‘আদর্শবান ছাত্র ও সন্তানদের ছাত্রলীগে জায়গা করে দিতে হবে’
রুবাইত হাসান : তরুণরাই লড়বে, তরুণরাই লড়ে, তরুণরাই লড়েছে ৫২’তে। জয় করেছে মায়ের মুখের ভাষা আ মরি বাংলা ভাষা। পৃথিবীতে আমরাই একমাত্র জাতি যারা রাজপথ রক্তে লাল করে, জীবন বিসর্জন দিয়ে মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষায় প্রতিষ্ঠিত করেছি।যে ভাষা আন্দোলন আর বিজয় আমাদের পৃথিবীর সবার চাইতে ভাষার দিক থেকে সর্বোচ্চ মর্যাদা এনে দিয়েছে।
৭১’ এ মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা আর আত্নবিশ্বাস জুড়িয়েছিল তরুণদের এই ভাষা আন্দোলন।ছাত্ররাই ছিল যার কর্ণধার।
ছাত্র আন্দোলন যে কোন আন্দোলনের চেয়ে আলাদা, ছাত্র সমাজের শক্তি যে কোন শক্তির চেয়ে আলাদা।
অন্যায়, অবিচারকে পুঁতে ফেলতে আর আলোকিত ভবিষ্যৎ-এর আশা নিয়ে বঙ্গবন্ধু তাই নিজ হাতে ছাত্রদের নিয়ে গঠন করে ছিলেন ছাত্রলীগ।যা আজকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ছাত্র সংগঠন।ছাত্রলীগের ইতিহাস ত্যাগ আর গৌরবের ইতিহাস।ঐতিহ্যবাহী এক ছাত্র সংগঠনের নাম বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া যেমন রয়েছে মহানগর, জেলা বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ কমিটি তেমনি পৌর, উপজেলা ও সর্বশেষ তৃণমূল তথা প্রতিটি ইউনিয়নেও রয়েছে ছাত্রলীগের কমিটি।অর্থাৎ তৃণমূল পর্যন্ত রয়েছে ছাত্রলীগের অবস্থান। বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাড়া বিশেষ করে তৃণমূল ও উপজেলা এমনকি জেলা কমিটি গুলোতেও রয়েছে অ-ছাত্রের ছড়াছড়ি। আবার ডানপিটে, আর নামে মাত্র কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে ভর্তিরত কিংবা নামে মাত্র ছাত্রর সংখ্যাও ছড়াছড়ি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এরাই বড় বড় পদের কাণ্ডারি। প্রায়শই পত্রিকার পাতায় ছাত্রলীগের নেতা বা কর্মী খুন করেছে, ধর্ষন করেছে এটা করেছে ওটা করেছে সংবাদ গুলো পড়ে সাধারন জনতার ভীতর এক আতঙ্ক বিরাজ করছে। ছাত্রলীগের পরিচয় দিলে পুলিশও পিছু হটে।আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভয় ভিতী দেখিয়ে চলে চাঁদাবাজি,ছাত্রলীগের কথায় আজ কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় হোস্টেলে ছাত্র উঠানে হয় আবার তাড়ানোও হয়।ক্লাস করা বাধ্যতামূলক নয় বরং ছাত্রলীগের মিছিলে যোগদান করা হয়ে গেছে বাধ্যতামূলক।ছাত্রদের সাথে সম্পর্ক যুক্ত নয় এমন বিষয় পর্যন্ত হেন্ডেলিং করে ছাত্রলীগ। কিন্তু দুঃখের বিষয় এগুলো একটিও ছাত্রলীগের সংবিধানে নেই।
সাধারণ মানুষ যেমন বলছে, এরা ভয়ংকর এরা বিষাক্ত, সরকার পক্ষ নেতারা তেমনি বলছেন এরা অনুপ্রবেশকারী, জামাআত শিবির কিংবা বিএনপির কর্মী। অনুপ্রবেশকারী হোক আর ভালো কর্মীই হোক তারা যে আদর্শবান ছাত্র নয়, নেই মানবিক মূল্যবোধ তা পরিষ্কার।কিংবা যদি ধরেই নেই অনুপ্রবেশকারী তাহলে প্রশ্ন উঠছে ছাত্রলীগ মানে কি খোলা দরজার কোন ড্রয়িং রুম না কী শয়ন কক্ষ যে কারো অনুপস্থিতিতে অনুপ্রবেশকারীরা খোলা দরজা দিয়ে ঢুকে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে আর স্থানীয় নেতা কর্মীরা কিছুই জানেননা, কিছুই শুনেন না কিছুই দেখেন না?
বিষাক্ত হাত ধরে এ বিষাক্ত ছেলেরা মুখে বিষ নিয়ে ছাত্রলীগ নামক গুহায় চিন্তা ছাড়ায় নিঃশ্বাস ফেলছে আর বাইরে এসে সর্বনাশ করছে এসব বিষাক্ত নেতা কর্মীদের আগে দল থেকে বহিষ্কার করতে হবে। অনেক জায়গায় দল ক্ষমতায় আসার পর এমপি মহোদয়রা মালা পরিয়ে বিএনপি জামাআতকে দলে জায়গা করে দিয়েছেন। এই বিচার কে করবে? যখন এসব চালবাজিরা খারাপ কাজে লিপ্ত হচ্ছে, আর পত্রিকায় খবর প্রকাশ হচ্ছে সাধারণ জনতা বিভ্রান্তিতে ব্যক্তিকে নয় বরং সংগঠন নিয়ে কথা বলছে। জনগনের মুখ ধমক দিয়ে বন্ধ করলেও, ভীতর ফুঁসে উঠবে আর বৃদ্ধা আঙ্গুল হয়তো মুখের কথা কালিতে মেরে দিবে।
আগের রাজা আর তার উত্তরসূরী রাজপুত্রের মতো চলছে সংগঠন।বাবা মেয়র আর ছেলে/মেয়ে ওই এলাকার ছাত্রলীগ সভাপতি। বাবা এমপি আর ছেলে/মেয়ে/ভাতিজা/নাতি ওই এলাকার ছাত্রলীগের সেক্রেটারি, মামা ইউনিয়ন সভাপতি ভাগনা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক!
এভাবেই চলছে…..!
এখনই থামাতে হবে।
ছাত্র রাজনীতি হয়ে গেছে দল কেন্দ্রীক ক্ষমতা কেন্দ্রীক। দেশ উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে না এমনও কিন্তু না। কিন্তু আপনি যদি নামায পড়েন অপর দিকে ধর্ষণ করেন তাহলে আপনার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
প্রকৃত ছাত্রদের যদি সংগঠনে জায়গা দেওয়া হয়,সৎ পরিশ্রমী ত্যাগী কর্মীদের যদি উচ্চ পদ গুলো দেওয়া হয়,দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ, সৎ চরিত্র, সমাজ তথা দেশ উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে, আদর্শবান ছাত্র, আদর্শবান সন্তানদের যদি জায়গা করে দেওয়া হয়।তবে এই ছাত্ররাই পাল্টে দিবে ভ্রান্ত ধারনা, পাল্টে দিবে পরিস্থিতি, পাল্টে দিবে পরিবেশ, পাল্টে দিবে ছাত্র রাজনীতি জয় হবে বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগ সংবিধান আর বিজয় হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ, উন্নত বিশ্বের বাংলাদেশ।
সময় আসছে , চলে এসেছে, ছাত্রলীগ জাতীয় সম্মেলন। কেন্দ্রীয় কমিটিই যেহেতু দিক নির্দেশনা আর পরিচালনা করবে সংগঠন তাই শুরুটা এখান থেকেই করতে হবে।ছাত্ররা কেন পড়া লেখা বাদ দিয়ে পদের জন্য দৌড়াদৌড়ি করবে বরং তাদেরকেই খুঁজে বের করে পদ দিন যারা সমাজ, দেশ উন্নয়ন নিয়ে ভাবে আর একজন ছাত্র।দেশ উন্নয়নে যে ছাত্র রাজনীতি করবে সেটিই প্রকৃত রাজনীতি। আর এটিই বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগ। পদ দেওয়ার আগে তার পরিচিতি, তার পারিবারিক সামাজিক পরিচিতি এবং ব্যাকরিপোর্ট তদন্ত করে পদ দেওয়া হোক। জয় হোক ছাত্রলীগের।চলো বাংলাদেশ। চলো বহুদূর…
লেখক: সংগঠক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন