আজ কবিগুরুর জন্মদিন
আজ ২৫ বৈশাখ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৬তম জন্মবার্ষিকী। ১২৬৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে তিনি জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘর আলো করে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি চির নতুনের কবি, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের কবি। মৃত্যুহীন অনন্ত জীবনের স্বার তিনি বয়ে যাবেন যুগ থেকে যুগান্তরে। ‘বিশ্বকবি’ উপাধির মধ্য দিয়ে তার কবিসত্তা অধিক পরিচিত হলেও রচনার সম্ভারে তিনি ব্যাপক আর বিষয়ের বিস্তারে সর্বতোমুখী। বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি অঙ্গনে তার প্রভাব স্পষ্ট।
শিক্ষা, ধর্ম, রাজনীতি, দর্শন, মানবতা প্রভৃতি বিষয়ে তার চিন্তা গভীরে বিস্তৃত। বাংলা ও বাঙালি বিষয়ে যেকোনো আলোচনায়ই তার প্রসঙ্গ প্রায় অবধারিত। বাঙালির জীবনে, বিশেষত বাঙালির চিন্তার নির্মাণ ইতিহাসে তিনি প্রায় প্রবাদের মতো। এত বছর পরও তিনি সমভাবে প্রাসঙ্গিক। ১৯১৩ সালে প্রথম বাঙালি হিসেবে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৪১ সালের ৬ আগস্ট বাংলা ১৩৪৮ সনের ২২ শ্রাবণ কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে শ্রাবণের বাদলঝরা দিনে ইহলোকের মায়া ত্যাগ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
প্রতি বছরের মতো নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নোবেল বিজয়ী এই বাঙালি কবিকে স্মরণ করবে তার ভক্তরা। শুধু দুই বাংলার বাঙালিই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাংলা ভাষাভাষী কবির জন্মবার্ষিকীর দিবসটি পালন করবে হৃদয় উৎসারিত আবেগ ও শ্রদ্ধায়।
বিশ্বকবির জন্মবার্ষিকী উপলে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
এ বছর জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান হবে রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত নওগাঁর পতিসরে। বেলা আড়াইটায় নওগাঁর পতিসরে রবীন্দ্র কাচারি বাড়ির দেবেন্দ্র মঞ্চে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি থাকবেন বন্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহা: ইমাজউদ্দিন প্রামাণিক ও নওগাঁ-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো: ইসরাফিল আলম।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৬তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনে এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘মানুষের ধর্ম : রবীন্দ্রনাথ ও সমকালীন প্রাসঙ্গিকতা’। এ বিষয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তব্য দেবেন অধ্যাপক ড. হায়াৎ মামুদ। আলোচনার পর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় ৩০ মিনিটের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়াও কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর এবং খুলনার দণিডিহি ও পিঠাভোগসহ ঢাকায় যথাযোগ্য মর্যাদায় তার জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। এ উপলে রবীন্দ্রমেলা, রবীন্দ্রবিষয়ক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে স্থানীয় প্রশাসন।
এ উপলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি তিন দিনব্যাপী কবির চিত্রশিল্প প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বাংলা একাডেমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সহযোগিতায় পতিসরের আলোকে কবিগুরুর জন্মবার্ষিকীর স্মরণিকা ও পোস্টার মুদ্রণ করবে।
বাংলা একাডেমিতে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে বাংলা একাডেমি। ঢাকাসহ দেশের সব শিাপ্রতিষ্ঠানে কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী যথাযোগ্যভাবে উদযাপন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসও এ উপলে কর্মসূচি গ্রহণ করবে।
যেসব জেলায় জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে না সে সব জেলার জেলা প্রশাসকরা স্থানীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি ও সুধীজনের সহযোগিতায় যথাযোগ্য মর্যাদায় কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী উদযাপন করবে। জাতীয়পর্যায়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও অন্য অনুষ্ঠানমালা বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি গণমাধ্যম সম্প্রচার করবে।
রাষ্ট্রপতির বাণী : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ দেয়া এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ বলেছেন, রবীন্দ্রনাথের বিশালতা এবং তার সৃষ্টির অপূর্ব মাধুর্যকে অন্তরাত্মা দিয়ে উপলব্ধি করতে হলে রবীন্দ্রচর্চার বিকল্প নেই। জীবনের আনন্দ-বেদনা, আশা-নিরাশা, সঙ্কট-সাফল্যে, উৎসব-পার্বণে রবীন্দ্রনাথ বাঙালির পরম আশ্রয়। তিনি আমাদের আত্মার আত্মীয়। রবীন্দ্রনাথ মানবতাবাদী অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবি। তার শিল্পীসত্তা ও মানবসত্তা ঐক্য ও সম্প্রীতির আভায় সমুজ্জ্বল।
রাষ্ট্রপতি বলেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যের একজন দিকপাল, উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার সাহিত্যসম্ভার যেমন বিশাল তেমনি বর্ণাঢ্য আপন মহিমায়। তার কালজয়ী লেখায় এক দিকে ঋদ্ধ হয়েছে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, অন্য দিকে তা বিশ্বসাহিত্যের অপরিহার্য উপাদানে পরিণত হয়েছে আপন বৈভব, আঙ্গিক, বহুমাত্রিকতা আর সার্বজনীনতায়।
তিনি বলেন রবীন্দ্রনাথ একাধারে কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, চিত্রশিল্পী, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ ও সমাজসংস্কারক। রবীন্দ্রনাথ কেবল তার কালের কবি নন, তিনি সর্বকালের। তিনি বাংলা সাহিত্যকে পূর্ণতা দিয়েছেন, দিয়েছেন বিশ্বসমাজে উচ্চ প্রতিষ্ঠা ও মর্যাদা। শিল্প-সাহিত্যে তার বিপুল অবদান আমাদের সাংস্কৃতিক সত্তার এক অপরিহার্য অংশ।
আবদুল হামিদ বলেন, কবির চিন্তাচেতনা, অন্তর্নিহিত ভাব ও দর্শন আমাদের জাতীয় ও ব্যক্তিজীবনে প্রাসঙ্গিক করে তুলতে পারলে সামগ্রিক উন্নয়ন ও কল্যাণ ত্বরান্বিত হবে। ‘বাঙালিমাত্রেই রাবীন্দ্রিক’ এ উপলব্ধির ধারণই হোক আমাদের নিত্যচলার পাথেয়।
প্রধানমন্ত্রীর বাণী : বিশ্বকবির জন্মবার্ষিকীতে দেয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের মননে বিশ্বকবির ব্যঞ্জনাময় উপস্থিতি শোষণ, বঞ্চনা, সাম্প্রদায়িকতা, সহিংসতা ও অমানবিকতা প্রতিরোধের মাধ্যমে বাঙালির অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখবে।
কালজয়ী এ কবি জীবন ও জগৎকে দেখেছেন অত্যন্ত গভীরভাবে যা তার কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক, গীতিনাট্য, প্রবন্ধ ও ভ্রমণ কাহিনী, সঙ্গীত ও চিত্রকলায় সহস্রধারায় উৎসারিত হয়েছে। সাহিত্য, সঙ্গীত ও শিল্পমাধ্যমের প্রতিটি শাখায় তার অনায়াস বিচরণ সত্যিই বিস্ময়কর। বিশ্বকবির সমস্ত সৃষ্টির মূলে নিহিত মানবতাবাদ তাকে বিশিষ্টতা দান করেছে। শান্তি ও মানবতার কবি রবীন্দ্রনাথ ছিলেন প্রকৃতির চিরন্তন সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যের সাধক। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জনের মাধ্যমে তিনি বাংলা সাহিত্যের বৈশ্বিক যাত্রাকে বেগবান করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ২৪ বছরের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রবি ঠাকুরের লেখনী আমাদের উজ্জীবিত করেছে। তার জাতীয়তাবোধ বাঙালির অনন্ত প্রেরণার উৎস। ‘কবির প্রতি অন্তহীন ভালোবাসায় ১৯৬১ সালে পাকিস্তানি শাসকচক্রের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আমরা রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ উদযাপন করেছি। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে তার কবিতা ও গান মুক্তিকামী বাঙালিকে উদ্দীপ্ত করেছে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। জীবনের প্রতিটি সমস্যা-সঙ্কট, আনন্দ-বেদনা এবং আশা-নিরাশার সন্ধিক্ষণে রবীন্দ্রসৃষ্টি আমাদের চেতনাকে আন্দোলিত করে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রবীন্দ্রনাথ ছিলেন জীবনমুখী শিক্ষাদর্শনের পথপ্রদর্শক। তার শিক্ষাভাবনা আমাদের বিজ্ঞানভিত্তিক, আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে অনুপ্রাণিত করে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন