ইচ্ছাকৃত খেলাপিরা বিদেশ ভ্রমণসহ বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞায় পড়বেন:বাংলাদেশ ব্যাংক
ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের আরো কঠোর শাস্তির আওতায় আনছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সামর্থ্য থাকার পরও ঋণের টাকা পরিশোধ না করলেই ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। পাশাপাশি এসব খেলাপি বিদেশ ভ্রমণসহ বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে। এছাড়া খেলাপিমুক্ত হওয়ার পর কমপক্ষে পাঁচ বছর ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবে না।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে দেশের সব ব্যাংকে পাঠিয়েছে। সার্কুলারে এ ধরনের খেলাপি চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, ইচ্ছাকৃত খেলাপি চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করলে বাংলাদেশ ব্যাংকে আপিল করার সুযোগসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নির্দেশনার আলোকে কাউকে ইচ্ছাকৃত খেলাপি চিহ্নিত করার পর তার বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য দুই সপ্তাহের সময় দিয়ে ব্যাংক থেকে নোটিশ দিতে হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতার ওপর বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ও রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের (আরজেএসসি) কাছে কোম্পানি নিবন্ধনে নিষেধাজ্ঞার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থায় এ ধরনের খেলাপির তালিকা পাঠাবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া গাড়ি, জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট ইত্যাদির নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কাছে তালিকা পাঠানো হবে। তালিকার আলোকে এসব সংস্থা বিদ্যমান আইনের আওতায় যথাযথ কার্যব্যবস্থা নিতে পারবে বলেও জানিয়েছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
সার্কুলারে আরো বলা হয়েছে, কোনো খেলাপি ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি নিজের, তার পরিবারের সদস্যের, স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির অনুকূলে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহীত ঋণ, অগ্রিম, বিনিয়োগ বা আরোপিত সুদ বা মুনাফা তার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও পরিশোধ না করলে, তিনি ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে বিবেচিত হবেন। এছাড়া জালিয়াতি, প্রতারণা বা মিথ্যা তথ্য প্রদানের মাধ্যমে বা যে উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে, সে উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোনো খাতে ব্যবহার করলে অথবা অন্য কোনো ব্যাংকের জামানতকৃত সম্পদ অনুমতি ছাড়া নতুন ঋণে জামানত হিসেবে দেখালে, তাকে ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ইচ্ছাকৃত খেলাপির তালিকায় কারো নাম এলে ঋণ পরিশোধ করে তালিকা থেকে অব্যাহতির পাঁচ বছরের মধ্যে কোনো ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন না। আর যদি কোনো পরিচালক ইচ্ছাকৃত খেলাপি হয়ে পড়েন, তবে তার পরিচালক পদ বাতিল হবে। কেউ ইচ্ছাকৃত খেলাপি হওয়ার পর তালিকার বিরুদ্ধে আপিল না করলে কিংবা আপিল করার পর নামঞ্জুর হলে তাকে দুই মাসের মধ্যে অর্থ পরিশোধের জন্য নোটিশ দেওয়া হবে। এই সময়ের মধ্যে অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনক্রমে খেলাপির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করবে ব্যাংক। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ঋণ, অগ্রিম বা পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে অর্থ ঋণ আদালতের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে না।
ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রতি ত্রৈমাসিকে ব্যাংকের অডিট কমিটির সভায় উপস্থাপন করতে হবে। বিশেষ অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতার বিষয়ে পর্যালোচনাসহ একটি আলাদা অনুচ্ছেদ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং তা নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে টিকা আকারে প্রকাশ করতে হবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের চিহ্নিত করতে ব্যাংকের এমডি ও সিইওর দুই ধাপ নিচের কর্মকর্তার অধীনে প্রধান কার্যালয়ে ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা শনাক্তকরণ ইউনিট’ নামে একটি পৃথক ইউনিট আগামী ৯ এপ্রিলের মধ্যে গঠন করতে হবে। তারা ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কারা ইচ্ছাকৃত খেলাপি, তা শনাক্ত করবেন। তবে জাতীয় শিল্পনীতিতে বর্ণিত সংজ্ঞানুযায়ী ‘বৃহত্ শিল্প’ খাতের ৭৫ কোটি ও তদূর্ধ্ব, ‘মাঝারি শিল্প’ খাতের ৩০ কোটি ও তদূর্ধ্ব এবং অন্যান্য খাতের ১০ কোটি ও তদূর্ধ্ব স্থিতিসম্পন্ন ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির বা পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন গ্রহণ আবশ্যক হবে। কোনো ব্যাংক এসব নির্দেশনা লঙ্ঘন করলে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী অন্যূন ৫০ লাখ টাকা এবং অনধিক ১ কোটি টাকা জরিমানা করবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন