ইনফো সরকার-৩ প্রকল্প: চীনের সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে
প্রশাসনে গতি আনতে ‘ইনফো সরকার ফেজ-৩’ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ পেয়েছে চীনা কোম্পানি ‘চায়না রেলওয়ে ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ লিমিটেড’। সরকারের সঙ্গে সরকারের চুক্তির (জিটুজি) মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন হবে।
ইউনিয়ন পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন, বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) সেন্টার প্রতিষ্ঠা করাসহ দেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক কর্মযজ্ঞের প্রকল্প এটি। গত বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়।
তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ জানায়, এই প্রকল্পের অন্যতম বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে দেশের ২ হাজার ৬০০ ইউনিয়নকে ফাইবার অপটিক ক্যাবল সংযোগের আওতায় আনা এবং দেশের সকল ডিজিটাল সেন্টারে (ইউডিসি) বিপিও সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রসঙ্গত, এরই মধ্যে ডেভেলপমেন্ট অব আইসিটি ইনফ্রা-নেটওয়ার্ক অব বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট বা ইনফো সরকার প্রকল্পের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায় শেষ হয়েছে।
এর আগে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রকল্পটির তৃতীয় ফেজে চীনের এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে চীনা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড (সিআরআইজি) থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় পণ্য, ভৌত কাজ ও সেবা ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। তখন এই প্রকল্পে ১ হাজার ২০০ ইউনিয়ন ফাইবার অপটিকের আওতায় আনার লক্ষ্য রেখে ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৩১৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রকল্পের তৃতীয় ফেজের ব্যাপ্তি ও বাস্তবায়ন ব্যয় বাড়িয়ে অনুমোদনের জন্য একনেকে পাঠানো হয়। একনেক অনুমোদিত বর্তমান প্রকল্পের ব্যাপ্তি বেড়েছে অনেক। অন্যান্য বিষয় ছাড়াও শুধু ইউনিয়নই আগের চেয়ে দ্বিগুনেরও বেশি ১৪০০ বেড়ে হয়েছে ২৬০০টি। এছাড়া অনলাইন পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেম ডিজিটাইজেশন ও ৯৯৯ এর সেবার কথা মাথায় রেখে ১২০০ পুলিশ স্টেশনে ফাইবার অপটিক সংযোগ স্থাপন যুক্ত হয়েছে এই প্রকল্পে। আগে প্রকল্পে ৫৫৪টি বিপিও সেন্টারের কথা বলা হয়েছিল। এখন সব ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারেই হচ্ছে বিপিও সেন্টার। ফলে এখানে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে ১ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকায় এসেছে।
ইনফো সরকার ফেজ-৩ এর বাস্তবায়ন লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন, রিয়েল টাইম রেসপন্স এবং প্রক্রিয়াগত দক্ষতা, তথ্য খাতের উন্নয়ন এবং শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি সুবিধা সম্প্রসারণ, ডিজিটাল সেন্টারের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ, গ্রামে বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সেবার মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসংস্থান তৈরি এবং দারিদ্র্য দূর, গ্রাম পর্যায়ে হালনাগাদ সব সেবা, ডিজিটাল বৈষম্য রোধ, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, গ্রামবাসীর জন্য সরকারের সেবা উন্নত করাসহ নানা উদ্যোগ।
তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ জানায়, আগামীকাল রোববার বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে এ ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট (কাঠামোগত চুক্তি) হবে। এতে স্বাক্ষর করবেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আযম ও ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং কিয়াং।
ইআরডি সূত্র জানায়, এই চুক্তির মধ্য দিয়ে ঋণ চুক্তির সব বাধা কেটে যাবে। ইআরডি’র কর্মকর্তারা জানান, আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে প্রকল্পের ঋণচুক্তিও স্বাক্ষরিত হবে।
এদিকে, আগামীকাল রোববার একই সঙ্গে আরো একটি প্রকল্পের কারিগরি চুক্তি হতে যাচ্ছে চীন সরকারের সাথে। প্রকল্পটি হচ্ছে মডার্নাইজেশন অব টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল কানেকটিভিটি (এমওটিএন) প্রকল্প।
গত বছরের ১৪ অক্টোবর চীনের প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরের সময় ২৭টি প্রকল্পের বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল। এরপর দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে চীনা অর্থায়নের দুটি প্রকল্পে চুক্তি সই হতে যাচ্ছে। এই দুই প্রকল্পে চীনের অর্থায়ন রয়েছে প্রায় ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
ইআরডি’র চায়না ডেস্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সচিব মতিউর রহমান জানান, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরের সময় যে ২৭টি প্রকল্পের বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল তার মধ্যে প্রথমবারের মতো এ দুটি প্রকল্পে কারিগরি চুক্তি হচ্ছে। আশা করা যায়, এর মধ্য দিয়ে অন্য প্রকল্পগুলোর চুক্তিও দ্রুত হবে।
তিনি আরো জানান, সহজ শর্তের ঋণ পেতে হলে চীনের সঙ্গে দুটি চুক্তি করতে হয়। এর একটি ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট, অন্যটি ঋণ চুক্তি। ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট হবে সরকারের সাথে সরকারের আর ঋণ চুক্তি হবে চায়না এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ইআরডির। প্রিফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিটের (কঠিন শর্ত) ক্ষেত্রে শুধু ঋণ চুক্তি হয়ে থাকে।
ইআরডি জানায়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় ডেভেলপমেন্ট অব আইসিটি ইনফ্রা নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট ফেইজ-৩ (ইনফো সরকার-৩) প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীন ঋণ দিচ্ছে ১৫ কোটি ৬৫ লাখ মার্কিন ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৮০ টাকা ধরে) প্রায় ১ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। অপরদিকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মডার্নাইজেশন অব টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল কানেকটিভিটি (এমওটিএন) প্রকল্প বাস্তবায়নে চীন ঋণ দিচ্ছে ২৩ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ১ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা।
সমঝোতা অনুযায়ী নমনীয় শর্তে এ ঋণের ফ্লাট সুদের হার হবে ২ শতাংশ এবং অন্যান্য চার্জ মিলে সাড়ে তিন শতাংশের মধ্যেই সুদের হার থাকবে। এ দুটি প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষরের পরই চুক্তি হবে ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্পেরও। এরই মধ্যে এ প্রকল্পের চুক্তি বিষয়ে প্রস্তুতি এগিয়েছে অনেক দূর।
সূত্র জানায়, চীনা প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরে প্রায় ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ সহায়তা দিতে সমঝোতা করে চীন। এ সময় ২৭টি প্রকল্পের সমঝোতা হলেও পরবর্তীকালে এগুলোর মধ্যে চলতি অর্থবছরে (২০১৭-১৮) আটটি প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দিয়ে অর্থায়নের জন্য চীনকে অনুরোধ জানানো হয়। এ আট প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৯৩ কোটি ২৪ লাখ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে নতুন চুক্তি হতে যাওয়া প্রকল্প দুটিও রয়েছে।
অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ, ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং, ঢাকা-সিলেট ফোর লেন হাইওয়ে, এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেংদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিপিডিসি এরিয়া, পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক স্ট্রেংদেনিং প্রজেক্ট আন্ডার পিজিসিবি প্রকল্প এবং চায়না ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন ইন চিটাগাং প্রকল্প।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন