আগস্টে জাজিরা প্রান্তে দৃশ্যমান হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু
সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী আগস্টে দৃশ্যমান হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের অংশ সবার আগে দেখা যাবে। চলতি জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহকে টার্গেট ধরে জাজিরা প্রান্তে দিনরাত দেশি বিদেশি প্রকৌশলীরা কাজ করছেন। যেহেতু পদ্মায় এখন প্রবল স্রোত, তাই কিছুটা সময় হাতে রেখেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। সেক্ষেত্রে জুলাই মাসে একেবারেই সম্ভব না হলে আগস্টের প্রথম সপ্তাহকে টার্গেট করেছেন তারা। এসব তথ্য জানালেন প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম।
তিনি জানান, স্প্যান বসানোর আগে কিছু আনুষঙ্গিক কাজ রয়েছে, সেগুলো শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্প্যান বসানো যাবে না। শফিকুল ইসলাম বলেন,‘জুলাইয়ের মাঝামাঝি না হলেও শেষ সপ্তাহের মধ্যে আনুষঙ্গিক কাজগুলো শেষ করে স্প্যান বসানোর কাজে হাত দেবো। যদি কোনও কারণে ফেল করি তাহলে আগস্টে ইনশাল্লাহ আমরা সফল হবে। সেক্ষেত্রে জাজিরা প্রান্তে আগে দৃশ্যমান হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।’
আগস্টের যেকোনও সময় জাজিরা প্রান্তে দুটি পিলারের ওপর স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হলেই দৃশ্যমান পদ্মা সেতু। এক সময় এই স্প্যানের ওপর দিয়েই চলবে নানা ধরনের যানবাহন। আর স্প্যানের নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন, জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর ৪২টি পিলারের মধ্যে কাজ চলছে ১৬টির। ৪২টির জন্য মোট বসবে ২৫২টি পাইল। এর মধ্যে ২৮টি পাইলের কাজ পুরোপুরি ও ৫৭টির কাজ অর্ধেক শেষ হয়েছে। গত দেড় বছর ধরে জাজিরা প্রান্তে পাইলিংয়ের মূল কাজ চলছে। এ অংশে ঢালাই শেষে ৩৭ নম্বর ও পিলারটি ক্যাপ বসানোর অপেক্ষায় রয়েছে। আর ৩৮ নম্বর পিলারটিতে চলছে কংক্রিটের ঢালাই। এই কাজগুলো শেষ হলেই দুই পিলারের ওপর বসানো হবে স্প্যান। তখনই দৃশ্যমান হবে পদ্মার বুকে গড়ে তোলা স্বপ্নের সেতু। এ জন্যই নদীর পাড়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩টি স্প্যান। যার প্রতিটির দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার ও ওজন তিন হাজার টন। আরও ৪টি স্প্যান তৈরির কাজ চলছে। এ ছাড়া সেতুর জাজিরা প্রান্ত থেকে মূল সড়কে নামার জন্য ১৯৬টির পিলারের মধ্যে ১০৩টির কাজও শেষ হয়েছে।
প্রকল্প অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুতে মোট পিলার থাকবে ৪২টি। যার ৪০টি থাকবে নদীর মধ্যে। এক-একটি পিলারের প্রাথমিক দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ১২০ মিটার। তবে শুরু থেকেই নদীর মাওয়া প্রান্তে মাটির তলদেশের গঠন বৈচিত্র্যের কারণে দৈর্ঘ্য নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। সমস্যা সমাধানে দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীরা দিনরাত কাজ করছেন।নদীর দুই প্রান্তেই একসঙ্গে পুরোদমে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হবে।
প্রকল্প এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মা পাড়ের দুই প্রান্তেই কমবেশি চলছে সেতুর কাজ। সেতু সংশ্লিষ্ট অন্য প্রকল্পগুলোর কাজ যখন সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শেষের পথে, তখন পদ্মা নদীর স্রোত ও মাটির স্তরের গঠনসহ নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে এখন চলছে মূল সেতুর পাইলিংয়ের কাজ।
শুরু থেকেই প্রকল্পের সেতুর মাওয়া প্রান্তের ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের কাজ শুরু করা হলেও পরে তা অর্ধসমাপ্ত রেখে কাজ সরিয়ে নেওয়া হয় জাজিরা প্রান্তে। জাজিরা প্রান্তের ৩৬ থেকে ৪২ নম্বর পিলার পর্যন্ত এখন কাজ চলছে পুরোদমে। মাওয়া প্রান্তে ১ নম্বর এবং ৬ থেকে ১২ নম্বর পিলারের দৈর্ঘ্য কত হবে, তা এখনও নির্ধারণ করা যায়নি। ফলে অন্যগুলোতে কাজ ধরা হলেও বন্ধ আছে এসব পিলারের কাজ। তবে সম্প্রতি সমস্যার সমাধান হয়েছে বলে জানিয়েছেন পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম।
প্রকল্প এলাকায় দেখা গেছে, পদ্মা সেতুর কাজ চলছে। সেতুর অন্য প্রকল্পগুলোর কাজ যখন সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রায় শেষের দিকে, সেখানে নদীর স্রোত ও তলদেশের মাটির স্তরের গঠনসহ নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে এগিয়ে চলেছে মূল সেতুর পাইলিংয়ের কাজ।
ইতোমধ্যেই পদ্মা সেতুতে যোগ হয়েছে বিশ্বের সর্বোচ্চ ৩ হাজার কিলোজৌল ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন একটি হ্যামার। জার্মানিতে তৈরি এ হ্যামার প্রায় দেড়মাস সমুদ্র পাড়ি দিয়ে জুন মাসে মাওয়ায় এসে পৌঁছেছে। এটিকে এখন জাজিরা প্রান্তে পাইলিংয়ের কাজে ব্যবহার করা হবে। আগের দুটি হ্যামার এখন ব্যবহার হবে মাওয়া প্রান্তে।
এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নদীর ওইপ্রান্তে জাজিরা পয়েন্টের সব পিলারের পাইলিংয়ের সয়েল টেস্ট হয়ে গেছে। কিন্তু মাওয়া প্রান্তে হয়নি। আমরা এ প্রান্তের টেস্টিং রিপোর্ট দিতে পারিনি। নদীর ভিন্ন ভিন্ন প্রান্তে সয়েলের ভিন্নতা রয়েছে। তাই এ প্রান্তে জটলতা দেখা দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এটি আগামী ১০০ বছরের প্রকল্প। শতভাগ শিওর না হয়ে কোনও বিশেষজ্ঞ বেহিসাবী মতামত দেবেন না। তবে এখন আমরা মোটামুটি একটা জায়গায় পৌঁছে গেছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত মূল সেতুর কাজ ৫২ শতাংশ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ হয়েছে ৪৪ শতাংশ। মাওয়া প্রান্তে সমস্যার কারণে এখন সর্বোচ্চ কাজ হয়েছে জাজিরা প্রান্তে ৩৭ নম্বর পিলারের। সামনে ৩৮ নম্বর পিলারের কাজও চলছে পুরোদমে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কয়েক দফা পেছানো হলেও চলতি মাসের যে কোনও সময় বসানো হবে স্প্যান।
জাজিরা প্রান্তে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ প্রান্তে ৪টি পিলারের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। পাঁচ ইঞ্চি পুরু ইস্পাতের এক একটি পাত দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে তিন মিটার ব্যাসের পাইপ। আর এই পাইপের ওপর আরেকটি পাইপ জোড়া দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ১২৮ মিটার দৈর্ঘের আরও একটি পাইপ। যা দিয়ে তৈরি হচ্ছে পদ্মা সেতুর এই মুহূর্তের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ পাইলিং। যার ওপর মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো। প্রকল্পের কোথাও-কোথাও নাব্যতা বাড়াতে নদীর তলদেশের পলি সরানোর কাজ চলছে। আবার কোথাও চলছে নদীর প্রচণ্ড স্রোতের দাপটকে শাসন করে পাইলিং।
জাজিরা প্রান্তে ৪টি পিলারের ২৪টি পাইলিংয়ের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। যার মধ্যে ৩টি পিলারই মূল নদীতে। সেতু প্রকল্পকে ৫টি ভাগে ভাগ করে চলছে নির্মাণ কাজ। এর মধ্যে মাওয়া অংশের সংযোগ-সড়কের কাজ শেষ হয়েছে শতভাগ। জাজিরা অংশের সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হয়েছে ৮২ শতাংশ। নদী শাসনের কাজ শেষ হয়েছে ২৬ শতাংশ। সার্ভিস এরিয়ার কাজ শেষ হয়েছে শতভাগ। মূল সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৩১ শতাংশ।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যতটুকু কাজ শেষ হয়েছে, তাতে আমরা আশাবাদী নির্ধারিত সয়ের মধ্যেই পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হবে।’ আন্তর্জাতিক পরামর্শক দলের বিশেষজ্ঞ ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে ১২২ মিটার গভীরতার জন্য পিলার স্থাপন করা হয়েছে। বিশ্বে এটি রেকর্ড। দুনিয়ার আর কোনও সেতুতে এত গভীরে পিলার স্থাপন করা হয়নি। এখন সব মিলিয়ে স্বপ্নের আরও কাছে বাংলাদেশ।’-প্রতিবেদন বাংলা ট্রিবিউনের সৌজন্যে প্রকাশিত।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন