ইসিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হওয়ার বর্ণনা দিলেন খোকন
নোয়াখালী-১ (চটাখিল- সোনাইমুড়ি একাংশ) আসনের বিএনপির প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন নির্বাচন কমিশনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হওয়ার বর্ণনা দিয়েছেন। এ ছাড়া নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভোট না চেয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ কথা বলেন তিনি। সিইসিকে তার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার কথাও বলেছেন বলে সাংবাদিকদের জানান তিনি।
খোকন বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য পুলিশ প্রশাসন এবং বিচার বিভাগ একাকার হয়ে গেছে। যেটা সম্পূর্ণ সংবিধান পরিপন্থী এবং এটা করা উচিত না। যেসব পুলিশ কর্মকর্তা এসব করছে তাদেরকে পরিবর্তনের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বলেছি।’
‘আমার নির্বাচনী প্রচারণার কথাও বলেছি। সেখানে কোনো আওয়ামী লীগ ছিল না। আওয়ামী লীগের কোনো মিছিল ছিল না, কিছুই ছিল না। আমার গণসংযোগের সামনে ও পেছনে পুলিশ ছিল। পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের গণসংযোগের বিষয়ে অবহিত করা ছিল। গণসংযোগের এক পর্যায়ে সোনাইমুড়ি থানার ওসির নেতৃত্বে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে। আমি নিষেধ করে বললাম গুলি করছেন কেন? গুলি স্টপ করেন প্লিজ। তারপরও ওসি সাহেব গুলি স্টপ করেননি। সম্ভবত শর্টগান ছিল। আমি বললাম মানুষকে গুলি কইরেন না। গুলি করলে আমাকে করেন। তখন আমাকে সে গুলি করে! আমার কণ্ঠনালীর ওখানে গুলি লেগে রক্ত ঝরছিল। আমি বললাম আপনি আমাকে গুলি করলেন? তারপর সে বলল- আপনি ওদিকে যান। তার দেখানো দিকে যাওয়ার সময় পেছনে আবার গুলি করে। আমার শরীরে মোট সাতটা গুলি লাগছে। পেছনে ছয়টা সামনে একটা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সিইসিকে বললাম যে পুলিশ কি বলল না বলল এটা কোনো মেটার না। আমি একজন ল’ইয়ার হিসেবে, ব্যারিস্টার হিসেবে আন্ডার ওয়েট হিসেবে বলতেছি এই হলো ঘটনা। সেখানে কোনো আওয়ামী লীগের লোক ছিল না। পরবর্তীতে আমি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দেড়-দুই ঘণ্টা পরে পুলিশ প্রহরায় আওয়ামী লীগের কর্মীরা বিএনপির দোকান-পাট, হাসপাতালে ভাঙচুর করে। ভাঙচুরের পর তারা ভিন্ন স্টোরি বানিয়েছে।’
এ আইনজীবী বলেন, ‘চাটখিল থানার ওসি সামসুদ্দিন বিএনপির লোক ধরে নিয়ে ঘুষ নেয়। প্রতিদিন ১৫-২০ জন ধরবে। কোনো মামলা নাই কিছু নাই। সেখান থেকে হয়তো পাঁচজনকে রিকোস্টে ছাড়ছে। পাঁচজনের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। আর পাঁচজনকে চালান দিচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা আছে- যাদের বিরুদ্ধে মামলা নেই তাদেরকে গ্রেফতার করা যাবে না। তা সে মানছে না।’
তিনি বলেন, ‘আমার এলাকায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে না। চাটখিল-সোনাইমুড়িতে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কাছে যে অস্ত্র আছে। দুই-তিন থানায়ও এত অস্ত্র নাই। অস্ত্র উদ্ধার করেন। উনারা (কমিশন) বলেছেন, আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সমর্থক অবৈধ অস্ত্রধারীরা এবং পুলিশ একসঙ্গে কাজ করছে। নিরীহ মানুষের ওপর নির্যাতন করছে। আমার নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগ ভোট চাচ্ছে না। তাদের প্রার্থী কর্মীরা মানুষকে হয়রানি করছে, সন্ত্রাস করছে এবং পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করছে, মানুষকে আহত করছে। শুধু আমার এলাকায় না সারাদেশে একই কাজ করছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের কর্মীরা কোথাও ভোট চাচ্ছে না। তারা মিছিলে হামলা করছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। এসব বিষয়ে জানানোর পর সিইসি বলেছেন- আমরা সুষ্ঠু ভোটগ্রহণে বদ্ধ পরিকর।’
তিনি বলেন,`আমি প্রার্থীদের নিরাপত্তার জন্যও সিইসিকে বলেছি। কমিশন নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা করেছে। কমিশনের দায়িত্ব প্রার্থী ও ভোটারদের নিরাপত্তা দেয়া। আমি সোনাইমুড়ি থানার ওসির প্রত্যাহার চেয়েছি। চাটখিল থানার ওসির বিষয়েও তদন্ত করে প্রত্যাহার চেয়েছি। এগুলো ওনি শুনেছেন। উনি আমাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন করার চেষ্টা করছি।‘
প্রসঙ্গত, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিবকে সেখানকার অনেক নেতাকর্মীকে ছররা গুলি ছুড়ে আহত করেন ওসি আবদুল মজিদ। শনিবার বিকেলে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি সদরে এ ঘটনা ঘটে। পরে তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন