আগামী বছরের অক্টোবর থেকে যাত্রা করবে নির্বাচনকালীন সরকার
আগামী বছরের অক্টোবর থেকে যাত্রা করবে নির্বাচনকালীন সরকার। এরপর থেকে ৯০ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। হিসাবমতে, ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির আগেই শেষ করতে হবে নির্বাচন। সে লক্ষ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে ইলেকশন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে তৈরি হচ্ছে ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো।
দিনক্ষণের হিসাবমতে, বর্তমান পূর্ণ সরকারের মেয়াদ শেষ হতে বাকি আর মাত্র ১২ মাস। আগামী বছর ৩১ অক্টোবর থেকেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়ে যাবে। এ অবস্থায় সরকারি মহলে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সরকার সবুজ সংকেত দিলে আগামী বছর ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ২৭ ডিসেম্বরকে ভোট গ্রহণের দিন হিসেবেও বেছে নেয়া হতে পারে। তফসিল ঘোষণা হতে পারে নভেম্বরে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্র যুগান্তরকে এ তথ্য জানিয়েছে।
ক্ষমতাসীনদের মতে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বেই নির্বাচনকালীন সরকার থাকবে। সে ক্ষেত্রে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই থাকবেন নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান। এ সরকারে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ভূমিকা কী হবে, তা নিশ্চিত করে বলা না গেলেও দলটি যে এবার নির্বাচনের বাইরে থাকবে না তা নিজেরাই বলছে।
সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিন অর্থাৎ আগামী বছরের ৩১ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একই বছরের ২৯ জানুয়ারি নির্বাচিত সদস্যরা সংসদের প্রথম অধিবেশনে বসেছিলেন। এদিন থেকেই সংসদের ৫ বছরের মেয়াদ শুরু হয়েছে। যা শেষ হবে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি। কিন্তু সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদে বলা আছে, সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে (ক) ‘মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে।’ সে কারণে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন শেষ করতে হবে। ভোট গ্রহণের পর ঘোষিত ফলের গেজেট প্রকাশসহ কিছু কাজ থাকে। এ ছাড়া কিছু কেন্দ্রে ভোট স্থগিত হলে সেগুলোও মেয়াদের মধ্যেই শেষ করতে হয়। এ জন্য নির্ধারিত ৯০ দিন শেষ হওয়ার আগেই ভোটের সময় নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বরের শেষ দিকের যে কোনো দিন ভোটের সম্ভাবনাই বেশি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার ঢাকায় মহানগর আওয়ামী লীগের এক অনুষ্ঠানে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ফাইনাল খেলা হবে। বিজয়ের মাসে আমরা আর একটি বিজয় লাভ করতে চাই। এ জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচনের প্রচারণা অনানুষ্ঠানিকভাবে অনেক আগেই শুরু হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বাইরে যান, নির্বাচনী প্রচারণা চালান। নেতারাও যে যেখানে যাচ্ছেন, নির্বাচনের কাজ করছেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবার বিএনপি নির্বাচনে আসবে। গতবার নির্বাচনে না এসে তারা যে ভুল করেছে, এবার তা করবে না। তবে অন্তর্বর্তী সরকারে বিএনপির ভূমিকা কী হবে তা এখনই বলার সময় আসেনি বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহস্পতিবার রাতে টেলিফোনে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক উনার দলের অবস্থান থেকে কথা বলেছেন। কিন্তু আমরা বরাবর বলে আসছি নির্বাচনকালীন সময়ে একটি নিরপেক্ষ সরকার চাই। আমাদের অবস্থানে আমরা এখনও অনড়। সেই অবস্থান থেকে একচুলও নড়িনি। তিনি প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, শুধু আমরা কেন দেশের সব রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এমনকি সাধারণ মানুষও চায় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। কিন্ত ক্ষমতাসীনরা হেরে যাওয়ার ভয়ে জনগণের দাবিকে উপেক্ষা করে তাদের অধীনে নির্বাচন দেয়ার পাঁয়তারা করছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন এখন সময়ের দাবি। সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি বিএনপির রয়েছে। আমরা সব সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছি। কাল নির্বাচন দিলে কালকের জন্যও প্রস্তুত আছি।
নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান রাশিদুল আলম বৃহস্পতিবার বলেন, আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া প্রাচীন একটি রাজনৈতিক দল। নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি সব সময় থাকে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিটি আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছে। তাদের মধ্য থেকেই জনপ্রিয়রা মনোনয়ন পাবেন।
ডিসেম্বরের ২৩-৩০ তারিখের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তফসিল ঘোষণা করতে হবে নভেম্বরে। ওই নির্বাচনের প্রস্তুতির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ ছাড়াও নির্বাচনী মালামাল কেনা ও আইন সংস্কারের কাজ করছে ইসি।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আগামী বছর ৩১ অক্টোবর থেকে নির্বাচনী ক্ষণগণনা (কাউন্টডাউন) শুরু হবে। এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ পর্যায়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। চলছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামের তালিকা তৈরির কাজ। দুই দলই সাংগঠনিকভাবেও প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রার্থী বাছাইয়ে চলছে জরিপ কার্যক্রম। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও নির্বাচনী আবহ বইতে শুরু করেছে। শহর, গ্রাম, পাড়া, মহল্লা সর্বত্র আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা চলছে। পাশাপাশি সব দলের অংশগ্রহণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়েও রয়েছে উৎকণ্ঠা।
পর্যবেক্ষক মহলের মতে, আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করতে প্রয়োজন রাজনৈতিক সমঝোতার। সব দল অংশ না নিলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। কারণ বিএনপিসহ কয়েকটি দলের বর্জনের মুখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন অনেকেই গ্রহণ করেনি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও মনে করে এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবেই। গতবার যে ভুল তারা করেছে এবার কোনোভাবেই সে ভুল তারা করবে না। তাই তীব্র নির্বাচনী লড়াইয়ের আশঙ্কাও তারা করছেন।
এ বিষয়ে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ ছহুল হোসাইন বলেন, প্রত্যেক রাজনৈতিক দল ও ভোটারের দায়িত্ব হচ্ছে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করা। একইভাবে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন করা। সব দলকে নির্বাচনে আনার উদ্যোগ নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে উদ্যোগটা আন্তরিক হতে হবে, লোক দেখানো হলে চলবে না।
জানা গেছে, নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরুর এক বছর বাকি থাকলেও এখনই নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সব মহলে ব্যাপক আলোচনা চলছে। ইসিতে সংলাপে অংশ নিয়ে বেশির ভাগ দলই নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি জানিয়েছে। ওই সরকারকে রুটিন কাজের মধ্যে তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতেও অনুরোধ জানিয়েছে দলগুলো। বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টসহ (বিএনএফ) কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতা ওই সরকারে বিএনপির প্রতিনিধি রাখার পক্ষেও প্রস্তাব দিয়েছে। অপরদিকে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু থেকে সরে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। তবে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা এখনও ঘোষণা করেনি বিএনপি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে ফিরে আসায় শিগগির এ রূপরেখা প্রকাশ করা হতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে এবার অন্তর্বর্তী সরকারে বিএনপির প্রতিনিধি থাকবে কিনা- সে বিষয়ে এখনই পরিষ্কার করে কোনো মন্তব্য করছেন না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।(প্রতিবেদন যুগান্তরের সৌজন্যে প্রকাশিত)
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন