অভিযোগ, ছাত্রীদের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন তিনি
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার শিরগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগে ওই শিক্ষককে জুতাপেটা করে এক মাসের বষ্কিারাদেশ দিয়েছে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের একাংশ ও মাতব্বররা। বর্তমানে ওই শিক্ষক আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে অভিযুক্ত শিক্ষকের পরিবার ঘটনাটিকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেছে।
বিদ্যালয় ও এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, শিরগ্রামের মধুসূদন সাহার ছেলে মানবেন্দ্রনাথ সাহা (টলিন) গত ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে শিরগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। এরপর থেকে শিক্ষকতার পাশাপাশি নিজ বাড়িতে কোচিং সেন্টার খুলেন। বাড়িতে ও স্কুলে ছাত্রছাত্রীকে প্রাইভেট পড়ান তিনি। প্রাইভেট পড়ানোর সময় ছাত্রীদের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়াসহ যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৫ মে সকালে বিদ্যালয়ের বাইরে একটি আলোচনা সভা হয় এবং গভীর রাতে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে একটি সভা হয়। ওই সভায় বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মো. আহাদ মোল্লা, আব্দুল মান্নান শেখ, মো. মোরশেকুল আজাদ মুক্ত, শিক্ষক প্রতিনিধি এয়াকুব ও মাতবরদের মধ্যে রুহুল আমিন, অরবন্দিু সাহা, শিবনাথ সাহা, দুলাল চন্দ্র সাহা, প্রনব কুমার সাহা, ওই ইউনিটের সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য আবুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষক মানবেন্দ্র সাহা তার কৃতকর্মের জন্য ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পরে সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক অরবিন্দু সাহা তাকে জুতাপেটা করে এবং এক মাসের বহিষ্কারাদেশ দেন।
বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী মো. আবু নাছির মোল্লা বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আহাদ মোল্লা তাকে ডেকে নিয়ে স্কুলের গেট ও অফিস কক্ষ খুলে দিতে বলেন। দুই জন ছাত্রীর মা, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যসহ ১০/১২ জন ওই মিটিং এ উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষক মানবেন্দ্রনাথ মাফ চাওয়ার পর জুতাপেটা করা হয়। মিটিং শেষে গেটে তালা দেয়ার সময় থানা পুলিশের ওসি গাড়িতে করে পুলিশ নিয়ে হাজির হয়। তিনি ঘটনা জানতে চাইলে বিস্তারিত খুলে বলি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মাওলানা আ. সাত্তার বলেন, মৌখিকভাবে শুনেছি কিন্তু কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। ৫ মে বাইরে এবং বিদ্যালয়ে মিটিং এর কথা শুনেছি। রাতের মিটিংয়ের কথা তাকে কেউ বলেনি। ৬ থেকে ৮ মে পর্যন্ত মানবেন্দ্রনাথ ছুটিতে ছিল। ৯ ও ১০ মে সে বিদ্যালয়ে আসেনি। হাজিরা খাতায় অনুপস্থিত দেখানো হয়েছে। নির্দিষ্ট সময় পর তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হবে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বানা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবুল হাসান বলেন, শনিবার রাতে সবাই মিটিং এ বসে তাকে ফোন করে ডেকে নেয়। অভিযুক্ত শিক্ষক ক্ষমা প্রার্থনা করার পর জুতাপেটা করে এক মাসের সাময়িক বহিষ্কারাদেশ দেয়া হয়। এটা নিয়ে এলাকা দুটি দলে ভাগ হয়ে পড়েছে। একটা পক্ষ তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে।
মানবেন্দ্রনাথ সাহার মোবাইলে কল করে বন্ধ পাওয়া যায়। বাড়িতে গেলে তার বাবা মধুসূদন সাহা এবং মা নমিতা সাহা বলেন, মানবেন্দ্র ষড়যন্ত্রের শিকার। বেশি ছাত্র-ছাত্রী তার কাছে প্রাইভেট পড়ে বলে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে তাকে ফাঁসানো হয়েছে। সে সম্পূর্ণ নির্দোষ।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মো. আহাদ মোল্লাকে কল করলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন। পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি কাজী শাহজাহান হোসেনের মোবাইলে কল করলে অন্য একজন রিসিভ করে বলেন স্যার মিটিং এ। এরপর এবাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়ন্তী রায় রূপার মোবাইল ফোনে বলেন, বিষয়টি তিনি মুখে মুখে শুনেছেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে কিছু জানায়নি, তাই তিনিও আর কোনো খবর নেননি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন