আটক-তল্লাশির ক্ষমতা পাচ্ছে আনসার বাহিনী

বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা এবার অপরাধীকে আটক, দেহ তল্লাশি ও মালামাল জব্দের ক্ষমতা পেতে যাচ্ছে। পাশাপাশি বাহিনীতে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা হচ্ছে।

এসব বিধান রেখে ‘আনসার ব্যাটালিয়ন বিল-২০২৩’ সোমবার জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিলটি উত্থাপন করার পর তিন দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য এ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।

প্রস্তাবিত বিলের ৮ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যাটালিয়ন সদস্যের সামনে সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমোদনক্রমে অপরাধীকে আটক করে অবিলম্বে পুলিশের কাছে সোপর্দ করবে এবং ক্ষেত্রমত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশক্রমে আটক ব্যক্তির দেহ তল্লাশি, কোনো স্থানে প্রবেশ ও তল্লাশি এবং মালামাল জব্দ করতে পারবে।

বিলের ২১ ধারায় বিদ্রোহ সংগঠন বা বিদ্রোহ সংগঠনের প্ররোচণায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত বিলে অপরাধ বিচারের জন্য সংক্ষিপ্ত আনসার আদালত এবং বিশেষ আনসার আদালত নামে দুটি আদালত গঠনের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়াও সরকারি বা ব্যাটালিয়ন সদস্যের সম্পত্তি চুরি করা, যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে প্যারেডে অনুপস্থিত থাকা, কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা, দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রদর্শন অপরাধ হিসেবে গণ্য করে চাকরি থেকে বরখাস্ত, বাধ্যতামূলক অপসারণের শাস্তির কথা বলা হয়েছে।

এর আগে জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমাম বিলটির ওপর আপত্তি জানান। তিনি বলেন, পুলিশের সমান্তরাল ক্ষমতা আনসার বাহিনীকে দেওয়া হলে দুটি বাহিনীর মুখোমুখি অবস্থান হয়ে যেতে পারে। ফখরুল ইমাম বিলটি প্রত্যাহারের দাবি জানান। তিনি বলেন, কথায় আছে, বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড়। এখানে বাঁশের চেয়ে কঞ্চি শক্ত হয়ে গেছে। পুলিশের কাজটা যদি বিভক্ত এবং সমান্তরাল করা হয় তাহলে কাজটা করা যাবে না। দেশে সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীর আলাদা কাজ আছে। এলিট বাহিনীও করা হয়েছে।

ফখরুল ইমাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তার জন্য আনসার বাহিনী তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এই বিলে সাত ও আট ধারা অনুযায়ী পুলিশ যা করে তা করতে পারবে আনসার বাহিনী। পুলিশের মতো দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দেওয়া আছে। বিলটা এভাবে পাস হলে পুলিশের সমান্তরাল ফোর্স হয়ে যাবে আনসার বাহিনী। তিনি পুলিশ ও আনসারকে মুখোমুখি না করে পাশাপাশি রাখার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, অন্যথায় সমুহ বিপদ।

জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সামনে নির্বাচন। এতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মোতায়েন করতে হলে পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যদেরও মোতায়েন করতে হবে। পরে কণ্ঠভোটে ফখরুল ইমামের দাবি নাকচ হয়ে যায়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ আসলেই আনসার বাহিনীর সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। নির্বাচনের সময় যে পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য প্রয়োজন পুলিশবাহিনীতে এত পরিমাণ নেই। এই পর্যন্ত ৬ লাখ আনসার নিয়োগ করতে হয়েছে। নির্বাচনের সময় সমপরিমাণ আনসার বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। ২০১৩ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনকে ঘিরে অগ্নি সন্ত্রাসের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তখন দেশ অচল করে দেওয়ার সময় আনসার বাহিনী রাস্তাঘাট পরিষ্কার করেছেন। যানবাহন চলাচলের জন্য নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পুলিশের সমান্তরাল বাহিনী হিসেবে আনসারকে তৈরির পরিকল্পনা সরকারের নেই। সেনাবাহিনীকে সহযোগিতার জন্য পাহাড়ে আনসার রয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বাহিনী তৈরির ইচ্ছে নেই। আনসার বাহিনী অনেক কাজ করছে, তাদের একটা আইনের মাধ্যমে পরিচালনার জন্যই আইন করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত বিলে কোন সাংঘর্ষিক বিধান থাকলে তা সংসদীয় কমিটিতে সংশোধনও হবে বলে জানান মন্ত্রী।

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, চলতি অধিবেশনেই বিলটি পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একাদশ সংসদের সর্বশেষ চলমান অধিবেশন আগামী ২ নভেম্বর শেষ হয়ে যাচ্ছে। এর আগে চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর বিলটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়।

নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক প্রতিষ্ঠার চুক্তি বাস্তবায়নে আইন: নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক প্রতিষ্ঠার চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আইন করতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বিল-২০২৩ জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের পক্ষে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বিলটি উত্থাপন করার পর এটি পরীক্ষা করে এক সপ্তাহের সময় দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়, ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার সমন্বয়ে গঠিত ব্রিকস জোট ২০১৪ সালে অ্যাগ্রিমেন্ট অন দ্যা নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক সাক্ষরের মাধ্যমে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) নামে একটি বহুজাতিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে। বর্তমানে ৫টি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং বাংলাদেশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মিশরসহ মোট ৮টি দেশ এর সদস্য। ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ এনডিবির সদস্য লাভ করে। এনডিবির আর্টিকেল অব এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী এগ্রিমেন্ট অন দ্যা নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অনুসমর্থন করা প্রয়োজন।

বিলটি উত্থাপন করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ব্রিকস গোষ্ঠী থেকে এই ব্যাংকটি করা হচ্ছে। এটা হচ্ছে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং এই ব্যাংকে যারা সদস্য হবেন তারা এ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবেন। আমরা যেটা করছি এই ব্যাংক আইনটা করার সঙ্গে সঙ্গে সেইখান থেকে ইতোমধ্যে আমদের প্রস্তাব অনুযায়ী তারা আমাদেরকে অর্থাৎ বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে। এই আইনটা করার পরই আমরা সেই চুক্তিতে সদস্য হবো। সদস্য হওয়ার পরই সেই ঋণটা নিতে পারবো। সেই জন্যই এই আইনটা পাস করা অত্যন্ত জরুরি, সে জন্যই এই বিলটি আনা হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, এই ব্যাংক থেকে যে ঋণ দেওয়া হবে সেটা শুধু ডলারে ঋণ দেওয়া হবে না, এটা একটি শিথিলযোগ্য, স্টার্লিং পাউন্ড, ইউরো, ডলার, রুবল, ইউয়ান যে কোনও কারেন্সিতে ঋণ দিতে পারবে এই ব্যাংকটা। সেই জন্য আমার মনে হয় অত্যন্ত অত্যাধুনিক একটা ব্যাংক হচ্ছে। এটা বহুজাতিক ব্যাংক, সেই জন্যই এই আইনটা অত্যন্ত প্রয়োজন যেন নতুন যাত্রার ব্যাংকটার সাথে আমরা থাকতে পারি এবং বেনিফিটগুলো পাই। বেনিফিট পাওয়ার রস্তাটাও পরিষ্কার হয়ে গেছে যে অলরেডি প্রস্তাব দেওয়া হয়ে গেছে এবং তারা সম্মত, নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার জন্য।

ফিলিস্তিনের জন্য একটি দিন: ফিলিস্তিন বিষয়ে জাতীয় সংসদে সাধারণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় সংসদে একটি দিন নির্ধারণ করে ১৪৭ বিধিতে এ আলোচনা হবে।সোমবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদের বৈঠকে এমন তথ্য জানান।

অধিবেশন চলাকালে পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্য দেওয়ার জন্য স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। এ সময় স্পিকার জানতে চান, তিনি কী বিষয়ে বক্তব্য রাখবেন। তখন মাইজভাণ্ডারী বলেন, তিনি ফিলিস্তিন নিয়ে বক্তব্য দেবেন।এরপর স্পিকার বলেন, আজ এ বিষয়ে বলার প্রয়োজন নেই। কারণ চলতি অধিবেশনে একটি দিন নির্ধারণ করা হবে যেদিন এ বিষয়ে আলোচনা হবে। রোববার চলতি সংসদের ২৫তম অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনের শুরুতে ইসরাইলের হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের জন্য সংসদ শোক জানায়।

পাস হচ্ছে না গণমাধ্যমকর্মী বিল: চলতি একাদশ সংসদে পাস হচ্ছে না গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলি) বিল। নির্দিষ্ট সময়ে বিলটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিতে না পারায় সোমবার জাতীয় সংসদে আরও ৯০ দিন সময় চান সংসদীয় কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রস্তাবটি ভোটে দিলে সংসদ তাতে অনুমোদন দেয়।

গত বছরের ২৮ মার্চ আলোচিত গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলি) বিল-২০২২ জাতীয় সংসদে তুলেছিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বিলটি ৬০ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিবেদন দিতে না পেরে বারবার বাড়তি সময় নেয় সংসদীয় কমিটি।

সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, বিলটি নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে এখনও কোনো ধরনের আলোচনাও হয়নি। চলতি সংসদে এই বিলটি নিয়ে প্রতিবেদন জমা না দিলে তা তামাদি হয়ে যাবে। আসন্ন দ্বাদশ সংসদে পাস করতে হলে বিলটিতে নতুন করে সংসদে তুলতে হবে।