অপারেশনে রোগীর মৃত্যু, হাসপাতাল ছেড়ে পালালেন চিকিৎসক-নার্সরা
সাভারের আশুলিয়া থানায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে টনসিল অপারেশনের জন্য অজ্ঞান করার পর মারা গেছেন লাইলী বেগম (৩২) নামের এক নারী।
তার মৃত্যুর পর স্বজনদের বিষয়টি না জানিয়ে অপারেশন থিয়েটারে অবস্থান করতে থাকেন চিকিৎসক ও নার্সরা।
একপর্যায়ে চিকিৎসক জানান, লাইলীর অবস্থা খারাপ, তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে যেতে হবে। তখন স্বজনরা জোর করে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে দেখতে পান লাইলী মারা গেছেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আশুলিয়ার পলাশবাড়ীতে মমতাজ উদ্দিন জেনারেল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। লাইলী বেগম তিন সন্তানের জননী।
ঘটনার পরপরই পরিস্থিতি সামাল দিতে অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক এমদাদুল ইসলাম, সার্জন ডা. মোচ্ছাব্বির মাহমুদ ও হাসপাতালের পাঁচ নার্স, আয়া, বুয়া, দারোয়ানসহ সব স্টাফ দৌড়ে পালিয়ে যান।
সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আমজাদুল হক জানান, বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ঘটনায় নিহতের স্বামী আবুল কাসেম বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি অভিযোগ দেয়ার পর পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
লাইলীর স্বজনরা জানান, ডেন্ডাবর নতুনপাড়ায় কাশেমের মোড় এলাকার মুদি দোকানি আবুল কাসেমের স্ত্রী তিন সন্তানের জননী লাইলী বেগম টনসিলের সমস্যার কারণে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মমতাজ উদ্দিন ক্লিনিক ও জেনারেল হাসপাতালে যান।
সেখানে লাইলী বেগমকে দেখে নাক-কান-গলার চিকিৎসক মোচ্ছাব্বির মাহমুদ জানান, তার টনসিল ইনফেকশন হয়েছে এবং তার অবস্থা খুবই খারাপ।
চিকিৎসক আরও জানান, দ্রুত অপারেশন না করলে রোগী মারা যাবেন। রাতে অ্যানেসথেসিয়া ডা. এমদাদুল ইসলাম এসে রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে নেন এবং অজ্ঞান করেন।
অপারেশনে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগার কথা থাকলেও দীর্ঘ দুই ঘণ্টা হলেও রোগীকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করা হচ্ছে না দেখে রোগীর স্বজনরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।
রোগীর আত্মীয়স্বজন বিষয়টি জানতে চাইলে তখন কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের অপেক্ষা করতে বলেন। প্রকৃতপক্ষে এ সময় জ্ঞান না ফেরায় এবং রোগী মারা যাওয়ায় রোগীর আত্মীয়স্বজন কাউকেই অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।
পরে ডা. মোচ্ছাব্বির লাইলী বেগমের স্বামীকে জানান, রোগীর অবস্থা ভালো নয়, তাকে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকায় নিয়ে যান। তখন তারা জোরপূর্বক অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করে রোগীকে মৃত দেখতে পান।
এ সময় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ঘটনার কয়েক মুহূর্তের মধ্যে অ্যানেসথেসিয়া ডা. এমদাদুল ইসলাম, সার্জন ডা. মোচ্ছাব্বির, হাসপাতালটির অন্য চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ১৭-১৮ জন দৌড়ে পালিয়ে যান। রাতেই পুলিশ ঘটনার খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে।
পরে হাসপাতালের মালিক মোখলেছুর রহমান রোগীর আত্মীয়স্বজনদের বিচারের আশ্বাস দিয়ে হাসপাতাল থেকে বের করে দেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে আশুলিয়া থানার ওসি আবদুল আউয়াল জানান, লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন