আস্থায় রাষ্ট্রায়ত্ত, সূচকে বিদেশি নেতৃত্বে বেসরকারি ব্যাংক
রাষ্ট্রায়ত্ত, দেশীয় বেসরকারি ও বিদেশি মিলিয়ে দেশে বর্তমানে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে ৫৭ ব্যাংক। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ৮, দেশীয় মালিকানায় বেসরকারি খাতে ৪০টি বাণিজ্যিক ব্যাংক। এ ছাড়া বিদেশি ৯ ব্যাংক বর্তমানে বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
পর্যালোচনা, বিশেষজ্ঞদের মতামত, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বলছে, সাধারণ আমানতকারীদের আস্থায় এগিয়ে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। তবে আধুনিক ব্যাংকিং সেবার কারণে ব্যাংকিং খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে বেসরকারি ব্যাংক। আর উচ্চ গোষ্ঠীর ব্যাংক হিসেবে কাজ করছে বিদেশি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো। আর্থিক সূচকে বিদেশি ব্যাংকগুলো শক্ত অবস্থায় রয়েছে।
বর্তমানে ব্যাংক খাতে মোট সম্পদ দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৩৭ হাজার ১০০ কোটি টাকা। মোট সম্পদের ২৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ দখলে রেখেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংক। টাকার হিসাবে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকার সম্পদ। রাষ্ট্রায়ত্ত দুই বিশেষায়িত ব্যাংকের কাছে রয়েছে ৩১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, যা মোট সম্পদের ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ। অর্থাৎ স্বাধীনতার পর কার্যক্রম জাতীয়করণকৃত ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় এখন মোট সম্পদ রয়েছে ২৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। বিপরীতে আশির দশকে কার্যক্রম শুরু করা বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মোট সম্পদ ৮ লাখ ১৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, যা মোট সম্পদের ৬৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আর ৯ বিদেশি ব্যাংকের সম্পদ ৪ দশমিক ৭২ শতাংশ অর্থাৎ ৫৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, মূলধন পর্যাপ্ত, সম্পদ, ব্যবস্থাপনা দক্ষতা, আয়, তারল্য এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সক্ষমতায় (ক্যামেলস) বিদেশি ব্যাংকগুলো এগিয়ে। এরপর রয়েছে দেশীয় বেসরকারি ব্যাংক। এরপর অবস্থান রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো আবার অনেক বেসরকারি ব্যাংকের তুলনায় শক্ত অবস্থানে। কিন্তু সুশাসনে পিছিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। তবে এ ব্যাংকগুলো দেশের প্রান্তিক অঞ্চলে শাখা খুলে গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছে। মুনাফা হবে না জেনে বেসরকারি কিংবা বিদেশি কোনো ব্যাংক সেখানে শাখা খোলেনি।
শাখা বিস্তারে দেখা গেছে, বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মোট শাখার সংখ্যা ৫ হাজার ১২০। সারা দেশে সব ব্যাংকের বর্তমান শাখার সংখ্যা ৯ হাজার ৭২০। সে হিসাবে মোট শাখার অর্ধেকের বেশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে। লাভজনক হবে না বিবেচনায় যেখানে বেসরকারি ব্যাংকগুলো যেতে চায় না, রাষ্ট্রের আর্থিক অগ্রগতি বিবেচনা করে সেসব এলাকায় শাখা বিস্তার করে সাধারণ মানুষের ব্যাংক হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে এসব ব্যাংক।
বর্তমানে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট শাখার সংখ্যা ৪ হাজার ৫২৯। শহরকেন্দ্রিক নিম্নমধ্যবিত্ত এবং সাধারণ মধ্যবিত্তদের পছন্দ বেসরকারি ব্যাংক। মূলত গ্রাহকসেবার মান ও আধুনিক কার্যক্রমের জন্য গ্রাহকরা এসব ব্যাংকে আকৃষ্ট হচ্ছেন। দেশীয় মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত অধিকাংশ শিল্প ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করে থাকে দেশীয় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর হিসাবের মাধ্যমে।
বিদেশি ব্যাংকগুলোর মোট শাখা ৭১। এগুলো বড় বড় শহরকেন্দ্রিক। সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীসহ আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা এসব ব্যাংকে নিজের ব্যক্তিগত হিসাব পরিচালনা করে থাকেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সাধারণ গ্রাহক বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পছন্দের ব্যাংক হিসেবে আস্থায় থাকলেও নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, সুশাসনের অভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। ফলে ব্যাংকগুলোকে মূলধন ঘাটতি নিয়ে চলতে হচ্ছে। বাড়ছে খেলাপি ঋণের হার। প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত এসব ব্যাংকের।
এ ব্যাপারে সরকারের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান বলেন, সরকারি ব্যাংকের কর্মীদের মনোভাব পাল্টাতে হবে। তাদের মনে রাখতে হবে, তাদের সঙ্গে বেসরকারি খাত প্রতিযোগিতা করছে। তাই গ্রাহককে ভালো সেবা দিতে না পারলে তারা অন্য ব্যাংকে চলে যাবে।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যানদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, দেশের ব্যাংক খাতে এখন বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বেশি। আগামীতে এটি আরো বাড়বে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অংশগ্রহণ বেড়েছে। একসময় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সুশাসন চিন্তার বিষয় ছিল। তবে এখন বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে এই উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। সার্বিকভাবে ব্যাংক খাত অর্থনীতির মেরুদণ্ড হলেও উদ্বেগের বিষয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন