‘আনন্দবাজারে লেখা শুরুর পর থেকেই তসলিমার ঝামেলা শুরু হয়’
সমাজের সর্বত্রে এখন প্রবল মূল্যবোধের সংকট অভিযোগ করে বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও সংবাদকর্মীদের প্রতি এক্ষেত্রে বিশেষ যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমান। তিনি বলেন, তার সম্পাদিত ‘যায়যায়দিন’ পত্রিকার সম্পদকীয় নীতিমালায় কোনো প্রকার ধর্মীয় মূল্যবোধকে আঘাত না করার নীমিালা অনুসরণ করা হতো। একারণেই তসলিমা নাসরিনের লেখা পরবর্তীতে আর ছাপা হতো না। তসলিমা আনন্দবাজার পত্রিকায় লেখা শুরুর পর থেকেই তার ঝামেলা শুরু হয়। কারণ তারা ‘ওই লেখাগুলো’ প্রকাশ করতে শুরু করে।
বাংলাদেশ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন ইউকে ও সাপোর্ট লাইফ ইউকে’র উদ্যোগে গত শনিবার আয়োজিত মতবিনিময় ও ইফতার মাহফিল পূর্ব আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। লন্ডনের মাইক্রো বিজনেস সেন্টারে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে কানাডার সাপ্তাহিক ‘নতুন দেশ’।
কিভাবে জামিন পেলেন? এই প্রশ্নে শফিক রেহমান বলেন, জামিন পেতে আমাকে আপিল বিভাগে মামলা করতে হয়েছে, প্রধান বিচারপতি সিনহার আপিল বিভাগের রায়ে তিনি জামিন ও পরবর্তীতে পাসপোর্ট ফেরত পান।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালে শেরাটন (তৎকালীন ইন্টারকন্টিনেন্টাল) হোটেলের জিএম ফাইনান্সের চাকুরি ছেড়ে বিলাতে এসে যুদ্ধের স্বপক্ষে (বিবিসি`তে) কাজ করি। আলমগীর কবির, জহির রায়হান ছাড়া আমাদের বেশীরভাগ বন্ধুরাই চাকুরি ছেড়ে যুদ্ধে যাননি। আমি ভেবেছিলাম, যদি আমি মুক্তিযুদ্ধের কথা লিখি, তাহলে আপনারা মধ্যবিত্ত শ্রেণির সুবিধাবাদীতার কথা জানবেন।
বাংলাদেশ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন ইউকে’র সভাপতি কে এম আবু তাহের চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও বিশিষ্ট সাংবাদিক শামসুল আলম লিটনের পরিচালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. কে এম এ মালিক, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. হাসনাত হোসাইন, সাপোর্ট লাইফ সভাপতি ড. মামুন রহমান এফসিএ, ব্যারিস্টার তমিজ উদ্দীন আহমেদ, সাপোর্ট লাইফ’র ব্যারিস্টার মাহাদী হাসান, লন্ডন মেইল সম্পাদক ড. এম এ আজিজ, সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদক এমাদুল হক চৌধুরী, শিক্ষাবিদ আলিয়ার হোসেন, নির্বাসিতে সাংবাদিক ওলিউল্লাহ নোমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি মাহবুব রহমান, আইনজীবী ও টিভি ব্যক্তিত্ব নাশিত রহমান, ব্যারিস্টার ইকবাল হোসেন, বাংলা টিভির চিফ রিপোর্টার এম এ কাইয়ুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক সিনেট সদস্য নসরুল্লাহ খান জুনায়েদ, সাপ্তাহিক দর্পন সম্পাদক রহমত আলী, ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন, নাসিম চৌধুরী, মিসেস আনজুমান আরা বেগম চৌধুরী, সাংবাদিক ও কবি শিহাবুজ্জামান কামাল।
অনুষ্ঠানে অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাপ্তাহিক জনমত’র প্রধান সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা, ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ, ঢাকা থেকে আগত দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার সিনিয়র ফটো সাংবাদিক ইকবাল হাসান নান্টু, আব্দুল আউয়াল মামুন, সাংবাদিক এনাম চৌধুরী, আখতার মাহমুদ, ইউকে বিডি নিউজ সম্পাদক শোয়েব কবীর, মো. মোহসীন প্রমুখ।
ড. কে এম এ মালেক বাংলাদেশে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের উপর সরকারের দমননীতির সমালোচনা করে বলেন, গণমাধ্যমের গলাচিপে অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতেও কোন স্বৈরাচার ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে পারবে না।
সাপোর্ট লাইফ’র সভাপতি ড. মামুন রহমান বলেন, দায়িত্ব, অধিকার ও নিরাপত্তা- এই বিষয়গুলো পরস্পর সম্পর্কিত। সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের পথ বেছে নিয়েছে।
সাংবাদিক ও সিভিল রাইট অ্যাক্টিভিস্ট শামসুল আলম লিটন বলেন, সংবাদপত্র ও বিচার বিভাগের গলাটিপে অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। ইতিহাসের শিক্ষা থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না’ উল্লেখ করে তিনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণকারীদের প্রতি আত্মহননের পথ থেকে সরে আসার আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন ইউকে’র সভাপতি কে এম আবু তাহের চৌধুরী সাংবাদিক শফিক রেহমানকে জাতির প্রকৃত ও আপোষহীন বিবেক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তিনি কখনো অন্যায়ের সংগে আপোষ করেননি। দেশ ও সমাজের অগ্রগতিতে তাঁর অকৃত্রিম অবদান ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
পরে সাংবাদিক শফিক রেহমানের দীর্ঘায়ু ও তার স্ত্রী তালেয়া রেহমানের আশু রোগমুক্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
সূত্র: নতুন দেশ
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন