ইসির নিবন্ধন চায় নতুন ৭৬টি দল
নতুন ৭৬টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে বলে জানিয়েছেন ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। আবেদন জমা দেয়ার শেষ দিন রোববার সন্ধ্যায় আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি। নতুন দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা দলগুলোর মধ্যে রয়েছে- মাহমুদুর রহমানের নাগরিক ঐক্য, জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলন।
ইসি ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, ৭৬টি দল আবেদন করেছে। আরও ১৫টি দল জমা দেয়ার জন্য সময় বাড়ানোর আবেদন করেছিল। কিন্তু সময় বাড়ানো হবে না।
তিনি বলেন, আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা যাচাই করে দেখবেন আবেদনকারী দলগুলো নিবন্ধন শর্ত পুরণ করেছে কিনা। প্রয়োজনে মাঠপর্যায়ে তদন্ত করা হবে।
হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, যাচাই-বাছাইয়ে যাদের আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে, তাদের নাম কমিশনে সুপারিশ করা হবে। কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। যারা নিবন্ধিত হবেন তারা সামনের সব নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।
এসময় নিবন্ধিত দলগুলোকে সতর্ক করে তিনি আরও বলেন, নিবন্ধিত ৪০ দল তাদের নিবন্ধন শর্ত পূরণ করছে কিনা তারও খোঁজ-খবর নেয়া হবে। যারা শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হবে তাদের নিবন্ধত বাতিল করা হবে।
নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা ৭৬টি দল হলো- মাহমুদুর রহমানের নাগরিক ঐক্য, জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন (বিডিএম), বাংলদেশ আলোকিত পার্টি, বাংলাদেশ সমাধান ঐক্য পার্টি, বাংলাদেশ কর্মসংস্থান আন্দোলন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ-ভাসানী গ্রপ), বাংলাদেশ মঙ্গল পার্টি, বাংলাদেশ পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিপিডিপি), বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দল (বিজিপি), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল), বাংলাদেশ জনতা পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামিক গাজী, বাংলাদেশ জালালী পার্টি, বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি ( মো. রফিকুল ইসলাম), বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি (আবু হানিফ হৃদয়), ইনসানিয়া ইসলাম, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জনতা পার্টি, বাংলাদেশ সমাজ উন্নয়ন পার্টি (বিএসডিপি), বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, বাংলাদেশ নিউ সংসদ লীগ (বিএনএসএল), বাংলাদেশ পরিবহন লেবার পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-বাংলাদেশ বাসদ, নাকফুল বাংলাদেশ, তৃণমূল ন্যাশনাল পার্টি, বাংলাদেশ সত্যব্রত আন্দোলন, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশ মানবাধিকার আন্দোলন, সোনার বাংলা উন্নয়ন লীগ, বাংলাদেশ জনতা পার্টি, ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সমাজ উন্নয়ন পার্টি, ন্যাশনাল কংগ্রেস বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক পার্টি, গণতান্ত্রিক ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী), বাংলাদেশ ঘুষ নির্মূল পার্টি, বাংলাদেশ গণশক্তি দল, বাংলাদেশ সততা দল, বাংলাদেশ তৃণমূল পার্টি, বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস (বিজেসি), বাংলাদেশ হিন্দু লীগ, বাংলাদেশ জনতা ফ্রন্ট, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক পার্টি (কেএসপি),বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি, সুশীল সামাজিক আন্দোলন, লিবারেল পার্টি (এলপি), বাংলাদেশ রামকৃষ্ণ পার্টি, বাংলাদেশ উইনাইটেড ইসলামী পার্টি, মুক্ত রাজনৈতিক আন্দোলন, বাংলাদেশ জাতীয় দল, জাতীয় পরিবার কল্যাণ পার্টি (জেপিকেপি), নতুন ধারা বাংলাদেশ (এনডিবি), বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, সাধারণ জনতা পার্টি, বাংলাদেশ ফরায়েজী আন্দোলন, বাংলাদেশ তৃণমূল কংগ্রেস, ঐক্য ন্যাপ, বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিপিএলডিটি), মুক্তিযোদ্ধা কমিউনিজম ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশ গণ আজাদী লীগ, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি, বাংলাদেশ শান্তির দল, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, কৃষক শ্রমিক পার্টি, জনস্বার্থে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ তৃণমূল লীগ, বাংলাদেশ জনতা পার্টি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, নাগরিক ঐক্য, মৌলিক বাংলা, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএনডিপি), বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (বিডিএম), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কংগ্রেস ও বাংলাদেশ আওয়ামী পার্টি-ভাসানী ন্যাপ।
মূলত একাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এই আবেদন আহ্বান করে নির্বাচন কমিশন। নিবন্ধনের ক্ষেত্রে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, তিনটির মধ্যে একটি শর্ত পূরণ হলেই তারা নিবন্ধনের যোগ্য বলে বিবেচিত হয়। শর্তগুলো হলো-
১. দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যেকোনো জাতীয় নির্বাচনের আগ্রহী দলটি যদি অন্তত একজন সংসদ সদস্য থাকেন।
২. যেকোনো একটি নির্বাচনে দলের প্রার্থী অংশ নেওয়া আসনগুলোয় মোট প্রদত্ত ভোটের ৫ শতাংশ পায়। এবং
৩. দলটির যদি একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ (২১টি) প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি এবং অন্তত ১০০টি উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন সম্বলিত দলিল থাকে।
ইসি সূত্র জানায়, এর আগে দশম সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগ্রহী নতুন ৪৩টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের আবেদন করেছিল। এর মধ্যে ৪১টিই নির্বাচন কমিশনের কাছে নিজেদের ‘যোগ্যতার’ প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়।
মাত্র দুটি দল শর্ত অনুযায়ী মাঠপর্যায়ে কার্যালয় ও কমিটি থাকার তথ্য দিয়েছিল। এরপর তাদের নিবন্ধন দেয় কমিশন। দল দুটি হলো- বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ও সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রথা চালু করে ইসি। প্রথম বছরে ১১৭টি আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে শর্ত পূরণ সাপেক্ষে ৩৯টি দল নিবন্ধন পায়। এর মধ্যে স্থায়ী সংশোধিত গঠনতন্ত্র দিতে না পারায় ২০০৯ সালে ফ্রিডম পার্টির নিবন্ধন বাতিল করে ইসি। আর আদালতের আদেশে ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ হয়।
এছাড়া ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) নামে নতুন একটি দলের নিবন্ধন দেয়া হয়। বর্তমানে ইসির নিবন্ধনে ৪০টি রাজনৈতিক দল রয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন