অ্যাটর্নি জেনারেলকে ‘জারজ’ বলায় সমালোচনার ঝড়
আপিল বিভাগে এক মামলার শুনানির সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে বাস্টার্ড (জারজ) বলায় প্রখ্যাত আইনজীবী ও সংবিধান রচয়িতা ড. কামাল হোসেনের ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
গতকাল বুধবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নিয়োগপ্রাপ্ত ১৩৮ জন চিকিৎসকের নিয়োগের বৈধতা নিয়ে এক মামলার শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে বাস্টার্ড বলেন ড. কামাল হোসেন।
শুনানির এক পর্যায়ে কামাল হোসেন বলেন, সিন্ডিকেটে এক সময় ডাক্তারদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এখন ওনারা সেই সিন্ডিকেটের বিপক্ষে স্ট্যান্ড নিচ্ছে। এগুলো হলো ইন্টেলেকচুয়াল প্রস্টিটিউশন। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল এ ধরনের শব্দ চয়নে আপত্তি জানান। তখন তাকে উদ্দেশ্য করে কামাল হোসেন বলেন, ‘শাটআপ, বাস্টার্ড। ইউ টেক ইউর সিট।’ প্রতিক্রিয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘ইউ ক্যান নট আটার দিজ ওয়ার্ড।’
কামাল হোসেনের এমন বক্তব্যে অনেকে ফেসবুক ব্যবহারকারী তাকে নিয়ে সমালোচনা করেছেন।
ফেসবুকে আনোয়ার চৌধুরী নামে একজন লিখেছেন, ‘ডা. কামাল নিজে কী? অ্যাটর্নি জেনারেলের কথা বাদই দিলাম। আপনি নিজেকে এতবড় নেতা ভাবেন, কোন দিন সাধারণ মানুষের কথা ভেবেছেন? আপনি শুধু যুক্তি দেখান অথচ নিজেই অযুক্তিক লোক। দেশের মানুষ কোন দিন আপনাকে বিপদে পাশে পায়নি। আপনি একজন বসন্তের কোকিল। শুধু নীতিকথা ছাড়া আর কিছুই নয় আপনি। অ্যাটর্নি জেনারেল জারজ কি না জানিনা, কিন্তু আপনি একজন অপদার্থ।’
আএইচএম জাহাঙ্গীর নামে একজন লিখেন, ‘উনি উনার মেয়ের জামাইকে ৭১ এর ভূমিকা নিয়ে উল্টাপাল্টা মন্তব্যের জন্য কিছু বলেন না। অথচ একজন সিনিয়র আইনজীবীকে এভাবে কথা বলেন কি করে। যদিও বা শেষে ক্ষমা চেয়েছেন। তাহলে লজ্জাটা কার হলো। নিউজটা যদি এভাবে আসতো কি বলতেন?? ড. কামাল হোসেন ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্ত নিউজটা এভাবে আসেনি। এখানেই হলো সাংবাদিকতার কারসাজি।’
দুলাল মুজমদার নামে একজন লিখেন, ‘এই হলো আমাদের দেশের গুণি ব্যক্তি, যে অন্যের মত দাবিয়ে রাখতে রাস্তার ভাষা ব্যবহার করেন। তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা আমাদের শুনতে হয়!’
হেলাল উদ্দিন হেলালী নামে একজন লিখেন, ‘ড. কামালের মত মানুষের মুখে এই সব কথা মানায় না, ওনার মত উচ্চ শিক্ষিত মানুষ যদি এই সব নোংরা ভাষায় কথা বলে তাহলে সাধারণ মানুষ কোন ভাষায় কথা বলবে??
বিএসএমএমইউ নিয়োগপ্রাপ্ত ১৩৮ জন চিকিৎসকের নিয়োগের বৈধতা নিয়ে ওই মামলায় ড. কামাল হোসেনের পাশাপাশি অংশগ্রহণ করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামাল হোসেন, এম আমীর উল ইসলাম ও কামরুল হক সিদ্দিকী। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া ও তানিম হোসেইন শাওন।
অপরদিকে বিএসএমএমইউর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও আইনজীবী তানজিব উল আলম।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৫ সালের ১৮ অক্টোবর চিকিৎসক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ। ওই বছর ডিসেম্বর থেকে ২০০৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত কয়েকশ চিকিৎসককে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই বিজ্ঞপ্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) বর্তামান সভাপতি অধ্যাপক এম ইকবাল আর্সলান।
ওই রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাই কোর্ট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। হাই কোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা আপিলের অনুমতি (লিভ টু আপিল) চেয়ে আবেদন করেন। শুনানির পর আপিল বিভাগ গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি লিভ টু আপিল খারিজ করে হাই কোর্টের রায় বহাল রাখে। এই খারিজের আদেশ পুনর্বিবেচনা চেয়ে ১১০ জন চিকিৎসক আবেদন (রিভিউ) করেন। এই আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ রিভিউ গ্রহণ করে আপিল করার অনুমতি দেয়। এরপর ওই চিকিৎসকরা পৃথক পাঁচটি আপিল করেন, যার ওপর শুনানি গতকাল বুধবার শেষ হল।আগামী ২১ মে এ বিষয়ে আদেশ দিবেন আপিল বিভাগ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন