আবারও বন্ধের মুখে কলকাতার মেগাসিরিয়াল
আবারও বন্ধের মুখে কলকাতার মেগাসিরিয়াল। পাওনা পারিশ্রমিক এখনও মেলেনি তাই বাধ্য হয়ে আর্টিস্টস ফোরামকে পদক্ষেপ নিতে বিশেষ অনুরোধ করা হয়েছে কলকাতার মেগাসিরিয়ালের অভিনেতা-অভিনেত্রী ও কলাকুশলীদের পক্ষ থেকে।
এই তো ক’দিন আগের স্মৃতি এখনও টাটকা। কিছুদিন আগে কলকাতার চলচ্চিত্র-পল্লী খ্যাত টালিগঞ্জে টেলিভিশনের মেগাসিরিয়ালের শিল্পীরা লাগাতার ধর্মঘট শুরু করেছিলেন। বাংলা ধারাবাহিকের শুটিং বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সে সময় সব বিনোদন চ্যানেলেই পুরনো এপিসোডের টেলিকাস্ট হয়।
টেলিপাড়ার ভেতরের খবর, আবারও তেমনটা হতে পারে সামনের ক’দিনের মধ্যে। পশ্চিমবাংলার একজন প্রযোজকের অধীনে থাকা চারটি বাংলা ধারাবাহিক ‘জয় বাবা লোকনাথ’, ‘মহাপ্রভূ শ্রী চৈতন্য’, ‘খনা’ আর ‘আমি সিরাজের বেগম’-এ অভিনেতা-অভিনেত্রী থেকে টেকনিশিয়ানদের পাওনা টাকা বাকি থাকার কারণে, সেসব ধারাবাহিক চ্যানেলগুলোর উদ্যোগেই চলে যায় নতুন প্রযোজকের কাছে। এরপর সব পক্ষের উপস্থিতিতে মিটিং করে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের জানিয়ে দেওয়া হয় যে, ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাঁদের যা টাকা পাওনা আছে, তা দিয়ে দেওয়া হবে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে।
প্রযোজকের এক ঘনিষ্ঠ সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, তিনিও চ্যানেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন আর্টিস্টদের সরাসরি পাওনা টাকা মিটিয়ে দিতে। এমন আশ্বাস পেয়ে, যাঁরা পরে এসব ধারাবাহিকের দায়িত্ব নিয়েছেন সেসব প্রযোজনা সংস্থার হয়ে কাজে নেমে পড়েন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা।
কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, ১৫ এপ্রিল পার হয়ে গেলেও অভিনেতা-অভিনেত্রীরা পাওনা টাকা পাননি। বুধবার একটি চিঠির মাধ্যমে টলিউডের বহু শিল্পী একত্রিত হয়ে (সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে) দাবি করেছেন যে সাত দিনের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার। কোন পথে এই সমস্যার সমাধান হবে, তা-ও দুই দিনের মধ্যে জানতে চান তাঁরা। এই তালিকায় রয়েছেন তিতাস ভৌমিক, সৌমিলি বিশ্বাস, মৌসুমী ভট্টাচার্য, বাদশা মৈত্র, বিদীপ্তা চক্রবর্তী, অরিজিৎ চৌধুরীর মতো অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নাম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিনেতার বলেন, যেহেতু আর্টিস্ট ফোরামের কথায় এতদিন কাজ চালিয়ে গিয়েছি আমরা, এবার চাই আর্টিস্ট ফোরামের সকলেই এই সমস্যা সমাধানে শামিল হোক। বিভিন্ন মিটিংয়ে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় আশ্বাস দিয়েছেন যে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এবার দ্রুত সমস্যার সমাধানেও ওঁকে পাশে পেতে চাই।
আর্টিস্ট ফোরামের তরফে অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায় এ দিন জানান, পেমেন্ট-সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি আমরা। তবে সমস্যা এতই গভীর, ক’দিনের মধ্যে ম্যাজিকের মতো পুরো সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। কিন্তু টলিপাড়ার খবর এটাও, অতিদ্রুত সমস্যার সমাধান না হলে অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীই জোট বেঁধে কাজ করা বন্ধ করে দেবেন। সে ক্ষেত্রে আবারও ধারাবাহিকের শুটিং বিঘ্নিত হতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, টলিউডের আরো দুই নামী প্রযোজক যাঁদের হাতে টেলিভিশনের একাধিক ধারাবাহিক রয়েছে, তাঁদের পক্ষ থেকেও আর্টিস্ট পেমেন্ট অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। টেলিপাড়ায় সামনের দিনগুলো যে বিশেষ ভালো নয়, তা স্পষ্ট।
‘জয় বাবা লোকনাথ’-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছেন সৌমিলী বিশ্বাস। সৌমিলীর দাবি, ফেব্রুয়ারী থেকে আমাদের অনেকেরই পারিশ্রমিক বাকি। প্রযোজক ইদানীং আর ফোনও ধরছেন না। পারিশ্রমিকের জন্য সরাসরি প্রযোজকের সঙ্গে কথা বলতে পারি না আমরা, শিল্পী সংগঠনের মাধ্যমে যেতে হয়। সংগঠনকে আমরা এই ব্যাপারে জানিয়েছি কিন্তু বকেয়া টাকা কবে মেটানো হবে তা কিছুই জানি না। তবে নতুন প্রযোজনা সংস্থা দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন সময়মতো পারিশ্রমিক পাচ্ছি আমরা।
বাংলা টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে সংকট যে গভীর হচ্ছে, সেটা মেনে নিচ্ছেন শিল্পী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অরিন্দম গাঙ্গুলী। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, এক একজন শিল্পীর ১০ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত বাকি। এখানে তো কেউ বিনা পারিশ্রমিকে শ্রম দান করতে আসেন না। চ্যানেল কর্তৃপক্ষ ও প্রযোজকের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি আমরা কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো সুরাহা মেলেনি। পরিস্থিতি খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
একই অভিযোগ প্রযোজক-পরিচালক অরিন্দম শীলের বিরুদ্ধেও। তাঁর ‘ভূমিকন্যা’ ধারাবাহিকটির সম্প্রচার বন্ধ হয়ে গেছে পাঁচ মাস আগে। কিন্তু এখনও পারিশ্রমিক বকেয়া প্রায় সব অভিনেতা-অভিনেত্রী ও কলাকুশলীর। তবে অরিন্দমের দাবি, জুনিয়র কলাকুশলীদের বকেয়া টাকার চেকে তিনি এরই মধ্যে সই করে দিয়েছেন। মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই টাকা পেয়ে যাবেন তাঁরা। ফলে অবস্থাবিশেষে এখন হুমকির মুখে টেলিভিশনের মেগা সিরিয়ালের ভবিষ্যৎ। ফেডারেশন, আগস্ট আর্টিস্ট ফোরাম এবং প্রযোজকদের মধ্যে এই বিরোধের কারণ পাওনা টাকা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন