আর্জেন্টিনাকে বিধ্বস্ত করে দ্বিতীয় রাউন্ডে ক্রোয়েশিয়া
মাথা নিচু করে রয়েছেন। রাজ্যের হতাশা মাসেরানোর চেহারায়। হিগুয়াইনের মাথা চুইয়ে ঘাম ঝড়ে পড়ছে। কাবায়েরোর চোখে মুখে ক্ষমা চাওয়ার আকুতি। ৮০ মিনিটে লুকা মদ্রিচ যখন গোল করলেন তখনকার চিত্র এটি। এক ছবিতেই পুরো আর্জেন্টিনার চিত্র। বিশ্বকাপে শত আশা নিয়ে আসলেও টানা দুই ম্যাচ হেরে বিশ্বকাপ স্বপ্ন কার্যত শেষ হয়ে গেল মেসিদের। এখন অন্যদের উপর নির্ভর করছে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপের পরের রাউন্ডে যাওয়া।
বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার লক্ষ্যে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মাঠে নামে আর্জেন্টিনা। প্রথম ম্যাচে আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ১-১ ব্যবধানে ড্র করে খাদের কিনারায় মেসির দল। সেখান থেকে বের হওয়ার লক্ষ্যে দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামে মেসিরা। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ানদের কাছে কোথাও পাত্তা পায়নি মেসিরা। হোর্হে সাম্পাওলির দলকে ৩ -০ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করলো মদ্রিচ-রাকিতিচরা।
দারুণ মিডফিল্ড নিয়ে ম্যাচের শুরুতেই আক্রমণ করতে থাকে ক্রোয়েশিয়া। ম্যাচের ৪ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারতো ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু পেরেসিচের বা পায়ের শট আঙুলের টোকায় রক্ষা করেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক কাবায়েরো। ১২ মিনিটে মেসিও সুযোগ পেয়েছিলেন গোলের। সতীর্থের মাথার উপর দিয়ে চিপ করা বলে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন এই বার্সা তারকা।
২১ মিনিটে লেফট উইং দিয়ে মার্কস আকুনিয়ার আচমকা বা পায়ের শট গোলবারে লেগে প্রতিহত হলে গোলবঞ্চিত হয় আর্জেন্টিনা। ৩০ মিনিটে আর্জেন্টিনার হয়ে গোলের সবচেয়ে সহজ সুযোগটি পেয়েছিলেন এনজো পেরেজ। মাত্র ছয় গজ দূর থেকে মেজার থেকে বল পেয়েও উন্মুক্ত গোলে বল না মেরে বাইরে পাঠান এই রিভার প্লেট তারকা।
ম্যাচে তেমন কোন প্রভাবই রাখতে পারেননি মেসি। আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডারদের ফাঁকি দিয়ে ৩৩ মিনিটে ভ্রাসালজিকোর ক্রসে মানজুকিচ হেড করলে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। গোল মুখের এত সামনে দাঁড়িয়ে এমন হেডে কার্যত হতাশা নেমে আসে ক্রোয়েটদের মাঝে। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে পেরেসিচ ফাঁকায় বল পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন। গোলশূন্য অবস্থাতেই শেষ হয় প্রথমার্ধ।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আর্জেন্টিনাকে হতাশায় ডোবান গোলরক্ষক কাবায়েরো। সতীর্থদের পাস দেওয়ার পরিবর্তেই দিয়ে বসেন ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলার রেবিচকে। মনে হচ্ছিল যেন পাসই ভুলে গেছেন তিনি! ডি বক্সের ভেতর থেকে দারুণ ভলিতে কাবায়েরোর মাথার উপর দিয়ে দুর্দান্ত গোলে ক্রোয়েশিয়াকে ১-০ গোলে এগিয়ে দেন তিনি।
ক্যামেরায় মাঝে মাঝে ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে দেখাচ্ছিল। হয়তো ১৯৮৬ সালের সেই ম্যারাডোনাকে মনে করে আর্জেন্টাইনদের আরেকটু চাঙ্গা করার ব্যর্থ প্রয়াস। ৬৪ মিনিটে গোল শোধের সুযোগ পেয়েছিলেন মেসি ও মেজা। কিন্তু গোললাইন থেকে সেটি রক্ষা করেন মেসিরই ক্লাব সতীর্থ রাকিতিচ।
দলকে বাঁচাতে ৬৮ মিনিটে এনজো পেরেজের বদলি হিসেবে দিবালাকে নামান কোচ। কিন্তু তিনিও পারেননি আর্জেন্টিনার এই হতাশাজনক খেলার ধারা পাল্টাতে। আর্জেন্টিনার এই ম্যাচে ফিরে আসার চিন্তা ৮০ মিনিটেই কার্যত শেষ হয়ে যায়। ব্রোজোভিচের কাছ থেকে বল পেয়ে ডি বক্সের বাইরে থেকে দূরপাল্লার দর্শনীয় শটে কাবায়েরোকে পরাস্ত করেন এই রিয়াল মাদ্রিদ তারকা।
২-০ গোলে এগিয়ে থেকে আরো যেন শক্তিশালী ক্রোয়েশিয়ান ফুটবলাররা। ম্যাচের ৯২ মিনিটের মাথায় গোলরক্ষক কাবায়েরোকে বোকা বানান কোভাচিচ। এই মাদ্রিদ তারকার বাড়ানো পাস থেকে রাকিতিচ গোল করে আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলের হার উপহার দেন। ৩-০ গোলের পরাজয়ে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় রাউন্ড ভাগ্য এখন সুতোয় ঝুলছে। অন্যদিকে মেসিদের হারিয়ে রাকিতিচ, মদ্রিচদের হাত ধরে আরো একবার বিশ্বকাপের নকআউট রাউন্ডে উঠলো ক্রোয়েশিয়া।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন