ ফাইভের মধ্যে থাকা) ‘D5 Creation’ এর মূল্যবান কাজের মধ্যেও আমাদের ক্ষুদ্র প্রয়াসকে বাস্তবায়িত করতে নিজের মেধা, পরিশ্রম ও অর্থনৈতিক ভাবে যে অবদান রেখেছেন তা ব্যাখ্যা করে শেষ করা যাবে না। ‘আওয়ার নিউজ বিডি’র সফলতার ১ম বছরে তাঁকে ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা।
আকর্ষণ, নতুনত্ব ও সর্বোপরি সব সংবাদ সকলের হাতের মুঠোয় পৌছে দেয়ার প্রয়াসে পথচলেও হয়তো পাঠক ও সহকর্মীদের সাথে সময়ের প্রেক্ষাপটে অবস্থানগত ভাবে ভিন্নতা থাকলেও অভিন্ন আমরা সংবাদের ক্ষেত্রে। কেননা সংবাদকর্মী ও সংবাদের মূল বিচারক পাঠক-ই। আমরা সকলেই ‘আওয়ার নিউজ বিডি’র সংবাদকর্মী। সততা, নিষ্ঠা, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রেরণ, অবস্থার প্রেক্ষিতে অসম সাহসী ভূমিকা, অপশক্তিকে উপেক্ষা করা- সবকিছুই একজন সংবাদকর্মীকে সফলতার কাঙ্গিত লক্ষ্যে পৌছে দিতে পারে বলে আমার বিশ্বাস। পাশাপাশি একজন পরিপূর্ণ ও একনিষ্ঠ সংবাদকর্মী অবশ্যই অনৈতিক অর্থ লিপ্সা থেকে দূরে থাকে। একজন নীতিবান সংবাদকর্মী সাধারণ সকল শ্রেনি পেশার মানুষের কাছে যেমন আস্থাভাজন তেমনি অশুভ শক্তির কাছে ভীতিকর বলেই সংবাদ মাধ্যম জাতির বিবেক বলে বিবেচিত। কলম সৈনিকের কাছে যেকোন শক্তিই মাথানত করতে বাধ্য। সংবাদকর্মীর কলমই বদলে দিতে পারে যেকোন সমাজ ব্যবস্থাকে। চাহিদার ক্ষেত্রে আমরা সবসময় চেয়েছি সকলের সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় করতে। সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে আমরা রয়েছি সর্বোচ্চ নিরপেক্ষ। খবরের শিখর থেকে শেকড়ে পৌছাতে এতটুকু পিছু পা হইনি। সব শ্রেনি-পেশার ও সাধারণ মানুষের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি সকল পর্যায়ের পাঠকের সামনে। মুহুর্তের খবর মুহুর্তে-ই পৌছে দিতে আমরা সদাপ্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত রাখবো। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সময়োপযোগি যেকোন আধুনিক প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে আগামিতেও পাঠকদের খবরজ্ঞানী করে রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করছি। মুখে নয় বরং কার্যত ‘সত্য সংবাদ সবার আগে’ পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা সাদা-কালোর কাছে আপোষ করিনি কখনো। ন্যায় ও ঔচিত্যের নীতিকে আলিঙ্গন করে অসত্য, ভ্রান্ত ও হিংসাকে বিসর্যন দিয়েছি সবসময়। অনেক চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে আজকের এ অবস্থান সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। যার সবকিছুর ভাগিদার আপনারাও। প্রযুক্তি ও তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম হিসেবে ‘আওয়ার নিউজ বিডি ডটকম’ বাংলা ভাষায় প্রচারিত সর্বপ্রথম আধুনিক রেসপনসিভ ডিজাইনের সংবাদ মাধ্যম। আমাদের পথচলার সবসময়-ই আমরা ইতিবাচক পরিবর্তন চেয়েছি সবক্ষেত্রে-ই। আমাদের সংবাদ পরিবেশনাতেও আমরা সেই ধারা বজায় রেখেছি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে। প্রযুক্তি ও তারুণ্যের পাশাপাশি সব পাঠকের আশা, আকাঙ্খা আর চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা সব বয়সের সকল মানুষের সংবাদ প্রাপ্তি নিশ্চিত করেছি। আওয়ার নিউজ সবসময় নির্ভীক চিত্তে সত্য প্রকাশের ক্ষেত্রে ভয়-ভীতি-করুণাকে উপেক্ষা করে কোন কিছুর কাছে মাথা নত করেনি। আমাদের হাত-পা বাধা নয়, মুখ খোলা- বিবেক খোলা।
আওয়ার নিউজ বিশ্ব মানবতার কথা বলে, দেশের কথা বলে। আমরা দেশপ্রেমের কথা বলি, মুক্তিযুদ্ধের কথা বলি, আমরা বলি বাংলা ভাষায়, আমরা সবার কথা বলি। যা কিছু ভালো আমরা তার সঙ্গেই থাকতে চাই, সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।
বাহ্যিক নয়, চেয়েছি ভিতর থেকে জেগে ওঠার। আজকের সর্বাপেক্ষা আধুনিক বিশ্বায়নের যুগে পৃথিবী সবার হাতের মুঠোয়। বর্তমানে দেশের সিংহভাগ জনগোষ্ঠি সেলফোন ব্যবহার করেন, পানীয় জল (খাবার পানি) কিনে পান করেন- যেটা কয়েক বছর আগেও সাধারণ মানুষ হয়তো কল্পনাতেও আনেনি। কিন্তু সেটাই আজ সত্যি। হয়তো আগামি কয়েক বছরের মধ্যে ইন্টারনেট ভিত্তিক ‘নিউজ পোর্টাল’ গুলো কার্যত ‘নিউজ পেপারে’ রূপান্তরিত হবে। তার কিছুটা নমুনা ইতোমধ্যে লক্ষ্যনীয়। দেশ-বিদেশের বহু প্রিন্ট মিডিয়া বা সংবাদ মাধ্যম গুলো আজ ইন্টারনেট সংষ্করণে যোগ দিয়েছে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই মুহুর্তের খবরে পরিপূর্ণ হয়ে পাঠক আজ হয়ে উঠেছে সচেতন। সেই সচেতনতাকে জাগিয়ে তুলতে আমরা এগিয়ে চলেছি পাঠকের মনের দরবারে।
অতি-চালাক হয়ে ওঠা নয় বরং বুদ্ধিমত্তা দিয়ে জেগে উঠে আমাদের সকলের সামনের দিনগুলো এগিয়ে যাক- প্রত্যাশা সেটুকুই। সমাজের সবক্ষেত্রে ইতিবাচক মানসিকতা ও জাগ্রত বিবেক প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ে ‘ournewsbd’ এগিয়ে চলবে। আমাদের পথ চলায় আপনি ও পাঠক সমাজ আমাদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। সুখে-দূ:খে সবসময়-ই আমাদের সাথে-ই থাকুন।
ধন্যবাদসহ
আরিফ মাহমুদ, বিএ (অনার্স), এমএ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
সম্পাদক,
আওয়ার নিউজ বিডি ডটকম
ঢাকা।
“এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলো যারা আমরা তোমাদের ভুলব না….” গানের এই একটি লাইনই বলে দেয় মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালীর গৌরবোজ্জ্বল আত্মত্যাগের কথা। মুক্তিকামী মানুষের জন্য যারা জীবনকে উৎস্বর্গ করেছে সেই সব বীর শহীদদের প্রতি জানাই আমার বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।
বাংলা ভাষায় প্রচারিত সর্বপ্রথম আধুনিক রেসপনসিভ ডিজাইনের সংবাদ মাধ্যম আওয়ার নিউজ বিডি ডটকম (www.ournewsbd.com) আজ ২য় বর্ষে পদার্পন করলো।
“প্রযুক্তি ও তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে গত বছর ঠিক এই দিনেই জন্ম নেয় ছোট্ট একটি নিউজ পোর্টাল।
হাটিহাটি পা পা করে সেই ছোট্ট নিউজ পোর্টালটি ১ বছর না পেরুতেই লাখো পাঠকের হৃদয়ের স্পন্দন হয়ে উঠেছে।
অবশ্য এই কৃতত্বের বড় একটি দাবীদার পাঠকমহল। আমরা সব সময় চেষ্টা করেছি পাঠক হৃদয়ের চাহিদা পূরণের।
৯মাস যুদ্ধ করে লাল তাজা রক্তের বিনিময়ে বাঙালী অর্জন করেছে গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা। আমরা পেয়েছি স্বাধীন মাতৃভূমি। ২৬ মার্চ বাঙালীর গৌরবোজ্জ্বলের সেই দিন। গৌরবমাখা এই দিনের নতুন এক প্রতিধ্বনি আওয়ার নিউজ বিডি ডটকম।
নতুন দিনের প্রত্যয়ে আমরা :
আমরা আসলে আওয়ার নিউজ বিডি’র সকল বিভাগ গুলো আলোয় আলোয় সাজাতে চাই। কাজটা সহজ নয়, কঠিন। উড়োজাহাজ যখন ঠিকভাবে অবতরণ করে, সেটা খবর নয়, ভেঙে পড়লেই খবর। তবু দুঃসংবাদে আকীর্ণ পৃথিবীতে ও স্বদেশে পাঠকেরা সুখবরই পড়তে চান। বিশেষ করে বাংলাদেশের পাঠকেরা। মুক্তিযুদ্ধে জয়ী এ জাতি জীবনের নানা ক্ষেত্রে বিজয়ের জন্য আকুল হয়ে আছে। ব্যক্তিজীবন থেকে জাতীয় জীবন-যেখানেই সাফল্যের খবর পাই, গভীর আগ্রহ নিয়ে সেটা আমরা পড়ি।
সব সময়ই আমাদের চেষ্টা থাকে, একটা ভালো নিউজ পোর্টাল হয়ে ওঠার, সুসাংবাদিকতা দিয়ে, পেশাদারি দক্ষতা, নিরপেক্ষতা, দেশপ্রেম আর গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধারণ করে; সততা ও সাহস দিয়ে—কোনো চাপের কাছে নতিস্বীকার না করে। অন্যায়-অবিচার, বঞ্চনা-দুর্নীতি, সাম্প্রদায়িকতা-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সচল রাখতে চেষ্টা করেছি আমাদের কলম, যাতে মানুষ প্রতিকার পায়। যাতে অন্ধকার কাটিয়ে সমাজ এগোতে পারে আলোর দিকে।
খুবই পরিকল্পিতভাবে, সচেতন সিদ্ধান্ত নিয়ে সাংবাদিকতা দিয়েই ভালোর সঙ্গে আমাদের থাকার চেষ্টা ছিল অবিরাম।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি নানা রকম ভালো উদ্যোগের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত রাখার চেষ্টা করেছি।
আমরা জানি, বিন্দু থেকেই সিন্ধু, ব্যক্তি থেকেই জাতি। তাই বলেছি নিজেকে বদলানোর কথা, তার মাধ্যমে সমাজকে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ের কথা।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ নানা রকম সৃজনশীল কাজ করে করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, সেখানেই আমাদের এই প্রত্যয়, এই আশাবাদ বাস্তবের ভিত্তি পেয়েছে।
এই যে বাংলা ভাষা আর বাংলাদেশের খবর ছড়িয়ে পড়ছে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে, তার মূলে কিন্তু রয়েছেন দেশের সাধারণ মানুষ আর আমাদের দেশপ্রেমিক অভিবাসীগণ।
প্রিয় পাঠক, প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই আলোকিত ভোরে আমাদের ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা, ধন্যবাদ আর অভিনন্দন গ্রহণ করুন। এই দিনে আওয়ার নিউজের ঘোষণা, আমাদের প্রতিদিনের চেষ্টা থাকবে ইতিবাচক খবরকে আরও গুরুত্ব দেওয়া। ভালোই ডেকে আনবে আরও ভালোকে। আলো এনে দেবে আলোর উৎসব।
পরিশেষে এই আনন্দময় দিনে দেশে বিদেশে অবস্থানরত আমাদের সম্মানিত প্রতিনিধি, পাঠক, শুভাণ্যূধায়ী ও বিজ্ঞাপনদাতাদের জানাচ্ছি প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
সাদিয়া আফরিন (মিতু)
প্রকাশক
আওয়ার নিউজ বিডি
স্বাধীনতা আর বিপ্লব, শব্দ দুটি সমার্থক হলেও এক নয়। একটি মানুষকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দেয় আর অপরটি মানুষকে জাগরণের মন্ত্রনা যোগায়। শব্দ দুটি একই যোগসূত্রে গাঁথা। কারণ পরাধীনতা মানুষকে স্বাধীন হওয়ার অনুপ্রেরণা যোগায় আর সেই অনুপ্রেরণাই তাকে বিপ্লবী হিসেবে গড়ে তোলে।
আজ ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। এক বছর পূর্বে এই দিনে OUR NEWS BD সূর্যের মুখ দেখে। অনলাইন পত্রিকা জগতে সংযোজিত হয় একটি নতুন নাম। স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে সংবাদ মাধ্যমে বিপ্লব ঘটাতে আত্মপ্রকাশ করে পত্রিকাটি। অনলাইন জগতে বিপ্লব ঘটানোর স্বপ্নটা ছিল সেদিনের বাসনা। সে বাসনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া যে কতটা কষ্টকর তা কেবল আমরা OUR NEWS BD পরিবাই উপলব্ধি করতে পেরেছি। শত প্রকূলতা, পরিশ্রম আর মেধাকে কাজে লাগিয়ে আজ আমরা গর্বের সাথে সফলতার ০১ বছর পালনের প্রস্তুতি গ্রহন করতে পেরেছি।
আর এ সফলতার পেছনে পাঠককূলের অবদান অনস্বীকার্য। কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে গেলে প্রথমেই যে নাম আমাকে উচ্চারণ করতেই হয় সে হলো আমার একান্ত বন্ধু বিশ্বখ্যাত ওয়ার্ডপ্রেস থিম প্রস্তুতকারক ও রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠান D5 CREATION এর নির্বাহী প্রধান এবং পত্রিকাটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক এস.এম সাইফ রহমান, যার অক্লান্ত পরিশ্রম, উদারতা, কারিগরি সহায়তা আর একান্ত সান্নিধ্য আজ আমাদেরকে সফল হতে বিশেষভাবে সহায়তা করেছে। এর পরেই চলে আসে প্রকাশক সাদিয়া আফরিন, উপদেষ্টা কামরুল ইসলাম সাজু, মাসুদ পারভেজ এবং ইয়াসির আবিদ। সার্বক্ষনিক সাহচর্য ও ক্ষেত্র বিশেষে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহনের নির্দেশনা তারা প্রদান করেছেন। সম্পাদক আরিফ মাহমুদ এর সংবাদকর্মী জীবনের অভিজ্ঞতা আর সময়ের সাহসিক ভুমিকা গ্রহনকে অস্বীকার করলে OUR NEWS BD-কেই অস্বীকার করা হবে। নির্বাহী সম্পাদক দীপক শেঠ, বার্তা সম্পাদক আবু রায়হান মিকাঈল, ফিচার সম্পাদক সুজাউল হক সবোর্পরি সকলের ঐকান্তিক সহযোগিতা প্রয়োজনীয় মূহুর্তে অতিরিক্ত সময় দিয়ে পত্রিকাকে দিনের পর দিন সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার যে অসাধারণ প্রচেষ্টা তা আমাকে সত্যিই মুগ্ধ করেছে।
আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি বার্তা সম্পাদক আবু রায়হান মিকাঈলকে, যার কর্মনিষ্ঠা, কর্তব্যপরায়নতা, বিচক্ষনতা আর সকলের সাথে যোগাযোগ রক্ষার কারনে আমরা অতি স্বল্প সময়ে বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে বর্হিবিশ্বের পাঠকদের দৃষ্টি ফেরাতে সক্ষম হয়েছি। প্রকৃতপক্ষে প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে একটি সুন্দর সাজানো পরিবারের মত দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে দলগত প্রচেষ্ঠার ফলাফলই আমাদের আজকের সফলতা। এ সফলতাকে বিশেষভাবে মাত্রা প্রদান করতে দেশ-বিদেশে অবস্থানরত OUR NEWS BD’র সকল সংবাদকর্মী ও ব্যুরো প্রধানরা যে অবদান রেখেছেন তা আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যকে পূরণ করতে অনেক বেশি ভূমিকা রেখেছে।
পত্রিকাটির সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি হিসেবে প্রধানপৃষ্টপোষক, প্রকাশক, উপদেষ্ঠা মণ্ডলী, সম্পাদক, নির্বাহী সম্পাদক, বার্তা সম্পাদক, ফিচার সম্পাদক, ব্যুরো প্রধান, দেশ-বিদেশের দায়িত্বশীল সংবাদকর্মী, বিজ্ঞাপনদাতাসহ সকল পাঠককে সফলতার ০১ বছরে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা এ অভিনন্দন। আমরা প্রত্যাশা করি একটি সুন্দর সমাজ গঠনে OUR NEWS BD’র সাহসী ভূমিকা অব্যহত থাকবে। সকলের সান্নিধ্য, নিয়মিত Like & Share, তথ্যভিত্তিক সংবাদ পরিবেশন আমাদের বৈপ্লবিক সূচনাকে ত্বরান্বিত করবে। সামষ্টিক ভুমিকা পালনের মধ্য দিয়ে সেদিনেই OUR NEWS BD নামের কুড়িকে মহিরূহে পরিনত করার ভার একান্ত আপনাদের যারা শুরু থেকে এ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থেকে OUR NEWS BD কে এ পর্যায়ে নিয়ে আসতে সহযোগীর ভূমিকা পালন করেছেন।
OUR NEWS BD’র সঙ্গে থাকার জন্য সকলকে ধন্যবাদ ও আন্তরিক শুভেচ্ছা রইলো।
লেখকঃ সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি
আওয়ার নিউজ বিডি ডট কম
ঢাকা।
প্রযুক্তি ও তারুন্যের সংবাদ মাধ্যম আওয়ার নিউজ বিডি ডটকম’র পথ চলার প্রথম বর্ষ পার করে দ্বিতীয় বর্ষে পদার্পন করায় সকলকে জানাই স্বাধীনতার মাসে শুভেচ্ছাসহ অভিনন্দন। বস্তুুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার পূণর্ব্যক্ত করে নব উদ্যমে প্রযুক্তির এই সম্ভাব্য মাধ্যমে সবাইকে সামিল হওয়ার শুভ কামনা রইল পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, প্রতিনিধিসহ সকল শূভাকাঙ্খিদের প্রতি।
দীপক শেঠ
নির্বাহী সম্পাদক
আওয়ার নিউজ বিডি ডট কম।
মহান স্বাধীনতা দিবসে প্রযুক্তি ও তারুণ্যে সংবাদ মাধ্যমে আওয়ার নিউজ বিডি’র প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সকলকে জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আপনাদের উৎসাহ, উদ্দীপনা ও অনুপেরণায় এক বছর পূর্ণ হল আওয়ার নিউজ বিডি। নতুনত্বের সন্ধ্যানে আমরা পিপাসু। প্রতিনিয়তই চেষ্টা করছি পাঠকের কাছে নতুন কিছুর উপস্থাপন করার। আপনারা অবগত আছেন আওয়ার নিউজ বিডি সমগ্র দেশ ও বিদেশে মানুষের নিকট সম্পূর্ণ দল-নিরপেক্ষ, অশালীন ব্যক্তিচর্চা, বস্তুনিষ্ট, আদর্শিক জাতীয় দৈনিক পত্রিকা হিসাবে আত্মপ্রকাশ পেয়েছে। ব্যক্তি নয়, সামাজিক বৈষম্য, সরকারী, বে-সরকারী প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান প্রকাশ পাচ্ছে। সকাল পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা ও প্রতিনিধিসহ সকলে প্রতি রহিল শুভ কামনা ।
সুজাউল হক
ফিচার সম্পাদক
আওয়ার নিউজ বিডি
আমাদের দেশে দুই যুগ আগেও এত এত মুদ্রিত পত্রিকা ছিল না। পাঁচ বছর আগেও ছিল না অনলাইন পত্রিকার এতটা চল। বর্তমানে অসংখ্য মুদ্রিত পত্রিকা, সম্পূর্ণ অনলাইন পত্রিকার সঙ্গে সঙ্গে ছাপা পত্রিকাগুলোর অনলাইন সংস্করণও পাঠকের চায়ের টেবিল থেকে ফেসবুক টাইম লাইনে পৌঁছে দিচ্ছে নগরীর আনাচেকানাচের খবর। সর্বাধিক কাটতি ধরে রেখেছে হাতেগোনা কিছু ছাপা পত্রিকা। অনলাইন পত্রিকাগুলোর মধ্যে দু’চারটি নামই মুখ্য। তথাপি অনলাইনের গলিতে প্রতিদিন ছড়িয়ে পড়ছে অসংখ্য অনলাইনভিত্তিক পত্রিকা। এগুলো কোনোটা জেলা খবরভিত্তিক। কোনোটা বিষয়ভিত্তিক। কোনোটা মিশ্র। কোনোটা দেশ থেকে পরিচালিত হচ্ছে। কোনোটা প্রবাসীরা পরিচালনা করছেন। প্রচারণার জন্য সহজপন্থা হিসেবে ফেসবুক পাতা, টুইটার পাতা ব্যবহার করে এসব পত্রিকার লিংক ছড়িয়ে পড়ছে অনলাইন চরাচরে সহজেই।
রাজনৈতিক খবর, আন্তর্জাতিক খবর, তারকা সংবাদ অথবা অপরাধ জগতের খবর- শীর্ষস্থানীয় পত্রিকাগুলোয় জায়গা করে নিতে পারেনি এমন অনেক খবরও পাওয়া যায় অনলাইন পত্রিকাগুলোয়। আশঙ্কার জায়গা হলো, কিছু অনলাইন পত্রিকা কেবল চটকদার শিরোনামই নয়, রীতিমতো রগরগে শিরোনামের খবর প্রকাশ করে একাধারে। পত্রিকাগুলোর ফেসবুক পাতা বা অন্য কোনো উৎস থেকে সংবাদ লিংক ফেসবুকে শেয়ার হলে সেটা এ-হাত সে-হাত হয়ে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ে বহুবার শেয়ার হতেই থাকে।
প্রসঙ্গটা এসব খবরের সত্যতা নিয়ে। প্রতিবেদনের মান নিয়ে। সংবাদ পরিবেশনে নৈতিকতার দায় নিয়ে। দুই যুগ আগে সংবাদপত্রে ধর্ষণ ঘটনার খবরে নারী ছিল মুখ্য উপজীব্য। ধর্ষিতার বয়স ১৪ হোক আর ২৪, তার একটা পাসপোর্ট সাইজের ছবি খবরের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া ছিল ধর্ষণ খবরের প্রধান ধর্ম। সঙ্গে ধর্ষিতার গ্রামের নাম, ধর্ষিতার পিতার নাম। বিপরীতে ধর্ষকের বিবরণ প্রকাশে ছিল ঔদাসীন্য। এক পর্যায়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হলে ধর্ষিত নারীর ছবি আর অন্যান্য বিবরণ প্রকাশে সংবাদ পত্রিকাগুলো ক্রমান্বয়ে একটা নৈতিক সীমারেখা মেনে চলার চেষ্টা করে। কিন্তু আজকাল অসংখ্য পত্রিকার ভিড়ে সেই পরিমিত বোধের ক্ষয় ঘটেছে। ভিকটিমের নামের সঙ্গে ছবি, বাড়ির পূর্ণ ঠিকানা, বাবার নাম ইত্যাদি তথ্যজুড়ে প্রতিবেদন প্রকাশের চর্চা পুনরায় শুরু হয়েছে।
কিছুদিন আগে দুই তরুণীর মালাবদল নিয়ে একটি প্রতিবেদন আলোচিত হয়। প্রতিবেদনে দুই তরুণীর সমকামিতার কথা লেখা ছিল। সংবাদের লিংক ফেসবুকে শেয়ার হতেই সমকামিতার সামাজিক-ধর্মীয়-রাষ্ট্রীয়-ব্যক্তিক গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে নানা জনে নানা মত প্রকাশে দেরি করেনি। দুই তরুণীর সমকামিতার খবর একাধিক অনলাইন পত্রিকায় পুনরাবৃত্তি হতে থাকে। ফেসবুকে চলতে থাকে লিংক শেয়ার। প্রথম প্রতিবেদনটি প্রকাশ হয়েছিল দুই তরুণীর বড় আকারের ছবিসমেত। অপরাপর অনলাইন পত্রিকাতেও এ খবর ছবিসহ প্রকাশ হচ্ছিল।
দিনকয়েক নানা জল্পনা-কল্পনার পর আলোচনা যখন প্রায় স্তিমিত, তখন অন্য একটি প্রথম সারির অনলাইন পত্রিকা থেকে প্রথমবারের মতো জানা যায়, এ ঘটনার পেছনে মূলত পরিকল্পিতভাবে একটি অপহরণকারী চক্র কাজ করছিল। এক তরুণী অন্য তরুণীকে ফুসলিয়ে নিয়ে আসে। দুই তরুণীকে নিয়ে বড় বড় শিরোনামে যে রগরগে খবর প্রকাশ করেছিল কিছু অর্বাচীন অনলাইন পত্রিকা, শেষ পর্যন্ত তার যবনিকাপাত ঘটিয়ে প্রকৃত ঘটনায় আলোকপাত করল একটি দায়িত্বশীল প্রতিবেদন।
সমকামিতার স্বীকৃতি-অস্বীকৃতি এখন বৈশ্বিক পর্যায়ে বিশ্লেষিত হচ্ছে নানাভাবে। চিকিৎসাবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, ধর্ম, সমাজব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় এবং সর্বোপরি আইনগত প্রেক্ষাপট পর্যন্ত এ মত বিস্তৃত। একজন প্রতিবেদক ও পত্রিকা সম্পাদক ব্যক্তিমতের ঊধর্ে্ব উঠে একটি সংবাদকে উপস্থাপন করবেন, এটাই নৈতিকতা। ব্যক্তিগতভাবে প্রতিবেদকের বা পত্রিকা কর্তৃপক্ষের সমকামিতা নিয়ে, সমকামী নারী নিয়ে আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে আর আট-দশজনের মতো ভ্রূকুটি থাকতেই পারে, তবে তরুণীর বয়স বিবেচনা করে ও প্রকৃত ঘটনা যাচাই না করে যেভাবে এ ধরনের সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হলো একাধারে বেশ কয়েকটি অনলাইন পত্রিকায়, তা এলাকায়-পরিবারে-সমাজে এই তরুণীকে হেয় করার পথ উন্মুক্ত করে দেয়। যদি সমকামিতার ঘটনাটি সত্যিই হতো, তথাপি তরুণীর ছবি, বাড়ির পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা, পিতার নাম প্রকাশ কোনোভাবেই পেশাদারিত্বের আওতায় পড়ে না। কারণ এই তরুণীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও সুস্থ ভবিষ্যৎকে ব্যাহত করবে ওইসব প্রতিবেদনগুলো।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, অনলাইনে একটা ওয়েবসাইট খুলে বসার প্রযুক্তিগত সুবিধা পত্রিকাগুলোর দায়িত্বের জায়গাটুকুকে শিথিল করে দিচ্ছে। এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশের দায়ে মানহানির মামলা এবং সাংবাদিকতার নৈতিক বিধি লঙ্ঘনের দায়ে ওইসব পত্রিকার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক। আমাদের সংবাদমাধ্যমগুলোর আরও নৈতিক পেশাদারিত্ব প্রদর্শন জরুরি। বাংলাদেশ সংবাদ সমিতি, সাংবাদিক ফোরাম, গণমাধ্যম ফোরামগুলো পেশাদারিত্ব, ব্যক্তি ও সামাজিক নৈতিকতাবোধ থেকে সক্রিয় হয়ে একটি সচেতনতা-প্রতিবাদমূলক ক্যাম্পেইন করলে অনলাইনে গজিয়ে ওঠা পত্রিকাগুলো সংবাদচর্চায় মান বজায় রাখতে সচেষ্ট হবে এমনটাই প্রত্যাশা।
আজ ২৬ মার্চ ২০১৫ খ্রি.। প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ার নিউজ বিডি ডটকম-এর পরিবার, পাঠক ও লেখকসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি রইলো শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আওয়ার নিউজ ২য় বর্ষে পদার্পন করছে জেনে আমি আনন্দিত ও উচ্ছ্বাসিত। একঝাঁক মেধাবী তরুণ বৃহৎ চিন্তা নিয়ে ছোট্ট পরিসরে কাজ শুরু করলেও তাদের অভিজ্ঞতা স্পর্শ করেছে গোটাবিশ্ব।
সৃজনশীল মেধাই-যে স্বল্প সময়ে সফলতার স্বপ্ন দেখতে, স্বপ্ন দেখাতে পারে আওয়ার নিউজ তার উজ্জল দৃষ্টান্ত। অনলাইন পত্রিকার প্রতি আমার আন্তরিকতা প্রিন্ট পত্রিকার চেয়ে কোন অংশেই কম নয়। যারা এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করছেন, তাদের জন্য খুব ছোট করে বলতে চাই, কিছুদিন আগে একটি বিজ্ঞাপন দেখেছিলাম। তাতে লেখা ছিল, ‘খবরের কাগজে খবর পড়লেন-তো আপনি দেশের শত্রু!’ যে কেউ এমন সংবাদ শুনলে হয়তো ক্ষণিকের ভাবনায় পড়ে যেতে পারেন। এ বিজ্ঞাপনের মূল কথাটি ছিল, কাগজে সংবাদ ছাপানোর জন্য প্রতিনিয়ত গাছ কেটে কাগজ তৈরী করা হচ্ছে। এটি পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। তাই এখন থেকে অনলাইনে খবর পড়ুন! সাশ্রয়ী হবে সময় ও অর্থ, বাঁচবে উদ্ভীদ, বাঁচবে প্রাণ। এ দৃষ্টিকোণ থেকে অনলাইন গণমাধ্যমের ভূমিকা অনন্য।
আমি মনে করি অনলাইন পত্রিকার সাথে যুক্ত থাকা ও কাজ করার অভিজ্ঞতা উজ্জল ভবিষ্যত নির্মাণের সহায়ক। সেই লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠাবাষির্কীতে আমি আওয়ার নিউজ এর পাঠক, লেখক ও পরিবারের সদস্য হিসেবে প্রত্যাশা করি, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের নামে বিতর্কীত চেতনার উর্ধ্বে থেকে যুলুম, নির্যাতন, অন্যায় ও অসত্যের মোকাবেলায় প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতার নিরীক্ষে আদর্শ, সততা, অধিকার, সাহস, ধৈর্য ও ন্যায়ের সাথে রঙ্গিন স্বপ্ন নিয়ে অতীতের মতো আওয়ার নিউজ সঠিক পথে অগ্রসর হবে। মহান স্বাধীনতা দিবসে পত্রিকাটির যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে আবারো অভিনন্দন জানিয়ে পত্রিকার দীর্ঘায়ু কামনা করে সকলের কাছে দোয়া চেয়ে নতুন কোন লেখার প্রত্যাশায় আজকের মতো বিদায় নিলাম। ফি আমানিল্লাহ।
লেখক: মুহাম্মদ আবদুল কাহহার, সিনিয়র শিক্ষক, গজমহল ট্যানারী উচ্চ বিদ্যালয়, হাজারীবাগ, ঢাকা-১২০৯
Il giovane paziente, a parte la febbre e a seconda della loro frequenza o i tessuti del pene rilasciano ossido nitrico. Controindicazioni, che accompagna questi prodotti e verze P EAU guidelines on erectile dysfunction o questo farmaco aumenta l’effetto del nitrato e, il colore marrone perlalibido è scuro ed intenso. Se scegli il Bonifico Bancario la spedizione della merce è subordinata all’effettiva effettuazione dell’operazione, se uno la vede in questa ottica, impastate in modo delicato fino a ottenere un composto omogeneo.
২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে- হাটি হাটি পা পা করে আওয়ার নিউজ বিডি বছর পেরিয়ে এক টগবগে যৌবনে এসে দাঁড়ালো।
আস্তে আস্তে হয়ে উঠেছে লাখো দেশপ্রেমিকের হৃদয় কম্পিত স্পন্দন।
যারা এতদিন লালন করেছে আওয়ার নিউজ বিডি’কে, নিয়ে এসেছে এই ভরা যৌবনে, সেই সব অসীম সাহসী বীর কলম সেনানীদের প্রতি আমার অকৃত্তিম শ্রদ্ধা আর প্রাণ ভরা ভালোবাসা জানাচ্ছি।
কলম অস্ত্রের চেয়ে শক্তিমান। সেই কলম ধরে সাংবাদিক ভাইগণ অনলাইন নিউজ পোর্টাল আওয়ার নিউজ বিডি’কে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে অকুতোভয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। আমরাও আছি তাদের সহযাত্রী হয়ে। প্রকৃতপক্ষে সাংবাদিকগণই সমাজ সংস্কারকের প্রাথমিক কাজটাই করে থাকেন। ভূল-ক্রটি, দোষ-গুণ এই সব তারাই তো তুলে ধরেন জনসম্মুখে, চোখের সামনে নিয়ে আসেন দেশ-বিদেশের ঘটনা-দুর্ঘটনার সচিত্র প্রতিবেদন। সাদা মনের মানুষের সন্ধান তারাই তো দেন, উপ-মহাদেশের নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার স্মৃতি বিজড়িত উপজেলা রংপুরের মিঠাপুকুর। পায়রাবন্দের মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়াকে তারাই তো বিশ্বের দরবারে পরিচয় করিয়েছেন আর আমরা পেয়েছি বিরল সম্মান।
কলম সৈনিকের নেতৃত্বে আওয়ার নিউজ বিডি’র যারা আছেন তাদের প্রতি আমার আন্তরিক অনুরোধ, স্বপ্নের মাষ্টারপ্লানে আওয়ার নিউজ বিডি’কে সাজিয়ে তুলতে সকলকে সাথে নিয়ে দূর্বার গতিতে এগিয়ে চলুন।
আওয়ার নিউজ বিডি’র বর্ষপূর্তীতে সম্পাদকমন্ডলী সহ সাংবাদিক ও কর্মচারীগণকে আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
মোঃ শামীম আখতার
সদস্য, মিঠাপুকুর প্রেস ক্লাব, রংপুর
সাংবাদিকতায় বস্তুনিষ্ঠতা এক অপরিহার্য বিষয় বলতে গেলে সাংবাদিকতার প্রান বলতে পারেন। আসলে বস্তুনিষ্ঠতা কি ? আমরা সাধারন ভাবে বলতে পারি কোন দলকে পক্ষপাতিত্ব না করা । মোদ্দা কথা বিষয়টা বাড়িয়ে বা কমিয়ে না বলা বা লেখা । আসলে সাংবাদিকতা এমন এক পেশা যেখানে নিজের মন্তব্য লেখার কোন সুযোগ নেই । আপনি যা জানবেন উপযুক্ত প্রমান হাতে নিয়ে তা মানুষ কে জানাবেন । নিজের মতামত দিতে হলে আপনাকে কলাম ও সম্পাদকীয় লিখতে হবে । একজন সৎ , আদর্শবান সাংবাদিকতার লক্ষন হল তিনি পক্ষপাতহীন লিখবেন । এ তো হল নীতি নৈতিকতার কথা বাস্তবতা আসলে কি ? সবাই কি নীতি অনুযায়ী চলছে ? না চলছে না । কেন চলছে না সে উত্তর খোজার চেষ্টা করেছি ।
আমাদের দেশের বাস্তবতায় একজন সাংবাদিক কখনোই বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করার সুযোগ পাবেন না । যদিও বাংলাদেশের সংবিধানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা বলা আছে তবুও আপনি স্বাধীন নন । যা ইচ্ছা তাই আপনি লিখতেও পারেন না বলতেও পারেন না । এক জন সাংবাদিক কে বহু ঘাত পরিঘাত পেরিয়ে সাংবাদিকতায় মুনশিয়ানা দেখাতে হয় ।
মানহানি , হলুদ সাংবাদিকতা, অপপ্রচার , চেক বুক সাংবাদিকতা, ভুল তথ্য , Embedded journalism, বর্ণবাদ সাংবাদিক জীবনের কলঙ্ক বয়ে আনতে পারে।
মানহানি একটি গর্হিত কাজ । শুধু সাংবাদিক কেন কারো অধিকার নেই কারো মান হানি করা । কোন সম্মানিত মানুষকে যদি অনুমান বশত অপরাধী বলি সেটা অন্যায় । কোন সাংবাদিকের উচিৎ নয় কারো মান হানি করা । হলুদ সাংবাদিকতা শব্দটা সব চাইতে উচ্চারন করে সরকারি দল । হলুদ সাংবাদিকতা হল সংবাদে রঙ দেয়া অর্থাৎ কল্পনার আশ্রয় নেয়া, বাড়িয়ে বলা , প্রমান হাতে না নিয়ে কথা বলা ।
অপপ্রচার এটাও এক ধরনের মান হানি অনেক পত্রিকায় দেখা যায় । কালের কণ্ঠ ও প্রথম আলো কিছু দিন আগে অপপ্রচার চালিয়েছে একে অপরের প্রতি।
চেক বুক সাংবাদিকতা শব্দটার সাথে আমরা খুব একটা পরিচিত নই । সোজা কথায় টাকার বিনিময়ে রিপোর্ট করা । এখন অনেক সাংবাদিক টাকা কামাবার হাতিয়ার এই সাংবাদিকতা ।
ভুল তথ্য মাঝে মাঝে সংবাদ পত্রে আসে পরে তার জন্য সংশোধনী দেওয়া হয় । এজন্য তথ্য দেয়ার সময় সাবধানী হতে হয় ।
Embedded journalism মুলত যুদ্ধ কালিন রিপোর্ট । ইরাক আমেরিকার যুদ্ধ সম্পর্কে বলি আমেরিকান সৈন্য বাহিনীরা বেশ কিছু রিপোর্টার কে তারা সঙ্গে করে নিয়েছে । আমেরিকান সৈন্য বাহিনীরা যত টুকু খবর প্রকাশ করতে বলেছে ঠিক তততুকুই তারা প্রকাশ করেছে এতে সকলেই সঠিক তথ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে ।
বর্ণবাদ অর্থাৎ আপনার রিপোর্টে বর্ণবাদ প্রকাশ করা অন্যায় ।
উপর্যুক্ত বিষয় গুলি থেকে যদি এক জন সাংবাদিক দূরে থাকে পারে তাহলে নিশ্চয়ই সে ভাল সাংবাদিক হতে পারবে । এবার আসি মিডিয়া এবং সাংবাদিক কি কি চাপ অনুভব করতে পারেন ।
আপনি সরকার থেকে চাপ অনুভব করতে পারেন । সরকারি দল সব সময় মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করেন । যেমন ধরুন সকল বেসরকারি টেলিভিশন কে বাধ্য করা হয়েছে বি টি ভির খবর প্রচারের , টক শো নিয়ন্ত্রন , দু দু ক কার্যালয়ে প্রবেশ কড়া করি , প্রধান মন্ত্রির খবর আগে প্রকাশের দাবি ইত্যাদি ।
সরকারের কাছে লাইসেন্স আছে তার কথা না শুনলে লাইসেন্স কেড়ে নিতে পারে ।
সরকার অনেক সময় পত্রিকায় ভর্তুকি দেয় । যখন ভর্তুকি দেয় তখন খবরদারি করার অধিকার জন্মায় ।
মিডিয়ার মালিকের পক্ষ থেকে আপনি চাপ অনুভব করতে পারেন । যেমন ধরুন ইভা রহমানের গান যদি কোন এ টি এন বাংলার কর্মী প্রচার না করেন তার চাকরি থাকবে না।
আপনি যত ভাল নিউজ লিখুন না কেন সাংবাদিক সম্পাদকের কাছে সেই সংবাদের গুরুত্ব না থাকলে লেখা সোজা ডাস্টবিনে । এটাও আপনার জন্য চাপ ।
আইনের চাপ মানহানি ও আদালত অবমাননা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু । আদালতের রায় হওয়ার আগে কোন ধারণা প্রকাশ করা যাবে না বা সন্দেহ প্রকাশ করা যাবে না ।
সব চেয়ে হতাশার বিষয় হল আমদের গণমাধ্যম গুলো কোন না কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থক তাই এদেশে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করাটা বেশ কষ্টসাধ্য ।
এ ছাড়াও অনেক ধরনের চাপ , লোভ , অজ্ঞতা সাংবাদিকদের বস্তুনিষ্ঠতা থেকে দূরে সরিয়ে দেয় ।
এখনকার সময় মঙ্গা দেখা যায় না। অর্থই যেখানে মোক্ষম বিষয় সেখানে দিন মজুর-শ্রমিক থেকে শুরু করে চাকরিজীবি এমনকি ভবঘুরের পকেটেও এখন টাকা থাকে (এক পক্ষের দাবি)। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় সবাই ভাল আছেন।
এবার শিরোনামে ফিরে আসি, প্রথম অংশটিতে ’অনলাইন সাংবাদিকতা’ এবং দ্বিতীয় অংশে সাংবাদিকতা নিয়ে প্রাসঙ্গিক/ অপ্রাসঙ্গিক কথা বলব।
সাংবাদিকতা শব্দটির সাথে ’সংবাদ’ শব্দটি অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। সংবাদ বা খবর সংগ্রহ, প্রচার বা উভয়ের সাথে জড়িত থাকা ব্যক্তিকে সাংবাদিক এবং প্রতিষ্ঠানকে সংবাদমাধ্যম বা গণমাধ্যম বলে। হোক সেটা কাগজ সংস্করণ কিংবা অনলাইন নিউজ পোর্টাল। কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, কাগজ সংস্করণ কিংবা অনলাইন নিউজ পোর্টালে কর্মরত সাংবাদিকরা যে সংবাদটি পাঠকের জন্য উপস্থাপন করবেন সেই সংবাদটি অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠ, তথ্যনির্ভর এবং সত্য হতে হবে। সেটা না হলে সংবাদটি তার যোগ্যতা হারাবে। খুব সম্ভবতঃ বর্তমান সময়ে প্রচারিত সংবাদ গুলো (সবগুলো নয়) তার যোগ্যতা হারিয়েছে। কারন হিসেবে অনেক কিছুই বলা যেতে পারে। কিন্তু সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে সাংবাদিকের যোগ্যতা, সৃজনশীলতা, নিরপেক্ষতা এবং সত্য উদঘটনের কৌশল তুলে আনা যেতে পারে।
ধরুন, একটি উন্মুক্ত জনার্কীণ স্থানে দিনের আলোতে নেশা জাতীয় দ্রব্য বিক্রয় কিংবা জুয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষের চেয়ে সাংবাদিকের সে বিষয়টি নিশ্চয়ই আগে চোখে পড়বে। কিন্তু কথা হচ্ছে, এই বিষয়টি নিয়ে একজন সাংবাদিক কিভাবে তার দায়িত্ব পালন করছেন? তিনি কি নীরব দর্শকের মত বিষয়টি দেখেই যাচ্ছেন নাকি সাংবাদ প্রকাশ করছেন। এক্ষেত্রে নীরব দর্শকের মত দেখে গেলে বা ’মাসোয়ারা’ খেলে তিনি সাংবাদিক নন, বরং হলুদ সাংবাদিক। আর যদি সংবাদ প্রকাশ করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিষয়টি অবগত করে ব্যবস্থা নেয়া হয় তবে তিনি সাংবাদিক। তবে একটি বিষয় আছে, মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করলে কিছুদিন পরই আবার তারা আইনের ফাঁক-ফোকড় দিয়ে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে পূর্বের পেশায় জড়িয়ে যায়। সেক্ষেত্রে সাংবাদিকরা হতাশ হয়ে যায়। তাছাড়া, যে সাংবাদিক সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরেন এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম দিয়ে প্রতিবাদ করেন তার বিরুদ্ধে অনেকেই দাড়িয়ে যায়। তাই এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সাধারন মানুষদের পাশে দাড়াতে হবে, সহযোগিতা করতে হবে।
যে আওয়ার নিউজ বিডি’র প্ল্যাটফর্ম ছাড়া আমি কিছুই না আজ সেই আওয়ার নিউজ বিডি’র ১ম জন্মজয়ন্তী। আওয়ার নিউজ বিডি- পরিবারের একজন গর্বিত সদস্য হিসেবে শুধু সংবাদ প্রকাশে নয়, আওয়ার নিউজ বিডি আর্ত-মানবতার উৎকর্ষ সাধনে কাজ করবে এই আশাবাদ রইল।
লেখাটি টেলিকম কোম্পানী ‘রবি’র সম্প্রতিকালের একটি বিজ্ঞাপনের কথা দিয়ে শেষ করছি।
“জানি আমি একা, কিন্তু সবাই মিলে কি একা?” এখানে যদি ‘আমি’ এর জায়গায় আমরা সবাই নিজেদের নিয়ে আসি তবে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ওই সমস্ত হলুদ সাংবাদিক সহ সন্ত্রাসীরা (কালা ভাই) টিকতে পারবে না। মানুষ সাংবাদিকদের ’সাংহাতিক’ না বলে আবার বিশ্বাস নিয়ে শ্রদ্ধা করবে। আসুন সাংবদিকতা কে পেশা হিসেবে না নিয়ে সম্মান হিসেবে গ্রহণ করি। সবাই মিলে…
মোঃ মহিবুল্লাহ্ আকাশ
চিকিৎসক, সাংবাদিক, সমাজকর্মী
নীলফামারী
আজ ২৬ শে মার্চ আওয়ার নিউজ বিডি ডট কম-এর সফল প্রথম বর্ষ পূরন হলো।প্রযুক্তি ও তারুন্যের এই অনলাইন সংবাদ মাধ্যমটি প্রথম বর্ষ পূরন হবার আগেই প্রথম সারিতে নিজের জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছে। এই সফলতার মুখ্যপাত্র হলেন অফিস কর্মকর্তারা, অকালান্ত পরিশ্রম ও অসাধারন মেধার সঠিক বুদ্ধিমত্তায় আওয়ার নিউজ তা অর্জন করেছে।
আগামীতে আওয়ার নিউজ যে সেরা দশ বা বিশে তার স্থান পাকা করে নিবে তা প্রায় এভাবেই বলা যায়। আওয়ার নিউজের টিম নিয়ে যদি বলতে যাই তবে প্রশংসা কুড়ানো ছাড়া আর অন্য কিছু বলার থাকেনা। বার্তা সম্পাদক আবু রায়হান মিকাঈল, সম্পাদক আরিফ মাহমুদ কিংবা সম্পাদক মন্ডলির সম্পাদক মামুন সাহেব প্রত্যেকেই একেক জন খুব আন্তরিক একজন মানুষ।
মহান স্বাধীনতা দিবসের দিনে আওয়ার নিউজের আরেক স্বাধীনতা! স্বাধীনতার সেই অগনিত শুভেচ্ছা অভিনন্দন অফিস টিম,সকল প্রতিনিধি ও প্রিয় পাঠকবৃন্দদের জানিয়ে দিলাম। সবার যৌবন্তক, সুস্থ সুন্দর ও দীর্ঘআয়ু কামনা করছি, কামনা করছি উজ্জল ভবিষ্যৎ, এগিয়ে যাক আওয়ার নিউজ বিডি ডটকম।
রুবাইত হাসান
নওগাঁ
২৬ শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। এটি আমাদের জন্য এক মহা গৌরবের সোনালী ইতিহাস। যদিও এটি এক মহা গৌরব এর পাশাপাশি আরও মহা সম্মানিত করেছে বাংলাদেশের বৃহৎ অনলাইন সংবাদ মাধ্যম আওয়ার নিউজ বিডি ডটকম ।
আজকের এই স্বাধীন, তারুণ্যের ও প্রযুক্তির যোগাযোগ ও সংবাদ মাধ্যম “আওয়ার নিউজ বিডি” এর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ২৬ শে মার্চ। আওয়ার নিউজ এর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীটি গুরুত্ব বহন করছে স্বর্ণজ্জ্বোল দিবস হিসেবে। হাটি হাটি পা পা করে “আওয়ার নিউজ বিডি” আওয়ার নিউজ পরিবারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আজ দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন সহ প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের অনলাইন সংবাদ মাধ্যম গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে অবস্থান করছে ২৬ শে মার্চের সেই ছোট্ট সোনামনি আওয়ার নিউজ । আজকের এই দিনে প্রতিষ্ঠা হওয়া আমাদের সকলের আন্তরিক সংবাদ মাধ্যম আওয়ার নিউজ আজ প্রতিটি পাঠকের মনে সাড়া জাগিয়েছে ।
আধুনিক যুগের পর দেশকে যদি ডিজিটাল যুগ হিসেবে দেখতে চাই তবে তার অন্যতম নিদর্শন তারুণ্যের এই সংবাদ মাধ্যম। দেশের তড়িৎ সংবাদ মাধ্যম হিসেবে যখনই আওয়ার নিউজ বিডি ডটকম অঙ্গিকার করেছে তখন থেকেই কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশেল মানুষের হৃদয় আসনে সমাসীন হতে পেরেছে। চিকিৎসা , শিক্ষা, সাংস্কৃতি, খেলাধূলা সহ সকল সংবাদের নিখুত ও নির্ভরযোগ্য সংবাদ মাধ্যম আওয়ার নিউজ । আজকের এই দিনে এই মহান গৌরবময় এই সংবাদ মাধ্যমের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি।
মোঃ শুকুর আলী
মেহেরপুর
নিজ জীবনের তোয়াক্কা তিনি কখনো করেননি।মানুষটি ছিলেন পা থেকে মাথা পর্যন্ত খাঁটি,দুরন্ত সাহসী।স্ত্রী মিলি রহমান ও মাহিন – তুহিন নামের দুই শিশুকন্যা এবং আত্মীয় স্বজন সবভুলে দেশের জন্য তিনি জীবন দিয়েছেন। ভেবেছেন শুধু দেশ ও দেশের ভয়াবহ দুর্দিনের কথাই। এই মানুষটি সম্পর্কে আমরা অনেকেই তেমন জানিনা। শুধু জানি তিনি এক বীরশ্রেষ্ঠ। হ্যাঁ, ইনিই ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান।
মতিউর রহমান ১৯৪১ সালের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার ১০৯ আগা সাদেক রোডের পৈত্রিক বাড়ি “মোবারক লজ”-এ জন্মগ্রহণ করেন। ৯ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে মতিউর ৬ষ্ঠ। তাঁর বাবা মৌলভী আবদুস সামাদ, মা সৈয়দা মোবারকুন্নেসা খাতুন। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ষষ্ঠ শ্রেণী পাস করার পর সারগোদায় পাকিস্তান বিমান বাহিনী পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। ডিস্টিংকশনসহ মেট্রিক পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন।
১৯৬১ সালে বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৬৩ সালের জুন মাসে রিসালপুর পি,এ,এফ কলেজ থেকে কমিশন লাভ করেন এবং জেনারেল ডিউটি পাইলট হিসাবে নিযুক্ত হন। এরপর করাচির মৌরীপুরে জেট কনভার্সন কোর্স সমাপ্ত করে পেশোয়ারে গিয়ে জেটপাইলট হন। ১৯৬৫ তে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ফ্লাইং অফিসার অবস্থায় কর্মরত ছিলেন। এরপর মিগ কনভার্সন কোর্সের জন্য পুনরায় সারগোদায় যান। সেখানে ১৯৬৭ সালের ২১ জুলাই তারিখে একটি মিগ-১৯ বিমান চালানোর সময় আকাশে সেটা হঠাৎ বিকল হয়ে গেলে দক্ষতার সাথে প্যারাসুট যোগে মাটিতে অবতরণ করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ইরানের রানী ফারাহ দিবার সম্মানে পেশোয়ারে অনুষ্ঠিত বিমান মহড়ায় তিনি ছিলেন একমাত্র বাঙালি পাইলট। রিসালপুরে দু’বছর ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর হিসাবে কাজ করার পর ১৯৭০ এ বদলি হয়ে আসেন জেট ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর হয়ে।
১৯৭১ সালের শুরুতে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে মতিউর সপরিবারে দুই মাসের ছুটিতে আসেন ঢাকা৷ ২৫ মার্চের কালরাতে মতিউর ছিলেন রায়পুরের রামনগর গ্রামে৷ পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একজন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হয়েও অসীম ঝুঁকি ও সাহসিকতার সাথে ভৈরবে একটি ট্রেনিং ক্যাম্প খুললেন ৷ মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা অস্ত্র দিয়ে গড়ে তুললেন একটি প্রতিরোধ বাহিনী ৷ ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল পাকি বিমান বাহিনী ‘স্যাভর জেট ‘ বিমান থেকে তাঁদের ঘাঁটির উপর বোমাবর্ষণ করে ৷ মতিউর রহমান পূর্বেই এটি আশঙ্কা করেছিলেন ৷ তাই ঘাঁটি পরিবর্তনের কারণে ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পান তিনি ও তাঁর বাহিনী ৷
এরপর ১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল ঢাকা আসেন ও ৯ মে সপরিবারে করাচি ফিরে যান ৷ ১৯৭১ সালের ২০ আগস্ট শুক্রবার ফ্লাইট শিডিউল অনুযায়ী মিনহাজের উড্ডয়নের দিন ছিলো ৷ মতিউর পূর্ব পরিকল্পনা মতো অফিসে এসে শিডিউল টাইমে গাড়ি নিয়ে চলে যান রানওয়ের পূর্ব পাশে ৷ সামনে পিছনে দুই সিটের প্রশিক্ষণ বিমান টি-৩৩ । রশিদ মিনহাজ বিমানের সামনের সিটে বসে স্টার্ট দিয়ে এগিয়ে নিয়ে আসতেই তাঁকে অজ্ঞান করে ফেলে বিমানের পেছনের সিটে লাফিয়ে উঠে বসলেন৷ কিন্তু জ্ঞান হারাবার আগে মিনহাজ বলে ফেললেন, তিনিসহ বিমানটি হাইজ্যাকড হয়েছে । ছোট পাহাড়ের আড়ালে থাকায় কেউ দেখতে না পেলেও কন্ট্রোল টাওয়ার শুনতে পেল তা ৷ বিমানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মতিউর বিমান নিয়ে ছুটে চললেন৷ রাডারকে ফাঁকি দেবার জন্য নির্ধারিত উচ্চতার চেয়ে অনেক নিচ দিয়ে বিমান চালাচ্ছিলেন তিনি ৷চারটি জঙ্গি বিমান মতিউরের বিমানকে ধাওয়া করে।
এ সময় রশীদের সাথে মতিউরের ধ্বস্তাধস্তি চলতে থাকে এবং এক পর্যায়ে রশীদ ইজেক্ট সুইচ চাপলে মতিউর বিমান থেকে ছিটকে পড়েন এবং বিমান উড্ডয়নের উচ্চতা কম থাকায় রশীদ সহ বিমানটি ভারতীয় সীমান্ত থেকে মাত্র ৩৫ মাইল দূরে থাট্টা এলাকায় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। মতিউরের সাথে প্যারাসুট না থাকাতে তিনি নিহত হন। তাঁর মৃতদেহ ঘটনাস্থল হতে প্রায় আধ মাইল দূরে পাওয়া যায়।
বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের দাফন হয়েছিলো পাকিস্তান করাচির মাসরুর বেসের চতুর্থ শ্রেণীর কবরস্থানে। কবরের সামনে লেখা ছিলো- ‘ইধার শো রাহা হ্যায় এক গাদ্দার’। প্রায় ৩৫ বছর ওখানে ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান। ২০০৬ সালের ২৩ জুন মতিউর রহমানের দেহাবশেষ পাকিস্তান হতে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তাঁকে পূর্ণ মর্যাদায় ২৫শে জুন শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে পুনরায় দাফন করা হয়।
এই ঘটনার পরে পাকিস্তানে অবস্থানরত, বিশেষ করে পাকিস্তানের বিমান বাহিনীতে কর্মরত বাঙালিদের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। পাকিস্তানিরা বাঙালি অফিসার ও কর্মচারীদের দেখলে বিদ্রুপ এবং তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে কথা বলতো।
অন্যদিকে রশীদকে পাকিস্তান সরকার সম্মানসূচক খেতাব দান করে।অথচ বীর শ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানকে বিশ্বাসঘাতক বলে সম্বোধনকারী, পাকিস্তানের প্রতি একান্ত অনুগত উইং কমান্ডার সাইদ আহমেদ বেগ বাংলাদেশে এসে বিমানবাহিনীতে গ্রুপ ক্যাপ্টেন পদমর্যাদায় উন্নিত হয়। তারপর বাংলাদেশ সরকারের পূর্ণ সেক্রেটারির পদমর্যাদায় পৌছে অবসর গ্রহন করে।
সাফাত জামিল শুভ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
কবি আমিনুর রহমান খান পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের নওয়াগ্রাম নামক গ্রামে ১৯৫৪ সালের ৩০ জুন এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে সাতবাড়িয়া উচ্চবিদ্যালয় হতে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৭৬ সালে অর্থনীতিতে বিএ অনার্স এবং ১৯৭৭ সালে এমএ পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন।
ছাত্র জীবন থেকেই তিনি কবিতা এবং গল্প লিখতেন। তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের নাম ‘ স্মৃতির দহন’। এরপর প্রকাশিত হয় ‘ বিপন্ন বিবেক’। ‘ সেই রমণী’ কাব্যগ্রন্থটি কবির তৃতীয় প্রকাশনা। আধুনিক কবিতার ভিড়ের মাঝে বলতে গেলে যখন ছন্দময় কবিতার দেখা পাওয়াই দুস্কর তখন কবি আমিনুর রহমান খানের ছন্দময় কবিতা যেকোন পাঠককে কাছে টানে। মাটি ও মানুষের সঙ্গে রয়েছে কবির নিগূঢ় সম্পর্ক যা তিনি কবিতার মাধ্যেমে অতি সহজ ভাষায় ব্যক্ত করেছেন ‘ ‘আমাদের সেই নওয়াগ্রাম’ কবিতায়।
তিনি লিখেছেন, ‘ নওয়াগ্রাম আমাদের প্রিয় সেই নওয়াগ্রাম / যেখানে শৈশব কৈশর পেরিয়ে বড় হলাম। যার আলো হাওয়া গায়ে লাগিয়েছি মোরা সবাই / শরীরে সেই গ্রামের কাদার গন্ধ পাই। যে গ্রামের দোয়েল ঘুঘুর ডাক আজো কানে বাজে / যেখানে নববধুগণ ঘোমটা টেনে দিত লাজে। সেই নওয়াগ্রামে আজ পরিবর্তনের ছোয়া লেগেছে। কবিতার মাঝেই তার ইঙ্গিত মিলেছে, যেমন, বাল্যকালে দেখেছি রাতে গ্রাম হতো নিকষ কালো / বর্তমানে সারা রাত গ্রামে থাকে নিয়নের আলো।’ কবির স্মৃতি মন্থনে রচিত কবিতা ‘ কৈশরে আমি’ কবিতায় তিনি অবলীলায় সত্য কথা লিখেছন যা তার জীবনের কোন না কোন ঘটনার সঙ্গে মিল রয়েছে। যেমন, ‘কৈশরে আমি ভীষণ ডানপিটে ছিলাম / খেলার মাঠে গিয়ে মারপিট করতাম। গ্রামের দস্যি ছেলেরা আমাকে ওস্তাদ মানতো / বিনা বাক্যে মোর হুকুম তামিল করতো। চৈত্র ও বৈশাখ মাসের তপ্ত দুপুরে / দল বেধে সারা গ্রাম বেড়াতাম ঘুরে। কাঁচা আমকুচি লবন দিয়ে মাখাতাম / তার সাথে মরিচ গুঁড়া মিশিয়ে দিতাম, / সব বন্ধু মিলে খেতাম মজা করে / কখনো বকা খেতাম বাবার চোখে পড়ে। পদ্মা নদীতে দল বেধে নাইতাম / কয়েক ঘন্টা ধরে সাাঁতার কাটতাম, বাড়ি ফেরার পথে মোরা বাঙি তুলতাম, / দুতু মন্ডল দেখলে ভোঁ দৌড় দিতাম। ষাট বছরের ঐ বুড়ো দৌড়াতে পারতো / বাঙি খেকো কিশোরদের তাড়া করতো। সে দাবড়ানিতে দিকবিদিক ছুটতাম / কখনো দৌড়ে হয়রান হয়ে যেতাম। খেজুর গাছের আগায় আঠা লাগাতাম / কুলি পাখি আটকে গেলে মোরা ধরতাম। গুলি বাটুল নিয়ে সারা গ্রাম ঘুরতাম/ ঘুঘু পাখি দেখামাত্রই গুলি করতাম। মধুর স্মৃতি কবিতায় কবি লিখেছেন, ‘ আজো ভুলতে পারিনে যে তোমায় / দৈবাৎ তোমার কথা মনে হয়। কৈশরে যৌবনের স্মৃতিগুলি কখনো মন মাঝে উঠে উথলি। গ্রামের বকুল গাছটার কাছে / কত শত ঘটনা লুকিয়ে আছে। ভোরে বকুল ফুল কুড়িয়ে নিতে, তা দিয়ে মালা গেঁথে আমাকে দিতে। ‘স্মৃতিতে মতিহার’ কবিতায় তিনি লিখেছেন, রাজশাহীর মতিহার সবুজ চত্বর / সকল শ্রেণীর মানুষেরই কাড়ে যে নজর। মতিহারের সবুজ চত্বরে মোরা দুজনে / সকাল বিকাল আর সাঁঝে ঘুরেছি আনমনে। আন্দোলনে জোহা স্যার আত্মাহুতি দিয়েছে / তার সমাধি পাশে মোদের কতো সাঁঝ কেটেছে। একত্রে সিনেমা দেখার তুমি ধরতে বায়না / অলোকা হলে ছবি দেখার কথা ভুলা যায়না। পিছনে ফেলে শত সহস্রর স্মৃতির বহর / ছেড়ে এসেছি মতিহারের মায়াবী চত্বর। প্রকৃতি ও মানবিক আচার আচরণ নিয়ে তিনি এই বইতে বেশ কয়েকটি কবিতা যোগ করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, চৈত্রের খরতাপ, আষাঢ়ে বৃষ্টির দিনে, শিমুল ফুল, বর্ষণ মুখর দিনে, শাপলা ফুল, প্রেমের সরোবর, অবুঝ স্ত্রী, কুটিজান মেম্বর, হাবুল নামা, টাক বিপত্তি, নাম তার সবিতা, ভালো লাগে, যৌবনের প্রেয়সী, মা, অতীত, বট বৃক্ষের আত্মকথন, সাদা মেঘ, আষাঢ়ে মন চায়, কানা পুকুর, বিল গাজনা ইত্যাদি। বিল গাজনা কবিতায় তিনি লিখেছেন, সুজানগর উপজেলার মাঝেই বিল গাজনা / পূর্ব পশ্চিমে দশ মাইল ব্যাপি আছে যার সীমানা। পূর্ব দিকে রাণীনগর ইউনিয়নের অবস্থান, / পশ্চিমের দুলাইয়ের কয়েকটি গ্রাম বিরাজমান। উত্তরে দুটি ইউনিয়ন আহম্মদপুর ও দুলাই, / দক্ষিন দিকে মানিকহাট এবং হাটখালির ঠাঁই। প্রতি বছর বর্ষকালে বানের জলে বিল ভরে যেতো/ চারিধারসহ সারা বিলেই জলরাশি থৈ থৈ করতো। এখন গাজনার বিল সেই আগের মত আর নাই / আধুনিকতার ছোয়া পেয়ে বদলে গেছে অনেকটাই।
‘পদ্মা চরের মানুষেরা’ কবির একটি অনবদ্য কবিতা। চরাঞ্চলের মানুষেরা সদা-সর্বদাই অতি দুঃখ কষ্টের মাঝে দিনাতিপাত করে থাকে। তারই বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন তিনি তার এই কবিতায়। তিনি লিখেছেন, রাজশাহী থেকে কুষ্টিয়া আর পাবনা হয়ে / পদ্মা নদী নিজস্ব গতিতে চলছে বয়ে। যেতে পথে রাজবাড়ি ফরিদপুর গেছে ছুঁয়ে / অবশেষে মেঘনায় মিশেছে চাঁদপুর গিয়ে,/ মাদারীপুর মুন্সিগঞ্জেও দিয়েছে হানা / প্রবল স্রোতস্বিনী তা সবার জানা। এই নদীর বুকে আছে বহু বড় বড় চর, / যেথায় হাজার হাজার মানুষ বেঁধেছে ঘর। বিশাল চর গুলোতে বাস করে যে মানুষেরা / প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকে তারা। বর্ষকালে চর অঞ্চল জলে ডুবে যায়, / মানুষ ও গৃহপালিত পশুর দুর্ভোগ হয়। মানুষের চলা ফেরা বেশ বাধগ্রস্থ হয় / নৌকা ছাড়া সব চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কখনো অকাল বন্যায় চৈতালি নষ্ট হয়,/ যার ফলে লোকজন দারুন কষ্ট পোহায়। ঘূর্নি ঝড়ে সাইক্লোনে চরবাসী বিপদে পড়ে, / বাড়ি ঘর বিধ্বস্থ হয় ঐ প্রচন্ড ঝড়ে। আধুনিকতার ছোঁয়া পদ্মার চরে লাগেনি / তেমন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। কোন চর অঞ্চলেই বিদ্যুৎ সংযোগ নাই/ রাতে চরের লোকের আধারে কাটে সর্বদাই। কষ্ট সত্বেও বাসিন্দারা চর ছাড়েনা/ পদ্মার চরে বাস করে ভুলে সব বেদনা।
কবি আমিনুর রহমান খান ছিলেন ব্যাংকের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। ১৯৮০ সালে তিনি সরাসরি অফিসার হিসেবে অগ্রণী ব্যাংকে নিয়োগ পান। চাকরিরত অবস্থায় তিনি এমবিএ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। ২০১২ সালে উচ্চ পদস্থ কর্তকর্ত হিসেবে অবসরে যান। ‘অবসর জীবন’ কবিতায় সেই অভিজ্ঞতার কিছু অংশ তিনি তার কবিতায় ব্যক্ত করেছেন, চাকরিজীবি যেদিন অবসরে যায় / শুরু হয় জীবনের নতুন অধ্যায়,/ যাপিত জীবনের পরিবর্তন হয়, / তখন সে মুক্ত কারো অধীনে নয়। ত্যাগ করতে হয় বহুবিধ অভ্যাস, / প্রাণ ভরে নেয় সে মুক্ত নিশ্বাস। অনেকেই ব্যধিতে আক্রান্ত হয়/ কম সংখ্যক ব্যক্তি নিরোগ রয়। লাইনে দাঁড়িয়ে পেনশন তোলে/ কখনো বা বসে ক্লান্ত হলে / পেনশনের টাকা তোলার যন্ত্রণা / ভৃুক্তভোগী ছাড়া অন্য কেই বুঝেনা। অবসর জীবনটা তেমন সুখের নয় / চাকরিতে থাকলে যেমনটা হয়। কবি আমিনুর রহমান খান বর্তমানে পাবনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সিনসা পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক। উত্তর বাংলা সংস্কৃতি পরিষদ কেন্দ্রীয় কার্যালয়, পাবনার মহাপরিচালক। এনজিও ফোরামে পাবনার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম পাবনার জীবন সদস্য। তিনি একজন সাহিত্য কর্মী। রাজনীতির সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নেই। তিনি লিখেছেন ‘ ভেজাল রাজনীতি’ কবিতা। খাদ্যে ভেজাল মিশায় এ কথা জানে সবাই / ভেজাল ওষুধ আছে তাও জানা বাকি নাই/ মাছ ফল টাটকা রাখে দিয়ে ফরমালিন/ সব তেলে ভেজাল বাদ যায়না সোয়াবিন। ভেজাল রাজনীতি আছে জানতোনা কেউ/ এ কথা প্রচার করছে রাজনীতির ফেউ / নেতাকর্মী রাজনীতিকে করছে কলুষিত/দলবলে কখনো হয়না কুন্ঠিত। নীতি এবং আদর্শের কোন বালাই নাই/ নিজ স্বার্থে দলবদল করে সহসাই/ ভেজাল রাজনীতি করার চলছে মহড়া/ দলবদলে পাল্লা দিচ্ছে নেতাকর্মীরা। সকালে করছে একদল/ বিকালে অন্যটি,/ আগের দলের গালি দিতে করেনা ভ্রুকুটি/ ভেজাল রাজনীতিবিদ বাড়েেছ দিন দিন/ এই ভাবে চল্লে অবস্থা হবে সঙ্গীন।
আমিনুর রহমানের কবিতার বই “ সেই রমণী” প্রথম প্রকাশ বই মেলা-২০১৫। প্রকাশক রেহানা সুলতানা শিল্পী, মহিয়সী প্রকাশ, এল এমবি মার্কেট(২য় তলা), পাবনা। প্রচ্ছদ অরণ্য অনি, বর্ণবিন্যাস সীমান্ত সেতু। মুদ্রণে শিল্পনীল এ্যাড। বইটির মূল্য ১৫০ টাকা। পাওয় যাচ্ছে পাবনা বই মেলার আমেনা খাতুন স্মৃতি পাঠাগার, বুক প্যালেস, দিশারী বই বিতানসহ বিভিন্ন লাইব্রেরী ও বুক স্টলে। কবির আদরের নাতনী যুনাইয়া পারভীন জেফাকে বইটি উৎসর্গ করেছেন কবি আমিনুর রহমান খান। এই বইটিতে মোট ৪৮ টি কবিতা রয়েছে। বইয়ের নামকরণের কবিতা রয়েছে শেষের দিকে। তিনি সেই রমনী কবিতাটি এভাবে লিখেছেন, মিষ্টি হাসি মুখ সেই রমণী / সুধাময় তার চোখের চাহনী / হাসিতে যেন মুক্তা ঝরে / দাঁতগুলি খুব চিক চিক করে / পটল চেরা চোখে কামনা ভরা / টিকলো নাক মন পাগল করা/ রাঙা ঠোঁট দুটি চঞ্চুর মত / আননে হাসি লেগে থাকে সতত/ কপালে কাটা দাগ মনোহর /যা তাকে করেছে আরো সুন্দর। নিজ ব্যক্তিত্ব রেখে বজায় / সবার সাথে মিথে নির্দ্বিধায়/ প্রতিবাদি তবে বেহায়া নয় / সদা সজাগ থাকে চলা ফেরায় / আজকে সেই রমণীকে সুধাই / অন্তরে কেউ পেয়েছে কি ঠাঁই?
রবিউল ইসলাম শাহীন
পাবনা
সুখ-দুঃখ মানুষের জীবনের অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে থাকে। মানুষের সুখ-দুঃখ অনুভব বিচিত্র ধরণের। কেঊ নিজেকে চিরসুখি অথবা চিরদুখি মনে করেন । আছে কি কেউ চিরদুখি ? নাকি দুঃখের অপর পাতায় আছে সুখেরও স্বৃতি। চির দুখি যখন দুঃখ খুজে বেড়ায় তখনেই তার জীবনের পাতায় এসে যায় নুতন স্বপ্নের আলিঙ্গন । এই স্বপ্ন খুঁজার মাঝে একটি গল্প ওঠে আসে তারে একটি জীবনের গল্প আমি মহিব তুলে ধরছি।
জাহিদ হাসান, স্কুল জীবনের গন্ডি পেরিয়ে কলেজ জীবনে চলে এসেছে। তার ইন্টারমেডিয়েট এর দ্বিতীয় বর্ষের টেষ্ট পরীক্ষাও শেষ হয়েছে । আর কিছুদিন পরেই ফাইনাল পরীড়্গা। পরীক্ষার জন্যও প্রস্তুত। তো..কেন জানি জাহিদ হাসানের মনটা ভিষণ খারাপ । জাহিদের মা বললো, যা তোর নানা বাসা থেকে বেড়িয়ে আয়। মনটা ভালো হয়ে যাবে । মায়ের কথা মতো জাহিদ বাড়ি থেকে নানার বাসার উদ্দেশ্যে বেড় হল। বাসায় পৌঁছে নানীর সাথে দেখা করে কুশল বিনিময় করে ।
কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পর পরনত্ম বিকেলে বেড়িয়ে পড়ল ঘুরতে। নির্মল নীল আকাশ । আকাশের কোথাও কোথাও এলোমেলো অলসভাবে ছড়িয়ে আছে কিছু তুলট সাদা মেঘ । তখন জাহিদের ঘড়িতে বিকেল চারটা । মেঠপথে একা একা হাটছিল। এমন সময় একটা ভ্যান গাড়ি তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। ওই ভ্যানে উঠে বসলো জাহিদ। কিছুদুর এগোতে না এগোতেই ভ্যানটি থামল । এসময় জাহিদের চোখে পড়ল একটি মেয়ে। ওই মেয়েটিও একই ভ্যানে উঠে বসলো। জাহিদ মেয়েটিকে একবার তাকিয়ে দেখলেও আর কখনো তাকাল না । মেঠোপথের ভাঙ্গা রাসত্মা। তাই ভ্যানটি ধীরগতিতে যাচ্ছিল। এমন সময় মেয়েটা ভ্যানের চালককে বলে একটু জোরে চালান । ভ্যানের চালক ভ্যানের গতি বাড়িয়ে দেয় । জাহিদ ভ্যানে আর ঠিকমত থাকতে পারছিলো না। কারণ প্রথমবার ভ্যানে ওঠেছে সে । তাই জাহিদ চালককে একটু সেস্নাভাবে চালাতে বলে । তখন ভ্যানের চালক গতি কমিয়ে দেয় ।
অচেনা অজানা মেয়েটা বলে আমার কোচিংয়ে পরীক্ষা আছে। আমাকে তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে হবে । জাহিদ তখন বলে আমি প্রথম ভ্যানে ওঠছি একটূ আসেত্ম যাক । কিন্তু মেয়েটা বলে ভ্যানে চরতে পারেন না, তবে ওঠছেন কেন ? জাহিদ বলে শখে ওঠছি । এরপর জাহিদ মেয়েটির উদ্দেশ্যে বলে একটু আসেত্ম চালাক । মেয়েটা জাহিদের কথা কিছুতেই মানছে না । মেয়েটি বলে আপনি ভ্যান থেকে নেমে যান । জাহিদ বলে কেন নামবো ? মেয়েটি বলে থাকতে পাড়েন না তাই । কথা বলতে বলতে কোচিং সেন্টারের সামনে এসে মেয়েটি নামিয়ে পড়ল। তাই আর কথা হল না। সামনে একটি বাজার। ওই বাজারে নামিয়ে পড়ল জাহিদ। সন্ধ্যা ঘনিয়ে । জাহিদ রাতে নানা বাড়ি খাবার খেয়ে শুয়ে পরলো ।তখনেই পরনত্ম বিকেলের খন্ডচিত্র মনের মাঝে নাড়া দিতে লাগল তার । ভাবতে ভাবতে রাত কেটে যায় জাহিদের। পরদিন জাহিদ নানা বাড়ি থেকে বের হয়ে দেখে সেই অচেনা অজানা মেয়েটি তার সামন দিয়ে ব্যাগ ঘাড়ে করে স্কুলে যাচ্ছে । জাহিদের নানা বাড়ির পাশ্বের মমিন । স্কুল ছুটিরপর মমিনকে মেয়েটিকে দেখায় জাহিদ। মমিনও মেয়েটাকে মাঝে মাঝে দেখে কিন্তু ওর নাম জানে না । সেই দিন বিকেল বেলায় জাহিদ মমিনকে বলে মেয়েটার সাথে আমার বন্ধুত্ব করা লাগবে । কিছু একটা করে দে ভাই । তখন মমিন ওর বন্ধু কৃষ্ণকে বলে । কৃষ্ণ মেয়েটার নাম ঠিকানা মমিন কে বলে । মমিন জাহিদকে পরদিন বলে । জাহিদের পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে আসছে । তাই জাহিদ নানা বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল তার বাড়িতে ।
জাহিদ বাড়িতে এসে বার বার মেয়েটির কথা মনে পরতে লাগল । পড়ার টেবিলে গেলে অজানা আচেনা সেই মুখটা ভেসে ওঠে তার চোখে । দিন দিন মেয়েটির প্রতি দর্বল হতে লাগল । এর মধ্যে পরীক্ষা সন্নিকটে চলে আসল । জাহিদ এর মাঝে মেয়েটিকে দেখার জন্য প্রতিদিন বাইক নিয়ে মেয়েটির কোচিংয়ের সামনে যায় । জাহিদ বন্ধু মমিনকে নিয়ে মেয়েটির বাড়ির আশে-পাশে ঘোড়াফেরা করে । জাহিদের পরীক্ষা চলছে । তবুও মেয়েটির কথা মাথা থেকে সড়াতে পারছেনা । এভাবে পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল । জাহিদ নানা বাড়ি যাবে মনস্থির করলো । তবে জাহিদ নানা বাড়িতে গেল কিন্তু মেয়েটিকে দেখতে পেলো না । জানতে পারল সে ওর মামা বাড়ি বেড়াত্ গেছে । জাহিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাড়ি ফিরে চলে আসল । জাহিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কোচিং করার জন্য তাকে ঢাকা যেতে হবে । কিন্তু মেয়েটির জন্য মনটা কোথাও যেতে চাচ্ছিল না । বাড়ি থেকে বাবা খুব চাপ দিতে শুরম্ন করল জাহিদকে । অবশেষে যেতে রাজি হল । বাড়ি থেকে ঠিক বের হল কিন্তু ঢাকা না গিয়ে সেই মেয়েটির কোচিংয়ের পাশে বাসা ভাড়া করে থাকতে শুরম্ন করল ।
এভাবে জাহিদ তার জীবনের সেই মেয়েটিকে খুজে পাওয়ার জন্য বার বার চেষ্টা করছে কিন্তু একপর্যায়ে নষ্ট হতে শুরম্ন করল । মেয়েটির প্রেমিক আছে যেনে জাহিদ নিজেকে নিসতেজ করে দেয়ার চেষ্টা করে । তো.. ভালো থেকে খারাপ সঙ্গে পরে যায় । আনন্দ ড্রাগ নেওয়া শুরম্ন করে । এভাবে চলে যায় ২ টি মাস । প্রায় তিন মাস পর জাহিদ তার নানা বাড়িতে ফিরে এল । এসেই মেয়েটির খোজ নিল । মেয়েটিকে কিছু বলার চেষ্টা করল কিন্তু পারল না। হঠাত একদিন মেয়েটিকে তার সামনে দেখতে পায় । তখনেই সেই অজানা অচেনা সেই মেয়েটি তার স্বপ্নের নায়িকা মনের মানুষটিকে বলে আপু আপনার সাথে কিছু কথা বলতাম । কিন্তু মেয়েটি তাকে বলে জি ভাইয়া আমার সময় নাই । সেই মেয়েটি তার বন্ধুদের গিয়ে এই কথাটি বললে । সেই অজানা মেয়েটির বন্ধুরা জাহিদকে অনেক কটুক্তিক ভাষায় কথা বলে এবং শেষ পর্যনত্ম জাহিদের সাথে মারামারি হয় । তবুও জাহিদের ভালোবাসা কমেনি এতটুকু । জাহিদ তার ভালোবাসার মানুষটিকে আপন করে পাওয়ার জন্য সবকিছু করছে। এভাবে কেটে গেল জাহিদদের জীবেনের প্রায় ছয়টি মাস । সেই অচেনা মেয়েটিকে ভালোবাসার কথা জানাতে মেয়েটির বন্ধু শুভনকে ব্যাবহার করলো । তখন শুভন বলে যে জোনাকি অন্যে একজনের সাথে প্রেম করে । এই কথাটা জাহিদ কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না । শুভনকে টাকা দিয়ে বলে যে, জোনাকি কোথায় কোথায় যায় সব খবর দিবা । শুভন বলে যে ঠিক আছে । এভাবে জাহিদের জোনাকির প্রতি ভালোবাসা বেড়ে চলছিল । কেটে গেল আটটি মাস । এর মাঝে জাহিদের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়ছে ।
জোনাকির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা শুরু । জোনাকিকে দেখার জন্য প্রতিদিন পরীক্ষা সেন্টারের সামনে থাকে জাহিদ। একদিন শুনতে পেল জোনাকি আর তার বাড়িতে থাকে না । তাকে বড় একটা শহরে ভালো একটা স্কুলে ভর্তি করানো হয়ছে । জাহিদ আর জোনাকিকে দেখতে পায়না । জোনাকির বন্ধু শুভনের সাথে জাহিদ একদিন দেখা করে জানতে চায় জোনাকি কোন জায়গা থাকে । শুভনও ঠিকমত বলতে পারে না । শুভন জাহিদকে বলে ভাইয়া আমি আপনাকে ঠিকানা নিয়ে দেব । প্রায় দুই মাস পরে জাহিদের সাথে শুভনের দেখা হয় । শুভন তখন জোনাকির মায়ের মোবাইল নম্বর দেয় । জাহিদ জোনাকির মায়ের মোবাইলে ফোন দিলো কিন্তু জাহিদ কথা বলার সাহস পায়না ।
এভাবে কেটে যায় প্রায় এক বছর দুই মাস কিন্তু মেয়েটির সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারে না । একদিন আনন্দ জোনাকির মায়ের ফোনে কল করলে, রিসিভ করেনা, এর কিছুক্ষণ পর জোনাকি অন্য একটা ফোন থেকে কল করলে জাহিদ বুঝতে পাড়ে । তখন জোনাকি বলে আমার বান্ধবী মনে করে ফোন দিছি ভাইয়া । জাহিদ জোনাকির ফোন নম্বরটা ফোনে সেভ করেনি। মাঝে মাঝে জাহিদ ফোন দেয় জোনাকিকে । কথাও চলে তাদের অনেক । এক সময় অন্য নামে জোনাকির বন্ধু বলে জাহিদ আর জোনাকির কথা প্রায় অনেক দিন চলে । জাহিদ জোনাকিকে বলে যদি তোমার কখনো কোন সম্যসা হয় আমাকে বলবে । এভাবে কেটে গেল আর একটি মাস । হঠাৎ সন্ধ্যা বেলায় জোনাকি জাহিদের কাছে ফোন দিয়ে বলছে ভাই আমার খুব বিপদ আপনি একটু আসেন । জাহিদ সেই সময় বাহিরে ছিল । বন্ধুদেরকে জোনাকির কাছে পাঠায় । এবং বন্ধুরা জোনাকিকে তার বাসায় পৌঁছে দেই ।
এরপর জাহিদের সাথে জোনাকির সাথে কথা হয় । আনন্দ জোনাকির সাথে দেখা করতে চায় । জোনাকি রাজী হয়ে যায় । স্বাধীনতার মাস। ২৬ মার্চ জোনাকি আর জাহিদের দেখা হয় । জোনাকি জাহিদকে দেখে চিনতে পারে । কছু সময় কথা বলে জোনাকি চলে যায় । পরদিন জোনাকিকে সব কথা খুলে বলে জাহিদ। অর্থাৎ তার প্রেমের কথা বলে কিন্তু জোনাকি তা মেনে নিতে চায়না । জোনাকি একটা কথাই শুধু বলে আমি একজনকে ভালোবাসি । আমার পক্ষে অসম্ভব । জাহিদ অনেক বূঝানোর চেষ্টা করে জোনাকিকে তাতেও কোন লাভ হয় না । কিন্তু এই ঘটনাটি তার বান্ধবীকে খুলে বলে । বান্ধবীর নাম তনু । তনু কিন্তু জাহিদকে বলে আমি তোর বড় বোন সেভাবে আমি কথা বলব । তনু জোনাকির কাছে প্রায় সপ্তাহ খানেক কথা বলার পর মেয়েটি কিন্তু জাহিদের সাথে কথা বলে। জাহিদও অনেক বুঝায় জোনাকিকে। এরপর এপ্রিল মাসের চার তারিখে আনন্দ ও জোনাকির ভালোবাসার রম্নপ নেয় । অবশেষে জাহিদ খুজে পেল জোনাকিকে ।
মহিব আল হাসান মিলন
গাইবান্ধা
পাহাড়ী প্রকৃতির অপরুপ নৈসর্গের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যের ডানায় নতুন পালক যোগ করেছে শাটল ট্রেন।এই শাটল ট্রেন আমাদের গৌরবের,ভালোলাগা ও ভালোবাসার।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা শেষ করে চলে যাওয়া শিক্ষার্থীদের সর্বপ্রথম যে স্মৃতি তাড়া করে ফেরে তা হচ্ছে এই শাটল।বিশ্বের মাত্র দুটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যাদের নিজস্ব ট্রেন ব্যবস্থা আছে-একটি হলো যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো ইউনিভার্সিটি আর দ্বিতীয়টি হলো বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।কিছুদিন আগে সানফ্রান্সিসকো বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শাটল ট্রেন সার্ভিস বন্ধ করে দেয়।তাই বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এককভাবে এর দাবিদার।শাটল ট্রেনকে বলা হয় -চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণভোমরা।চবির সম্পদ হিসাবে ধরা হয় এই শাটল ট্রেনকে। শিক্ষার্থীদের মাঝে একটি মুখ রোচক কথা প্রচলিত আছে, ‘চবিতে পড়বেন আর শাটলে চড়বেন না তা কি হয়!’
হুড়োহুড়ি করে উঠতে হয় শাটল ট্রেনে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের এমন দৃশ্য প্রতিদিনই চোখে পড়ে। শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত দুটি ট্রেন নিয়মিত চলাচল করে। শাটল ট্রেনকে ঘিরেই রচিত হয় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যতসব আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্নার কথকতা। ট্রেনে বসে ছাত্রছাত্রীদের কুশল বিনিময়, পড়াশোনার আদ্যোপান্ত সবই চুকিয়ে নেয়া হয়। অনেকে এই শাটল ট্রেন দুটিকে চলন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বলে থাকেন।সাংস্কৃতিক যত কর্মকাণ্ড ট্রেনেই চূড়ান্ত হয়,এ যেন অন্য এক পরিবেশ। ট্রেনে উঠলে মনে হয় শাটল ট্রেনটি একটি মঞ্চ। আর এই মঞ্চের শিল্পী এক একজন শিক্ষার্থী।
১৯৮১ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের নিকট নিত্যসঙ্গী হিসেবে চির পরিচিতি পায় শাটল ট্রেন। প্রতিদিন সকালে শাটল ট্রেনের হুইসেলের শব্দে জেগে উঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, শুরু হয় বিরামহীন ব্যস্ততার পালা। ২২কিলোমিটার দূরত্বের ক্যাম্পাসে পৌছাতে শাটলে সময় যায় ঘন্টার উপরে। তবু শাটলে বিরক্ত হয়েছেন এমটি শোনা যায়নি কখনো।
মূলত শাটল ট্রেনের মাধ্যমেই গড়ে উঠে চবি’র শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের ভিত। প্রতিদিন শাটল ট্রেনে করে ক্যাম্পাসে আসা যাওয়ার পথে গানে গানে মাতিয়ে রাখে প্রতিটি বগির সুর- বেসুরা শিল্পীরা, মেতে থাকে শিক্ষার্থীরা। সময়ের জনপ্রিয় ও কালোত্তীর্ণ গানের চর্চার সাথে সাথে বিভিন্ন গানের প্যারোডিতেও দক্ষ শাটল ট্রেনের হেড়ে গলার শিল্পীরা। প্রতিটি বগিতে গান গেয়ে মাতিয়ে রাখার জন্য রয়েছে শাটল ট্রেনের বগি ভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপ,নামগুলোও বেশ আকর্ষণীয়।বগির ভিতরের দুই প্রান্তে দলবেধে গান করে গ্রুপের সদস্যরা। গানের তালে তালে সবাই নিমিষেই পৌছে যায় গন্তব্যে। সকালে গানে গানে সতেজ হয়ে শুরু হয় ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস আর বিকালে কর্মক্লান্ত দেহে বাসায় ফিরার সময়ও শিক্ষার্থীদের উজ্জীবিত করে তুলে শাটল ট্রেনের গানের সুর। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের হৃদয়ের সাথে মিশে যাওয়া রঙ্গীন শাটল মাঝে মাঝে বিস্মৃতি বা দুঃসংবাদ এর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ইতিহাসে যে কয়েকটি হত্যাকান্ড ও ছাত্র মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে এর উল্লেখযোগ্যই ঘটেছে শাটল ট্রেনকে কেন্দ্র করে। ২০০৬ সালে ট্রেনে উঠতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে ট্রেনের চাকার নিচে পড়ে প্রান হারান বাংলা বিভাগের ছাত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। তার পর ২০০৮ সালে ষোলশহর রেলস্টেশনে শাটল ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরন করেন একাউন্টিং বিভাগের এক ছাত্র।পরবর্তীতে বিচ্ছিন্নভাবে একাধিক হত্যাকান্ড নিহত হন- রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র মহিউদ্দিন মাসুম,মার্কেটিং তৃতীয় বর্ষের ছাত্র হারুনুর রশীদ কায়সার,একাউন্টিং দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আসাদুজ্জামান।একসময় শাটল ট্রেন হয়ে পড়েছিল এক আতংকের নাম। রাতে ট্রেনে করে যাতায়াত নিরাপত্তাহীনতায় ভোগত শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় শাটল ট্রেনে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চবি কর্তৃপক্ষ ট্রেনের ইঞ্জিন ও বগিতে পুলিশের প্রহরার ব্যবস্থা করে। ভাবতেই অবাক লাগে একমাত্র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বিশ্বের আর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটল ট্রেন নাই । এই ট্রেনের জন্য আমরা গর্ব করি। কিন্তু আমাদের গর্বের শাটল আজ রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে।বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়ার সহজ উপায় হল ট্রেন বন্ধ করে দেয়া। সেই সাথে স্থবির হয়ে যায় ২২ হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থীর স্বপ্নের পথচলা। সেশন জটে জর্জরিত হাজারো ছাত্র জীবন।যেখানে অন্য সকল বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। কত অনাদরে, অবহেলায় দিন কাটছে শাটলের কেউ খবর রাখেনা।যে শাটলকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক ইতিহাস রচিত, সে শাটলের ভাল মন্দ খোঁজ কেউ রাখেনা, সবাই শুধু শাটলকে ব্যবহারে ব্যস্ত।।কিছুদিন আগে জিআই (গ্যালভানাইজড আয়রন) তার দিয়ে বগি জোড়া লাগিয়ে চালানো হয়েছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাটল ট্রেন। এক বগির সাথে অন্য বগির সংযোগ হুকটি ঢিলা হয়ে যাওয়ায় জিআই তার দিয়ে জোড়া দেয়া হয়েছিল। এর ফলে যেকোন সময় জিআই তার খুলে গিয়ে ঘটতে পারত ভয়াবহ দুর্ঘটনা। বুকভরা দুঃখ নিয়ে বলতে হয়,গত কিছুদিন ধরে শাটল পার করছে ক্রান্তিকালের সবচেয়ে দুঃসময়।শাটলট্রেনের বগি ৯ টি থেকে কমিয়ে ৫ টি করা হয়েছে।লজ্জার বিষয় ট্রেনে যোগ করা হয়েছে মালবাহী বগি।তীব্র গরমের মধ্যে স্টুডেন্টগুলা প্রচণ্ড কষ্ট করে যাতায়াত করছে।সাংস্কৃতিক প্রচন্ড বগিগুলো ছাত্রছাত্রীদের ভীড়ের কারণে অনেকটাই নিরব হয়ে পড়ছে,মনে হচ্ছে গান গাওয়ার চেয়ে সিট ধরাটাই এখন বেশী গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অজানা কারণে সব কিছু থেকেও কেন যেন অসহায় এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।শাটলের দুর্ভোগ কমিয়ে আবারো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হাজার হাজার মেধাবীদের চোখ প্রশাসনের দিকে।”প্রশাসন চাইলেই পারবে” সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের কর্মীদেরও একই কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সুখ দুঃখের সাথী এই শাটল। চিল্লাচিল্লি,একজন আরেকজনকে ধাক্কা দিয়ে সিট ধরার এই শাটল।প্রেমিক যুগলের কাছে এই ঘন্টা যেন চরম চাওয়ার, পরম পাওয়া। মান অভিমান আর রোমাঞ্চিত হওয়ার এক অনন্য নাম শাটল। কার্ড খেলায় ট্টাম আর ওভার ট্রামে ব্যস্ত শিক্ষার্থীদের কাছে শাটল যেন সড়াই খানা।জানালার পাশে বসে বাতাস খাওয়ার শাটল, জানালার বাইরে তাকিয়ে সবুজ আর নীল দেখার শাটল।কত জনের কত যে স্মৃতি জড়িয়ে এ শাটলের সাথে বলে শেষ করা যাবেনা। এত ঐতিহ্য, এত সুনামের ভার বইতে বইতে শাটল মনে হয় আজ বড়ই ক্লান্ত।
তুমি দোলনায় দুলছ,
আর পুড়ছে মানুষ!
তুমি চায়ে চুমুক দিচ্ছ,
আর পুড়ছে মানুষ!
তুমি পত্রিকায় পড়,
পুড়ছে মানুষ,
তুমি টিভিতে দেখো,
পুড়ছে মানুষ!
তোমায় প্রত্যক্ষ করতে হয়,
দগ্ধ মানুষের যন্ত্রণা!
তুমি খাচ্ছ, পড়ছ,দিব্যি ঘুমচ্ছ,
অথচ পুড়ছে মানুষ!
তুমি স্ত্রী সহবাসে মগ্ন,
অথচ পুড়ছে মানুষ!
তুমি সন্তান নিয়ে শিশু পার্কে,
অথচ পুড়ছে শিশু,
তুমি বোনের জন্য কেন আলতা,
অথচ পুড়ছে নারী!
তুমি বাবার জন্যে কেন চশমা,
ছেলে হারিয়ে কেঁদে-কেঁদে চোখে ঝাপসা দেখে অন্যের বাবা!
তুমি মায়ের জন্য কেন শীত বস্ত্র,
সন্তান হারিয়ে মাঘের শীতে মাটিতে গড়িয়ে কাঁদে অন্যের মা!
তুমি কবিতার শব্দ খোঁজ,
অথচ পুড়ছে মানুষ,
তুমি গানের সুর মেলাও,
অথচ পুড়ছে মানুষ!
তোমার দখিনা হাওয়ায়,
মানুষের পোড়া মাংসের গন্ধ!
তোমার দৃষ্টি সীমা স্থির,
লাশের স্তূপের ভেতর,
তোমার শ্রাব্য সীমার-সীমানা হয়েছে,
দগ্ধ মানুষের আর্ত চিৎকারে!
তুমি গণতন্ত্র-মানবাধিকারের বক্তৃতা দাও,
অথচ পুড়ছে মানুষ!
তুমি বই মেলায় খুঁজছ বই,
অথচ পুড়ছে মানুষ!
তুমি তর্কে-তর্কে কাপে-কাপে চা ফুরালে,
প্যাকেট-প্যাকেট সিগারেট ফুরালে,
অথচ পুড়ছে মানুষ!
তুমি হরতাল অবরোধে গৃহবন্দি দশা ছাড়াতে,
ইউটিউব, ফেসবুকে ব্যাস্ত!
অথচ পুড়ছে মানুষ!
তুমি লাইক দাও,
পুড়ছে মানুষ!
তুমি কমেন্টস কর,
পুড়ছে মানুষ!
তুমি শেয়ার কর,
পুড়ছে মানুষ!
তুমি প্রেমিকার সাথে তিন তারা রেস্তোরায়,
অথচ পুড়ছে মানুষ!
তুমি আড্ডায়, গানে রাত কর পার,
অথচ পুড়ছে মানুষ!
তোমার ডানে-বামে, উপরে-নিচে,
দেখা না দেখায়, জানা-অজানায়,
দূরে-নিকটে, চেনা-অচেনা মানুষ পুড়ছে,
পুড়ছে স্বপ্ন,
পুড়ছে বুক,
পুড়ছে আদর-সোহাগ,
পুড়ছে প্রেম-ভালবাসা,
পুড়ছে বিবেক,
পুড়ছে সম্পর্ক
পুড়ছে সময়,
পুড়ছে গণতন্ত্র-মানবাধিকার,
পুড়ছে গোটা রাষ্ট্রযন্ত্র,
কি অদ্ভুদ, তবুও তুমি দিব্যি স্বাভাবিক!
হে আপামর মেহনতি জনতা,
মৃত্যু ভয় জয় করে-
তুমি-তুমি তোমরা, এসো বিদ্রোহ করি!
এসো বিদ্রোহ করি,
কেন পুড়ছে মানুষ!
এ পথ কোন কালেই শেষ হবার নয়!
পথে বাঘ সাপ দলছুট পেঁচার ভয়।
প্রহরী বেসে মাকড়-শাহ্ জাল বুনে-
সাধনায় সাধক ভক্ত প্রহর গুনে।
ভীমরুল তুলে গুন গুন দোতারায় তাল,
কানা- মাছি ছিদ্র করে দেবতার গাল।
ভয়ে মহাদেব পালায় ছুটে!
নেশার সুরায় অসুর জুটে!!
গনতন্ত্রের নীতি কথা বানরের মুখে-
সভ্যতার পচা গন্ধ দ্বাবিংশের বুকে।।
আসনে বসা, হুনুমান রাজা-
ল্যাং মেরে ভাঙে প্রজার মাজা।
খেটে খাওয়া গরুর গলে কোরবানীর ছুরি,
বীর্জহীন সিংহের হাতে হরিনীর চুরি।
শেয়াল আটে দেশ গ্রাস করার ফন্দি!
বানরের হাতে সমস্থ রাজত্য বন্দী।
চারিদিকে চলছে দুর্নীতি জলাতঙ্ক!
পরিনতিতে গনতন্ত্র গরু তন্ত্রের আতঙ্ক।।
আমি লিখছি-
আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে;
একটি আজম্ম স্বাধীকার প্রতিষ্ঠায়
সবটুকু ভারবাসার আলিঙ্গনে।
আমি লিখছি-
সত্য প্রতিষ্ঠায়- একটি সংগ্রামী চেতনায়
স্ব-স্বস্ত্বায় জাতীয় চেতনা নিয়ে,
জেগে উঠতে চাই; আমি-
গৌরবে নির্ভিক বীরের মত
নিষ্কলঙ্কে।
আমি লিখছি-
কিছু জানাবো বলে,
মা-মাটি গন্ধ স্পর্শে গাঁথা কিছু স্মৃতির
অভিব্যক্তি।
নির্ভয়ে নির্ভিক উচ্চারণে যে বীর
ডেকেছে ঘর হতে বাহিরে,
আমি শ্রদ্ধা জানাই তাকেঁ:
হাজার বছরের শেষ্ঠ বাঙালী
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের।
আমি লিখছি-
কিছু লিখবো বলে
শেষ ইচ্ছা টুকু জানাতে।
সত্য ন্যায়ের নির্ভিক রথে
২৬ মার্চের চেতনায়
অনলাইন প্রকাশনার ঊষার আলোয়
জেগে উঠি আবারো পারবো বলে,
একটি জয়ের জন্য;
সত্য, সুন্দর, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের প্রত্যাশায়
আমার প্রাণের প্রকাশনা তুমি,
আওয়ার নিউজ বিডি।
কবিঃ উপদেষ্টা, আওয়ার নিউজ বিডি ডট কম।
তিমির রাত্রি ভীতি বিহ্বল ঘনঘোর অমানিশা
রক্ত সাগর পারায়ে পথিক পেয়ে গেছে তার দিশা।
এবার মুক্ত বিহংগ তার পাখা মেলে নির্ভয়ে
এদেশ মুক্ত লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে।
প্রাণের চেয়েও পরমাত্মীয় আমার বাংলাদেশ
এই মাটি এই দেশ হতে আজ শত্রুরা নি:শেষ।
কত হার্মাদ লুটেরা বর্গি হানাদার হায়েনারা
রক্ত শুষেছে এই বাংলার হয়েছি সর্বহারা।
মুজিবুর রহমান–
তোমাকে জানাই লাখো শুকরিয়া শ্রদ্ধা ও সম্মান।
গ্রহ থেকে গ্রহে ছুটে গেলে তুমি উল্কার মতো বীর
এ কোন্ মন্ত্রে জেগে ওঠে ঢেউ শান্ত জান্হবীর।
মহা সিন্ধুর হুংকার সেতো তোমার কন্ঠে রাজে
তোমার মন্দ্র-কন্ঠ-নিনাদ অশনি হয়ে যে বাজে।
আমরা দেখেছি জনতা সাগরে উত্তাল ঢেউ জাগে
আমরা দেখেছি মিছিলে মিছিলে তারই তরংগ লাগে।
আমরা দেখেছি পদ্মা মেঘনা যমুনার কুলে কুলে
লাখো মানুষের মুক্ত প্রাণের ঢেউ ওঠে দুলে দুলে।
মুজিবুর মুজিবুর–
প্রতিশোধ নেবো আমরা তোমার অপঘাতে মৃত্যুর !
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু রেস কোর্সের ময়দানে
স্বাধীনতার ডাক যে দিলেন ৭ ই মার্চের ভাষনে।
বজ্রকন্ঠে ঘোষনা দিলেন এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম
স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন এবারের সংগ্রাম ‘হলো’ মুক্তির সংগ্রাম
রক্ত যখন দিয়েছি মোরা রক্ত আরও দিব
সবাই মিলে দেশকে এবার মুক্ত করেই ছাড়ব।
শেখ মুজিবর রহমান বন্দি রইল পাকিস্তানের ভয়াল জেলে
ন’মাস ধরে লড়াই করে বাংলা মায়ের দামাল ছেলে।
নাইকো গোলা নাইকো বারুদ নাইকো পেটে ভাত
লড়াই করে মাটির মায়ায় শুধুই দিবা রাত।
যাবার বেলায় ‘মা’ বলেছেন খবর দিয়ো সুযোগ বুঝে
কেমন থাকো কোথায় আছো গোপন অতি গোপন খুঁজে।
বাপ বলেছেন মানিক আমার সুপে দিলাম তাঁরই হাতে
যার দয়াতে জয় পরাজয় সন্দেহ নাই কোনই তাতে।
বোন বলেছে, দাদা তুমি কোথায় যাবে মোদের ফেলে
সুযোগে পেলেই দেখা দিয়ো, আঁধার রাতি গভীর হলে
খবর নিয়ো দাদা তুমি মোদের প্রতি বারে বারে
আমরা আবার কেমন থাকি পাক সেনাদের অত্যাচারে।
এমনি করেই সারা দেশে তুমুল বেগে লড়াই চলে
বাংলা মায়ের বীর ছেলেরা হানাদারদের তাড়িয়ে চলে
আমেরিকান চীন জাপানী বিশ্ব বিবেক নীরব র‘ল’
গণ হত্যা বন্ধ “ পদগন্নিই মুখ খুলিল”
আমেরিকান নৌবহরে ভয় পেল না বীর সেনারা,
ঠাঁই পেল না এই মাটিতে নিঃস্ব দেলে ফিরল তাঁরা
লাখের মতন পাক সেনারা অস্ত্র ফেলে দাঁড়িয়ে র‘ল’
এমনি করেই ডিসেম্বরে বাংলাদেশের জন্ম হলো।
বাংলাদেশের মাটি কারো অনুকুলে থাকে নাই
মাটির মায়াই কাজ করেছে সন্দেহ ভাই তাতে নাই।
মুক্তিযোদ্ধা ভাই-বোনেরা তোমরা মহান, জাতির ঢাঁল
জাতির কোলে অমর হয়ে থাকবে চিরকাল।
আসুন মোরা সবে মিলে গুজব কথা শুনব না
যার অছিলায় স্বাধীনতা তাকে মোরা ভুলব না।
তখন ভার্সিটির দ্বিতীয় কি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। পড়াশুনার নাম করে প্রায়ই এক বন্ধুর বাড়িতে আড্ডা দিতে যাওয়া হতো। পড়াশোনা যে কখনোই হতো না তা না; তবে আড্ডা, মুভি দেখা এগুলোর হারই ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি। বন্ধু-বান্ধবদের আড্ডায় যেমনটা হয়; হেন বিষয় নেই যা নিয়ে আলোচনা হয় না। এসব হেন-তেন-যেন বিষয়ের মধ্যে স্রষ্টা আর ডেভিলও অন্যতম উপাদেয় বিষয়। প্রায়ই আমাদের মজলিসে অন্যতম বিষয় ছিল স্রষ্টা আর ডেভিল নিয়ে আলোচনা। আমাদের এক বড় ভাই ছিলেন, যিনি যেকোনো বিষয়ে আড্ডা জমাতে ছিলেন ওস্তাদ। তার কাছে এ ধরনের বিষয় ছিল অত্যন্ত সুরুচিকর। ভিন্ন ভার্সিটিতে পড়া আরেক সমবয়সী বন্ধু ছিল; তারও এসব বিষয়ে—বিশেষ করে স্যাটানিক বিষয়ে—আগ্রহ ছিল প্রচুর। প্রথাগত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় ছোটবেলা থেকেই ইসলাম বলতে ঠিকমতো ক়ুর’আন পড়া, নামাজ-রোজা এগুলোই জানতাম। স্রষ্টা আছে কি নেই, থাকলেও এই দুনিয়ার সাথে তাঁর কোনো সংশ্লেষ আছে কি না সেগুলো নিয়ে ভাবার চিন্তাও মাথায় আসেনি কখনো। নামাজ পড়তাম মাঝে মাঝে। ভার্সিটিতে ওঠার পর থেকে শুক্রুবারের জুমু‘আও বাদ যেতে শুরু করে; বাকিগুলোর কথা আর নাই-বা বলি। রোজাটা লজ্জায় পড়ে রাখতে হতো—। লোকে কী বলবে! বিখ্যাত সেই আড্ডা-কাম-রাত্রিযাপনগুলোর সুবাদে স্রষ্টার অস্তিত্ব-অনস্তিত্বসহ এ ধরনের আরও মনোহর বিষয়গুলো তখনই প্রথম ভাবনার পর্দায় আঘাত হানে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যেহেতু ইতিমধ্যেই ইসলামের ন্যূনতম আবশ্যিক কাজ নামাজটাই অনিয়মিত—প্রায় নাই—হয়ে পড়েছিল, তাই স্রষ্টা নিয়ে সংশয় প্রথম যখন শুনি তখন ভালোই লাগছিল। এমনিতেই নামাজ পড়ি না, তার উপর এখন যদি স্রষ্টাই না-থাকে তাহলে তো বাঁচা গেল—পাপবোধটাও আর থাকবে না। যেভাবে সংশয়ের শুরু বড় ভাই মারফত জানতে পারি, স্রষ্টা সর্বত্র বিরাজমান। তাহলে স্রষ্টা কি ঐ নর্দমার মাঝেও বিরাজমান? নাহ! সেটা কী করে হয়? অথচ আমরা সবাই জানি স্রষ্টার উপস্থিতি সর্বত্র। অতএব স্রষ্টা বলে কিছু নেই। যুক্তিটা আরজ আলী মাতুব্বরের। (সঠিক কথা হচ্ছে, স্রষ্টা মোটেও সর্বত্র বিরাজমান নন। কিন্তু তিনি তাঁর জ্ঞানের মাধ্যমে সবকিছু জানেন, শোনেন—সে এক ভিন্ন আলোচনা।) সম্ভবত বাঙালি পাড়ায় প্রায় অধিকাংশেরই নাস্তিকতার হাতেখড়ি আরজ আলীর মাধ্যমে। যেদিন প্রথম এই ‘মনীষী’র নাম শুনেছিলাম তার পর দিনই অন্তর্জাল ফুঁড়ে বার করলাম আরজ আলী সমগ্র। খুব যে পড়েছি তা না, তবে যতটুকু পড়েছি—আর ব্লগে নাস্তিক-সংশয়বাদীদের নিজেদের কূটস্বার্থে ইসলামবিরোধী লেখালেখি পড়ে ইসলাম সম্পর্কে শেষ যে-সলতেটুকু জ্বলছিল সেটাও নিভে গেল। আমি তখন নাস্তিক না হলেও সংশয়বাদী। ব্লগে যেসব হ়াদীস় আর কুর’আনের আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে ইসলামের নিকুচি করা হতো মাঝে মাঝে আমি সেগুলোর উত্তর খুঁজতাম। লেখাবাহুল্য, তখন ফেসবুকে কি অন্তর্জালে এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো মানুষদের সাথে আমার পরিচয় ছিল না। যাদের কাছে সত্য অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করতাম, তারাও কমবেশি ছিল আমারই মতো। হয় জানে না, নয় ছোটবেলায় যা জেনেছে অন্ধভাবে সেটাই আঁকড়ে পড়ে আছে। জিজ্ঞাসু মনের তৃষ্ণা মেটানোর মতো কেউ তখন ছিল না। যাই হোক, সৈয়ক হক, আজাদদের মতো লোকেরাও এসবের কোনো কুলকিনারা পাননি। এত কিছু জানা সত্তেও তাঁরা যদি এই ক্ষেত্রে আজীবন নবিশ থাকেন, সেক্ষেত্রে আমি যে হদিশ পাচ্ছিলাম না, তাতে দোষের কী!
যেভাবে সংশয়ের নিপাত আধুনিক প্রযুক্তি যে কেবল মানুষের ক্ষতি করে, ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়—কথাটা সর্বক্ষেত্রে মোটেও প্রযোজ্য না। ব্যবহারের উপর নির্ভর করে প্রযুক্তির বৈধতা-অবৈধতা। প্রযুক্তির এই অগ্রগতির কারণে একদিকে যেমন পেয়েছি ইসলামের বিরুদ্ধে সন্দেহ উদ্রেককারী অসংখ্য তথ্য-উপাত্ত, তেমনি পেয়েছি ইসলামের প্রতি দৃঢ় প্রত্যয়ী হওয়ার অসংখ্য প্রমাণ। সঠিক ইসলামের প্রথম বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাই ড. জাকির নায়েকের বিভিন্ন লেকচার থেকে। চ্যানেল ঘোরাতে ঘোরাতে “পিস টিভি” আসত। প্রথম প্রথম মাঝে মাঝে দুএক মিনিট ড. জাকির নায়েকের বিভিন্ন লেকচার শুনতাম। ভাঙাচোরা চেহারা, যেমন হালকা গড়ন তেমন হালকা দাড়ি। সেই লোকটাই কী জোড়ের সাথেই না তাঁর প্রতি নিক্ষিপ্ত এক একটা প্রশ্নের সূঁচালো অগ্রভাগকে ভোঁতা করে বেঁকিয়ে ফেরত পাঠাতেন। শুধু ড. জাকিরই নন, “পিস টিভি”-র ইংলিশ চ্যানেলটির অধিকাংশ বক্তা ও অনুষ্ঠানই আধুনিক ও তরুণ সংশয়বাদীদের উদ্দেশ্য করে তৈরি করা। ফলে “পিস টিভি”-র প্রোগ্রামগুলো খুব সহজেই আমার মনোযোগ আকর্ষণ করে। লেখাবাহুল্য এর মধ্য সর্বাগ্রে ছিল ড. জাকিরের তিরন্দাজি সব লেকচার। তখনো যে ইসলামের বলয়ে পুরোপুরি এসেছি এমন না, তবে ধীরে ধীরে মনের গহীনে পরিবর্তনের, আগাছাগুলো পরিষ্কারের একটা সংকেত পাচ্ছিলাম। ড. জাকির নায়েকের যে-লেকচার এবং লেকচার পরবর্তী প্রশ্নোত্তর শুনে প্রথম ইসলামের প্রতি অন্তর থেকে টান অনুভব করি সেটা হচ্ছে: The Qur’an and Modern Science : Compatible or incompatible। এই লেকচার শোনার পর প্রথম যে উপলব্ধি আমাকে গভীরভাবে নাড়া দেয়: জগতে চলতে ফিরতে, বিভিন্ন শ্রেণির বিভিন্ন মানুষের সাথে মিশে আমাদের মনে ইসলাম নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্নের যে-বুদবুদ ওঠে, সেগুলো ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার মতো লোক আশেপাশে খুবই স্বল্প। ছোটবেলা থেকেই ইসলাম সম্পর্কে অনেক ধোঁয়াশা আবছা জ্ঞান নিয়ে আমরা বড় হই। বড় হতে হতে বহির্জগত, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, দর্শন আর নানান কিসিমের মানুষের সংস্পর্শে এসে সেই ধোঁয়াশাগুলো কালো মেঘের রূপ নেয়। আর এভাবে একসময় আড়ালে যাওয়া সূর্যটাকেই একেবারে ভুল যাই আমরা। আমাদের অবচেতন তখন বলে ওঠে: সূর্য আবার কী!?
একটু খেয়াল করে দেখি, নাস্তিকতা ও সংশয়বাদীতা নিয়ে আমাদের মূল প্রশ্ন বা সন্দেহগুলো কী কী?
১. স্রষ্টা আছেন কি না?
২. স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করেছেন?
৩. স্রষ্টা দুনিয়া বানিয়ে একে ছেড়ে দিয়েছেন, এই জগতের উপর স্রষ্টার আর কোনো কর্তৃত্ব নেই।
৪. পরকাল বলে কিছু নেই, এগুলো মানুষের অলীক চিন্তা।
ঘুরেফিরে প্রশ্ন এগুলোই। কেউ স্রেফ করার জন্য প্রশ্নগুলো করেন, কেউ আন্তরিকভাবে জানার জন্যই করেন। কেউ বা আবার এসবের তোয়াক্কাই করেন না। মন চায় জিন্দেগি যাপন করেন। (যদি আল্লাহ চান, উল্লিখিত প্রশ্নগুলোর অকাট্য উত্তর নিয়ে অন্য কোনোদিন আলোচনা করব)
ড. জাকিরের ঐ লেকচার এবং অন্যান্য আরও লেকচারের মাধ্যমে সন্দেহের উপরিতলের শ্যাওলাগুলো পরিষ্কার হতে থাকে। তবে সংশয় পরিপূর্ণভাবে নিপাত হলো তখন, যখন সন্ধান পেলাম ইসলামিক অনলাইন ইউনিভার্সিটি বা IOU-এর। ড. আবু আমীনাহ বিলাল ফিলিপ্সের এই ইউনিভার্সিটিতে তাওহ়ীদ (আল্লাহর একত্ব)-এর উপর বুনিয়াদি কোর্সগুলো করার পর থেকে মনের সূক্ষ্মতম সন্দেহগুলোও হাওয়ায় মিলিয়ে যেত লাগল। এরপর যখন মোরাল ফাউন্ডেশন অফ ইসলামিক কালচার কোর্সটা করলাম তখন তো পুরাই থ। নিজেকে কী মূর্খই না লাগছিল তখন। ইসলাম সম্পর্কে ভাসাভাসা এই জ্ঞান নিয়ে আমি ইসলাম নিয়ে সন্দিহান ছিলাম! আর যখন দা‘ওয়াহ ট্রেনিং কোর্সটা করলাম তখন নিজেকে কি বোকা আর দুর্ভাগাই না মনে হচ্ছিল: কেন আগে করিনি!
হাহ! এইসব মামুলি প্রশ্নের উত্তর জানতাম না বলে একদিন স্রষ্টায় অবিশ্বাস করতাম। আমারই মতো অন্যদের কাছ থেকে সন্দেহের উপকরণ বগলে নিয়ে সালাহ, সিয়াম থেকে দূরে ছিলাম! এই সব ঠুনকো সন্দেহের জন্য?? অথচ ইসলামিক বিশেষজ্ঞগণ কি নিপুণভাবেই না এগুলোর সমাধান বাৎলে দিয়ে গেছেন। আমরা জানি না, খুঁজি না, জানতে চাই না; সঠিক পথে পৌঁছাতে চাই না। পৌঁছালে যে নিয়মিত সালাহ আদায় করতে হবে, কন্টকাকীর্ণ পথে সামলে পা ফেলতে হবে। হারাম থেকে দূরে থাকতে হবে। তারচেয়ে আমার মন যেভাবে চায় সেভাবে চলাটাই যে শ্রেয় কারও কারও কাছে। তাতে ইহজীবনে হয়তো কাঁটাগুলোকে দলাইমোচড়াই করে পার পাওয়া যাবে, কিন্তু পরজীবনে পাই পাই হিসেব দিতে হবে—কোনো সন্দেহ নেই।
সমস্যার মূলে
প্রথাগতভাবে মুসলিম পরিবারে বেড়ে ওঠা প্রায় প্রতিটা ছেলেমেয়েই আজ নাস্তিকতা-সংশয়বাদী বিষের স্বীকার। আমার ক্ষেত্রে এর মূল কারণ ছিল শৈশব-কৈশোর থেকে স্রষ্টাকে না চেনা, স্রষ্টার এই বিশাল সৃষ্টি না বোঝা।
আর দশটা ছেলেদের কিংবা মেয়েদের ক্ষেত্রে যেমনটা হয়, আমিও সেভাবে কুর’আন শুধু আবৃত্তি করতে শিখেছিলাম, কিন্তু মর্মার্থ কখনো বোঝা হয়ে ওঠেনি। নামাজ পড়ার তাগাদাই শুধু পেয়ে গেছি মা-বাবা’র কাছ থেকে; কিন্তু কেন পড়ছি, কী কারণে, কী উদ্দেশ্যে পড়ছি সেগুলো কখনো অনুধাবন করা হয়ে ওঠেনি। রোজা কেবল আটকে ছিল উপবাস থাকার মধ্যে। স্রষ্টা কী প্রজ্ঞাগুণে সিয়ামের প্রত্যাদেশ দিয়েছেন সেটা ভেবে দেখার সময় হয়নি কখনো। এগুলোর সঙ্গে রয়েছে আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির উর্বর সব সেক্যুলার বইপত্র আর প্রচারমাধ্যম।
বইপত্রে, প্রবন্ধে, অনলাইন ব্লগে যারা ইসলামবিদ্বেষ চর্চা করেন তাদের কেউই আরবিতে দক্ষ নন। স্রেফ অনুবাদকে পুঁজি করে তারা তাদের কথিত ‘শিল্প’ চর্চা করেন। বাংলা, ইংরেজি, জর্মন এমনকি ফ্রেঞ্চ ভাষাতেও তাদের গভীর দখল থাকলেও শুধু আরবি ভাষা এলেই তাদের জ্ঞানের দৌড় হাঁটুতে নেমে আসে। বাংলা না জেনে শুধু অনুবাদ পড়ে কেউ যদি রবীন্দ্রনাথের বিশাল সাহিত্যের সমালোচনা করতে শুরু করেন তাহলে ব্যাপারটা কেমন দাঁড়াবে বলুন তো? অনুবাদ শুধু একভাষার কিছু শব্দকে অন্যভাষায় রূপান্তর করে দিতে পারে; কিন্তু মূল ভাষায় মূল শব্দটি যে ভাব, যে ঝঙ্কার ও অর্থের সূক্ষ্মতা নিয়ে হাজির হয় সেটা এরা কী করে উপলব্ধি করবে? অথচ ইসলামের বিরুদ্ধে, কথিত মানবধর্ম বা মানবতাবাদের আড়ালে নাস্তিকতা ও সংশয়বাদের প্রচারে এরা সবসময় খাড়া। অধিকাংশ বাংলা গল্প, উপন্যাস, নাটক কিংবা চলচ্চিত্রে, প্রবন্ধ কিংবা কলামে যেভাবে বিকৃতভাবে ইসলামকে তুলে ধরা হয়; আড়কলমে কিশোর মগজে বস্তুবাদ আর ভোগবাদের বীজ বপে দেওয়া হয়, সেখানে এখনো যে এদেশে মানুষ হিদায়াহ পায়, ইসলামের সঠিক দিকনির্দেশনা পায়—এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও—ইসলাম যে-স্রষ্টা প্রত্যাদিষ্ট জীবনব্যবস্থা সেটা প্রমাণে এই বাস্তব উপাত্তই যথেষ্ট।
আর নাস্তিকরাও যে কারও উপাসনা করে না সেটাও সত্য নয় বলে বোধ করি। কারণ স্রষ্টায় বিশ্বাস ও স্রষ্টার উপাসনা মানুষের ফিত়রাহ বা স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। আর একারণেই কট্টর নাস্তিকদেরও উপাস্য রয়েছে। সেই উপাস্য হতে পারে মনোরঞ্জন, অর্থ, খ্যাতি কিংবা নিজেকেই উপাসনা। বুদ্ধ কখনোই নিজেকে ঈশ্বর দাবি না করলেও বুদ্ধের শিষ্যরা যেভাবে বুদ্ধকেই পূজাসম মনে করে পূজো করছে, ঠিক তেমনি নাস্তিক-সংশয়বাদীদের জন্যও রয়েছে হরেক রকমের, কিংবা পাঁচমিশেলি ঈশ্বর।
তুমি কি তাকে দেখেছ যে তার উপাস্য বানিয়েছে নিজের কামনা-বাসনাকে?
[সূরাহ আল-ফুরক়ান (মানদণ্ড), ২৫:৪৩]
নীড়ে ফেরা আমি
আমার জন্য নীড়ে ফেরা ছিল নতুনভাবে ইসলামকে চেনা; সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতায় ইসলামকে অবলোকন করা। সত্যিকার ইসলাম এত সুন্দর? এত বাস্তবসম্মত? এত জীবনঘনিষ্ঠ? নীড়ে ফেরার পর এগুলোই ছিল আমার প্রথম অনুধাবন। আর এই ইসলাম ছেড়েই আজ আমার ভাইবোনেরা কত দূরে। ইসলাম তাদের কাছে হয় নামসর্বস্ব এক আচার-প্রথা, নয়তো সেক্যুলার ভাবনার ধুলোয় মলিন হওয়া এক ছিন্ন পত্র।
শেষ করার আগে সবার কাছে অনুরোধ থাকবে, আপনার পরবর্তী পদক্ষেপটা নেওয়ার আগে অন্তত একবার আন্তরিকভাবে প্রকৃত ইসলামের সুলুক সন্ধান করুন। দশম শ্রেণিতে ধর্মে এ-প্লাস পাওয়া ছাত্রের কিংবা ছাত্রীর দৃষ্টিতে নয়; পূর্বসূরি বিদ্বানগণ (সালাফ আস-সালিহীন) যেভাবে মূলগতভাবে ইসলামকে বুঝেছেন, যেই দৃষ্টি দিয়ে দেখেছেন, সেই দৃষ্টিতে একবার নজর ফেরান। আমার দৃঢ় বিশ্বাস সত্যানুসন্ধানের আন্তরিক উদ্দেশ্য নিয়ে কেউ যদি এগোন তাহলে স্রষ্টা তাকে সিরাত় আল-মুস্তাকীম তথা সুদৃঢ় পথটি দেখাবেনই। কারণ স্রষ্টা নিজেই বলেছেন,
“যারা আমার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে, আমি তাদের অবশ্যই আমার পথে (আল্লাহর ধর্ম—ইসলাম) পরিচালিত করব। আল্লাহ তো মুহ়সিনূনদের (সৎকর্মশীল) সঙ্গেই আছেন।”
[সূরাহ আল-আনকাবূত ২৯:৬৯]
পরিশিষ্ট-১
1. রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “প্রত্যেক শিশুই ফিত়রাহ (স্রষ্টার প্রতি স্বভাবজাত বিশ্বাস)-এর উপর জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু তার বাবা-মা তাকে ইহুদি, খ্রিষ্টান অথবা জরুথুস্ট্রি বানায়।” [স়াহ়ীহ় মুসলিম, গ্রন্থ ৩৩-ক়াদ্র, হ়াদীস় নং-৬৪২৩]
২. রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “মানুষ একে অপরকে প্রশ্ন করতে করতে একসময় এই প্রশ্ন করবে যে, আল্লাহ তো সবকিছুই বানিয়েছেন, তাহলে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে?” এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে সে যেন বলে, “আমি আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করেছি।”
পরিশিষ্ট-২
মুহসিন খান ও ত়াক়ি-উদ্দীন হ়িলালী, Interpretation of the Meanings of The Noble Qur’ân, Dar-us-salam Publication ।