আপনারা ৩০০ সিট চান, বলেন দিয়ে দেই : ড. কামাল
ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে না পারলে ভয়াবহ পরিণতি হবে। দেশে সুশাসন আছে- এমনটি যদি কেউ দাবি করে থাকে আমি বলব, সে মিথ্যা বলছে।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে বুধবার এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
৭০তম বিশ্ব মানবাধিকার দিবস ও ৪৭তম বিজয় বার্ষিকী উপলক্ষে ‘মানবাধিকার, সুশাসন ও ভোটাধিকার’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ মানবাধিকার ফেডারেশন (বিএইচআরএফ)।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘তথাকথিত নির্বাচনে আপনারা যদি ৩০০ সিট চান, তাহলে বলেন আমরা দিয়ে দেই। আপনারা আরও পাঁচ বছর থাকবেন, এটাতো বলেই যাচ্ছেন। এভাবে চাওয়া থেকে আমাদের কাছে বলেন। আমরা হাত তুলে মেনে নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমি বলব, সবাই মেনে নিয়েছে। এভাবে নির্বাচনের নামে প্রহসনের মধ্য দিয়ে ৩০০ লোককে নির্বাচিত করার চেষ্টা চলছে।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ড. কামাল বলেন, ‘আপনি তো বলেছেনই, আরও পাঁচ বছর থাকতে চান। অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করতে চান। এ পাঁচ বছরের পর আরও কিছু কাজ অসম্পূর্ণ থাকবে, তখন আরও পাঁচ বছর থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করবেন।’
‘অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করার জন্য সময় এভাবেই বৃদ্ধি করা যায়, তাহলে আলহামদুলিল্লাহ। সবাই বলবে আরও পাঁচ বছর থেকে অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করি, এটা নিয়মে পরিণত হবে, ’যোগ করেন গণফোরাম সভাপতি।
ড. কামাল বলেন, ‘যদি মনে করা হয় মানবাধিকার সংবিধানে লেখা আছে, চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমি বলব, চিন্তার অবশ্যই কারণ আছে। এই যে রাস্তায় পুলিশ ধরছে, আমি অবাক হচ্ছি এরা কোন আইনে মানুষকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এভাবে ধরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা পুলিশের নাই।’
তিনি বলেন, ‘এখন যারা ক্ষমতায় আছেন, তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আপনারা কোন ক্ষমতা বলে শাসন করছেন- সেটা আমরা পরে বুঝব। এখন যেটা করছেন একদমই সংবিধান পরিপন্থী কাজ করছেন।’
ড. কামাল বলেন, ‘আমি উচিত কথা বলছি, ধরে নিয়ে যান আমাকে। আপনার পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে আমি এ কথা বলছি। খুব সাহসী আপনারা ধরেন আমাকে। আশ্চর্য স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরে এসব দেখতে হচ্ছে।’
‘যারা মনে করবে আমরা ক্ষমতা পেয়ে গেছি, মানবাধিকারের কথা মানতে হবে না। পুলিশকে এভাবে অপব্যবহার করতে থাকেন- একদিন আপনাদের বিচার হবে, শাস্তি হবে। এখানে এবং পরকালে। এখানে যদি কোনো কারণে পার পেয়ে যান, পরকালে আপনারা পার পাবেন না ইনশাআল্লাহ, সেটা মনে রাইখেন,’ বলেন ড. কামাল।
বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষরিত সংবিধান দেখে বুঝার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘সংবিধান শ্রদ্ধার সঙ্গে মানার চেষ্টা করেন। দেশ এভাবে চলতে পারে না। সংবিধান লংঘন করলে বঙ্গবন্ধুকে সম্মান করা হয় না। স্বাধীনতার ওপর আঘাত করা হয়। এটা থেকে বিরত থাকতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভোটের অধিকার সবাই ভোগ করুক। স্বাধীনভাবে নির্ভয়ে তারা যেন ভোট দিতে পারেন। স্বাধীন দেশে যদি নাগরিকেরা ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে সেটি হবে স্বাধীনতার ওপর আঘাত। এ আঘাত দেশদ্রোহিতার শামিল। কেউ যদি মনে করে দেশদ্রোহিতা করে পার পাওয়া যায়, তা ঠিক না। আজ হোক কাল হোক তার বিচার হবেই।’
নির্বাচন কমিশনকে তার গুরুদায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘সব ক্ষমতা আপনাদের। জনগণের ভোটের অধিকার আপনাদের রক্ষা করতে হবে। এটা আপনাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব। সরকার যদি কোনো সংবিধান পরিপন্থী কাজ করে এর থেকে বিরত রাখার ব্যবস্থা করুন। সরকারকে আদেশ দেন, বলেন পুলিশ সরান। নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা দেশের জন্য ও দেশের স্বাধীনতা ও ভবিষ্যতের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনারা ক্ষমতা কাজে লাগান ইনশাআল্লাহ ভালো নির্বাচন হবে। উজ্জ্বল ভবিষৎ সামনে দেখা যাচ্ছে। আর এটা না করলে নির্বাচনের ওপর কোনো আঘাত দেয়া হয়, তাহলে ভয়াবহ পরিণতি হবে।’
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি ড. গোলাম রহমান ভূঁইয়া।
সংগঠনটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোটেক ড. মোহাম্মদ শাহজাহানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন- সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) নূরুদ্দিন খান, সাবেক আইজিপি ড. এম এনামুল হক, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. নাজুমল আহসান কলিমউল্লাহ প্রমুখ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন