ইউরোপে পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধির শীর্ষে বাংলাদেশ
বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্যের প্রধান রপ্তানি বাজার ইউরোপের দেশগুলোতে ২০১৮ সালে রপ্তানি বৃদ্ধির চিত্র আশা জাগিয়েছে। আলোচ্য সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৮টি দেশে বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্যের রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। ওই সময়ে ইউরোপে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি বেড়েছে ১১ দশমিক ১৭ শতাংশ। সেখানে রপ্তানিকারক শীর্ষ দশটি দেশের মধ্যে বাদবাকি সব দেশের প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের নিচে। আর শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ চীনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ইউরোপের গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল পণ্য আমদানির হিসাব সংরক্ষণকারী ইউরোস্ট্যাটের হিসাব অনুযায়ী এ তথ্য পাওয়া গেছে।
রপ্তানিকারক ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের কারখানাকে নিরাপদ করতে বাংলাদেশ নিরন্তর কাজ করে গেছে। ফলে ক্রেতা ও ব্র্যান্ড উভয় পক্ষেরই বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসায়ে আস্থা বেড়েছে। অন্যদিকে উত্পাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় চীন গার্মেন্টস পণ্য থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে অন্যখাতে মনযোগ দিচ্ছে। ফলে চীন থেকে সরে আসা অর্ডারের একটি অংশ বাংলাদেশ পেয়েছে। এছাড়া গত বছর নির্বাচনের আগে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশও নিরবচ্ছিন্ন রপ্তানি কার্যক্রমে ভালো ভূমিকা রেখেছে। অবশ্য রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে শীর্ষে থাকলেও পণ্যের দর না বেড়ে উল্টো কমে যাওয়ায় অস্বস্তিতে রয়েছেন রপ্তানিকারকরা।
ইউরোস্ট্যাটের হিসাব অনুযায়ী, ইউরোপের দেশগুলো ২০১৮ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৯ হাজার ৯৪০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ পোশাক আমদানি করেছে। এটি ২০১৭ সালের চাইতে ৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি। চীন ও বাংলাদেশ ছাড়াও ইউরোপে শীর্ষ দশ রপ্তানিকারক দেশের তালিকায় রয়েছে তুরস্ক, ভারত, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, মরক্কো, শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়া। তবে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির তালিকায় বাংলাদেশের পরে রয়েছে যথাক্রমে কম্বোডিয়া (৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ) ও ভিয়েতনাম (৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ)। এর পরের অবস্থানে রয়েছে মরক্কো ৮ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ, তুরস্ক ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ, শ্রীলঙ্কা ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ, পাকিস্তান ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ, ভারত ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ ও চীন ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এছাড়া শীর্ষ দশটি দেশের তালিকায় থাকা ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি না বেড়ে উল্টো কমে গেছে।
গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান মনে করেন, প্রবৃদ্ধির এই গতি আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। গতকাল তিনি বলেন, গত পাঁচ-ছয় বছরে ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতাদের কারখানা পরিদর্শন জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের সহযোগিতায় সংস্কারের ফলে কারখানাগুলো এখন কমপ্লায়েন্ট। এখন পরিবেশবান্ধব কারখানা হচ্ছে, যথাসময়ে পণ্য জাহাজীকরণ হচ্ছে। ফলে ক্রেতার আস্থা বেড়েছে। অন্যদিকে চীন থেকে সরে যাওয়া অর্ডারের কিছু অংশও আমরা পেয়েছি। আগামীতেও এটি অব্যাহত থাকতে পারে। তবে আমাদের সক্ষমতার তুলনায় অর্ডার এখনো কম। ফলে দর কম পাচ্ছি।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমও কারখানায় কর্মপরিবেশে অগ্রগতি হওয়ায় ক্রেতার আস্থা বৃদ্ধি ও চীনের ক্রয়াদেশ স্থানান্তর হওয়াকে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ার পেছনে মূল ভূমিকা হিসেবে অভিহিত করেছেন। একই সঙ্গে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও ইতিবাচক ফল দিয়েছে বলে মনে করছেন। তবে চীন থেকে সরে যাওয়া ক্রয়াদেশ বাংলাদেশ আরো বেশি পেতে পারত বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্রয়াদেশের পাশাপাশি চীনের বিনিয়োগও বাংলাদেশে আনার চেষ্টা করতে হবে। এ জন্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ দ্রুত অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে হবে।-ইত্তেফাকের সৌজন্যে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন