‘আমার বাবা, অামার ধর্ষক…’
বাবার বাড়ি থেকে লাল শাড়িতে বধূবেশে স্বামীর বাড়িতে যাবেন। বাবা-মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে শুরু হবে নতুন জীবনের। অধিকাংশ মেয়েরই এমন একটি স্বপ্ন থাকে। অন্যান্য অনেক মেয়ের মতো ইয়াসমিনও (মূল নাম না প্রকাশের অনুরোধ থাকায় ছদ্মনাম) রূপকথার মতো সেই স্বপ্নের মতো বধূবেশে স্বামীর বাড়ি যেতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু তার এই স্বপ্নে খলনায়ক বনে যান নিজের লম্পট বাবা; যিনি নিজের কিশোরী মেয়েকে ধর্ষণ করেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সেই নিজের বাবার কাছে তিনবার ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন জানিয়ে ইয়াসমিন বলেন, ‘তিনি আমার জীবন নিয়ে খেলেছেন।’
‘আমি অভিশপ্ত; এর কারণ তিনি, সব মানুষ; যারা আমার স্বপ্নকে ক্ষত-বিক্ষত করেছে।’ তিনি বলেন, ‘পাশবিক লালসায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিল ওই মানুষটি। রক্তাক্ত হওয়ার পর বার বার আকুতি জানিয়েও তার লালসা থেকে রেহাই পাইনি।’ প্রতিনিয়ত শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতে বাধ্য করা হতো বলে জানান এই কিশোরী।
চোখের পানির সঙ্গে লড়াই করছেন এই কিশোরী। নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে পাকিস্তানের জাতীয় দৈনিক এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে মুখ ঢেকে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।
পাষণ্ড বাবার পাশবিকতার কথা স্মরণ করে ইয়াসমিন বলেন, ‘তার মা তাকে উদ্ধারে এগিয়ে এলে পুরো পরিবারকে খুন করার হুমকি দিতেন। এমনকি মাকে তালাকেরও হুমকি দিতেন। এমন অবস্থায় ছোট এক ছেলে ও অন্য ছয় মেয়েকে নিয়ে তালাকের কথা চিন্তাও করতে পারতেন না মা। তিনি দিশেহারা হয়ে পড়তেন।’
মেয়েটি তার বাবার হাত থেকে বাঁচতে কোরআন হাতে নিয়ে সামনে যেতেন; এরপরও বাবার পাশবিক লালসা থেকে রক্ষা পেতেন না তিনি। ‘আমার দাদার কাছে যেতাম; তিনি বিশ্বাস করতেন না। তিনি বলতেন, আমি মিথ্যা বলছি; তার ছেলে এমন কাজ কখনোই করতে পারে না। দাদা আমাকে ফেরত পাঠাতেন। দাদা আমাকে বলতেন, তিনি আমার জন্য কিছুই করতে পারবেন না।’
ধর্ষণের শিকার এই কিশোরী দুঃসহ স্মৃতি স্মরণ করে বলেন, ‘তার বাবা একদিন তাকে জোর করছিলেন; এমন সময় বাবাকে হাতে-নাতে ধরে ফেলেন মা।’ কিশোরী বলেন, তার মা ওই সময় চিৎকার করে কান্না শুরু করেন। কিন্তু এতে রাগে ফেটে পড়েন পাষণ্ড এই মানুষটি; মাকে প্রচণ্ড মারধর করেন এবং তার গলায় ছুরি ধরেন। ‘যদি শব্দ করা হয় তাহলে মেয়েকে খুন করবেন বলে তিনি হুমকি দেন।’
ইয়াসমিন বলেন, তার মা বিয়ের কথা চিন্তা করে পরিবারের সদস্যদের কাছে ঘটনাটি লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করতেন। একই সঙ্গে কিশোরীর মা তার ভাইদের সঙ্গে কথা বলেছেন; যারা ধর্ষক ওই পিতাকে শাস্তির মুখোমুখি করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
একদিন ওই কিশোরীর মা বাড়িতে প্রবেশের পর দেখতে পান, মেয়েকে নিষ্ঠুরভাবে মারধর করছে তার বাবা। এসময় তিনি জানতে চান, ‘কেন মেয়েকে মারধর করা হচ্ছে। জবাবে ওই ব্যক্তি বলেন, তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতে মেয়ে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।’
মারধরের হাত থেকে মেয়েকে উদ্ধার করেন মা। পরে মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ এনে নিজের ভাইদের সহায়তায় থানায় এফআইআর দায়ের করেন ওই কিশোরীর মা। যখন তাকে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নেয়া হয় তখন ইয়াসমিনের কাছে ক্ষমা চায় তার বাবা। ধর্ষণের শিকার এই কিশোরী বলেন, ‘তিনি এখন তার বাবার প্রতি সহানুভূতি দেখানোর মতো অবস্থায় নেই।’
‘তোমার পা ধরে, কোরআন হাতে নিয়ে যখন তোমার কাছে ক্ষমা চেয়েছিলাম তখন তুমি সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে গিয়েছিলে, শাস্তিই তোমার প্রাপ্য।’
১৩ বছরের এই কিশোরী তার বাবার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ও পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতির প্রতি অনুরোধ জানান। বাবার কাছে পাশবিক ভোগান্তির যে শিকার হয়েছেন সেজন্য যাতে সুবিচার পান সেই ব্যবস্থা নেয়ারও আহ্বান জানান ইয়াসমিন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তার (আইও) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার অপরাধ ও দোষ স্বীকার করেছেন সন্দেহভাজন।
*এক্সপ্রেস ট্রিবিউন অবলম্বনে সাইফুজ্জামান সুমন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন