‘আসিফ নজরুলের বাবা একজন খাস রাজাকার ছিলেন’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাবা ১৯৭১ সালে ‘শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান’ ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। এছাড়া তিনি দাবি করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুলের বাবা ‘বিহারী এবং একজন খাস রাজাকার’ ছিলেন। এসব তথ্য অনুসন্ধানী প্রতিবেদন আকারে সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার (১২ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘উন্নয়ন, গণমাধ্যমের ভূমিকা ও মানবাধিকার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে সাউথ এশিয়ান লইয়ার্স ফোরাম (এসএএলএফ)।
তিনি বলেন, “মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনেক বড় বড় কথা বলেন কিন্তু তার বাবাও ‘শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান’ ছিলেন। আসিফ নজরুলের বাবাও ছিলেন ‘বিহারী ও খাস রাজাকার’। আপনারা (গণমাধ্যম কর্মী) এই কথাগুলো প্রচার করুন। মিডিয়াতে গবেষণামূলক রিপোর্টার আমাদের প্রয়োজন। আপনারা গবেষণা করে রিপোর্ট করুন। কয়েকটি আগুনে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। আপনারা এর কারণ অনুসন্ধান করুন। কারা এগুলো করেছে। সুবর্ণচরে ধর্ষণের ঘটনা ও ফেনীর নুসরাতের ঘটনার পেছনে কারা আছে তা তুলে ধরুন। আপনারা ঘটনার দিন নিউজ করেই শেষ করবেন না।”
সাবেক এ বিচারপতি বলেন, ‘২০০১ সালে পূর্ণিমাকে ধর্ষণ করা হয়। আমরা শুধু তার নামই জানি। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের আমলে পূর্ণিমা ছাড়াও আরও শতশত মেয়ে ধর্ষিত এবং হিন্দুদের খুন করা হয়েছিল। কিন্তু তাদের আমলে একটি মামলাও করা হয়নি। তবে বর্তমান সরকারের আমলে সে মামলা হয়। বিএনপি সরকার এ নিয়ে কোনও তদন্ত কমিশনও গঠন করেনি। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছিল।’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান প্রসঙ্গে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এ কথা আমার মতো অনেকেই বিশ্বাস করেন না। তার কারণ হলো, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকে খুন করলেন। আমি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় প্রসিকিউশনে এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্বে ছিলাম। সেখানে আমরা যেসব সাক্ষী পেয়েছি তা থেকে স্পষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল নায়ক জিয়াউর রহমান নিজেই। আর দ্বিতীয় মূল নায়ক খন্দকার মোশতাক। এ দুজনই হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পর জিয়াউর রহমান জয় বাংলা স্লোগানকে দেশান্তরে পাঠালেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, যেখানে পাকিস্তানি সৈন্যরা আত্মসমর্পণ করেছিল তার চেহারা পরিবর্তন করে সেখানে শিশু পার্ক করে দিলেন। তারপর শাহ আজিজকে রাষ্ট্রপতি বানালেন। আরও অনেক রাজাকারকে মন্ত্রী বানালেন। জিয়াউর রহমান শরশিনা পীরকে স্বাধীনতা পুরস্কার দিয়েছিলেন। যে শরশিনা পীর বলেছিলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী, রাজাকার ও আল বদর যে গণধর্ষণ করেছিল তা ইসলামের দৃষ্টিতে, ইসলামিক আইনে জায়েজ। এরপরও কি আপনারা বলবেন তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি যুদ্ধের সময় ওপারে গিয়েছিলেন ঠিক কিন্তু সেখানে তিনি পাকিস্তানি চর হিসেবে গিয়েছিলেন। তার মূল চেহারা বেরিয়ে আসে যখন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশকে পাকিস্তান বানানোর সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছিলেন। কিন্তু তা পারেননি। তবে সমস্ত চেষ্টা করেছিলেন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে বিচারপতি মানিক বলেন, ‘জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রী খালেদা জিয়াও দেশকে পাকিস্তান বানানোর সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছিলেন। জিয়া যখন অন্যান্য রাজাকারদের মন্ত্রী বানিয়েছিলেন তেমনি তার স্ত্রী এ দেশের ক্ষমতা পাওয়ার পর যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা তুলে দিলেন আর প্রমাণ করলেন তিনিও চাননি বাংলাদেশ স্বাধীন হোক। এমনকি পাকিস্তানি বিগ্রেডিয়ার জাঞ্জুয়া ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যা চালাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন তার মৃত্যুর পর খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় সব প্রটোকল আইন ভঙ্গ করে সেই জাঞ্জুয়ার মৃত্যুতে শোক পাঠিয়েছিলেন। এতে প্রমাণিত হয় খালেদা জিয়াও দেশের স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন। তিনিও বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি।’
এসএএলএফ-এর সভাপতি শেখ সালাহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আব্দুর নুর দুলাল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও শেখ সাইফুজ্জামান জামান, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আলী জিন্নাহ, ফেরামের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. শাহ আলম ইকবাল, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য শামিম সরদার প্রমুখ।
উল্লেখ্য, উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাবার নাম মির্জা রুহুল আমিন। তিনি দিনাজপুর-৪ ও ঠাকুরগাঁও-২ আসন থেকে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন। এরশাদ সরকারের মন্ত্রিসভায় ছিলেন তিনি। ১৯৯৭ সালের ১৯ জানুয়ারি তার মৃত্যু হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন