ঈদ যাত্রা: লক্কর-ঝক্কর লঞ্চে চলছে রঙ-কালি ও মেরামত
দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের বাড়ি ফেরার একমাত্র উপায় নৌপথ। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সরাসরি কোনো সড়ক যোগাযোগ না থাকায় এ অঞ্চলের লাখো মানুষকে লঞ্চেই যাতায়াত করতে হয়। ঈদের সময় ঘরে ফেরা মানুষের ভিড় থাকায় লঞ্চের চাহিদাও থাকে অনেক বেশি। আর এ সুযোগে এক শ্রেণির লোভী লঞ্চ মালিকরা ঝুঁকিপূর্ণ লক্কর-ঝক্কর লঞ্চে রঙ লাগিয়ে নৌপথে ব্যবসা চালিয়ে যান। এদিকে, সাধারণ যাত্রীরাও নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা না করেই এসব লঞ্চে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন। কারণ বাড়ি তো যেতেই হবে, ঈদ বলে কথা।
প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদকে সামনে রেখে ১০ থেকে ১২টি স্পেশাল সার্ভিসের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) ও বেসরকারি লঞ্চ মালিকরা। কিন্তু এই লঞ্চ প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই কম। এছাড়া এ সময় যাত্রীদের ভিড় বেশি থাকায় লঞ্চের ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু করে।
প্রতিবছরই ঈদকে কেন্দ্র করে লঞ্চ মালিকদের একটি অংশ বেশি লাভের আশায় পুরোনো ও ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চ পরিচালনা করেন। সদরঘাটের ডকইয়ার্ডগুলোতে লঞ্চের রঙ-কালি ও রি-পিয়ারিংয়ের কাজ শুরু করে। ঈদের দু-তিন মাস আগে থেকেই এ কাজ শুরু হয়। লক্কর-ঝক্কর মার্কা লঞ্চ হয়ে ওঠে চকচকা। দেখে বোঝার উপায় থাকে না, এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। যাত্রীরাও না বুঝে রঙমাখা লঞ্চগুলোতে চলাচল করেন।
বুড়িগঙ্গার তীরে গড়ে ওঠা চরকালিগঞ্জ ও চরমিরেরবাগ এলাকার ডকইয়ার্ডগুলোতে দেখা গেছে- টুংটাং শব্দে চলছে যাত্রীবাহী ও বড় কার্গোবাহী লঞ্চগুলোর মেরামত কাজ। সকাল থেকে রাত অবধি শ্রমিকরা খুব ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কেউ ওয়েলডিং আবার কেউ রঙ মাখাতে ব্যস্ত। ঈদের আগে জোড়াতালি দিয়ে তড়িঘড়ি করে লঞ্চগুলো মেরামত করা হচ্ছে।
নিরাপদ নৌপথ বাস্তবায়ন আন্দোলনের একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, শুধু বুড়িগঙ্গার সাড়ে চার হাজার বিভিন্ন ধরনের লঞ্চের মধ্যে ফিটনেস পরীক্ষা করা হয়েছে মাত্র ৭৮২টির। এসব লঞ্চের ৫০ শতাংশের কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই। এসব কারণে গত ৩০ বছরে নৌ-দুর্ঘটনায় ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
তবে বিআইডব্লিউটিএর নৌ-সংরক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগ জানিয়েছে, গত ৬৬ বছরে দেশে দুই হাজার ১২২টি নৌ-দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ছয় হাজারের মতো যাত্রী নিহত হয়েছেন। মামলা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার। এরমধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ১৪১টি মামলা। বাকি মামলাগুলো ঝুলে রয়েছে বছরের পর বছর। কিছু মামলার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। নিষ্পত্তি হওয়া মামলাগুলোরও উল্লেখযোগ্য কোনো শাস্তি হয়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসির যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, লক্কর-ঝক্কর লঞ্চ নদীতে নামতে দেয়া হবে না। ঈদের পাঁচ দিন আগেই বেশ কয়েকটি মোবাইল কোর্ট থাকবে। র্যাব, পুলিশ,আনসারসহ পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্য থাকবে। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে কোনো লঞ্চ চলতে পারবে না।
তিনি আরো বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর লঞ্চের বিশেষ সার্ভিস বাড়ানো হয়েছে। আশা করি ঘাটতি থাকবে না। যেসব লঞ্চ যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে রঙ করা হচ্ছে, সেগুলোর দিকে আরো বেশি নজর রয়েছে। কোন মালিক কিভাবে ফাঁকি দিতে পারে, আমরা সবই বুঝি।
অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল সংস্থার (জাব) সিনিয়র সহ-সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল বলেন, সদরঘাট থেকে যেসব লঞ্চ বিভিন্ন রুটে চলাচল করে তার কাগজপত্রে কোনো ত্রুটি নেই। ঈদের আগে প্রতিটি টার্মিনালের জাহাজগুলো চেক-আপ হয়। যেসব লঞ্চে ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে তখন সেগুলো ঠিক করতে ডকইয়ার্ডে নেয়া হয়। তারা ত্রুটি বিচ্যুতি ঠিক করে পুরো জাহাজকে রঙ করে নেন। আর স্টিল বডিতে যত রঙ করা হয়, তত ভালো থাকে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন