ঈদযাত্রায় সাত জোড়া বিশেষ ট্রেন ও দেড়শ’ বাড়তি বগি
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে আজ থেকে ঢাকার কমলাপুর ও চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হচ্ছে। আজ ১৭ আগস্টের অগ্রিম টিকিট দেয়া হবে। ৯ আগস্ট ১৮ আগস্টের, ১০ আগস্ট ১৯ আগস্টের, ১১ আগস্ট ২০ আগস্টের ও ১২ আগস্ট ২১ আগস্টের অগ্রিম টিকিট বিক্রয় হবে। ১৫ আগস্ট ২৪ আগস্টের, ১৬ আগস্ট ২৫ আগস্টের, ১৭ আগস্ট ২৬ আগস্টের, ১৮ আগস্ট ২৭ আগস্টের ও ১৯ আগস্ট ২৮ আগস্টের ফিরতি টিকিট দেয়া হবে।
প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে (টিকিট থাকা সাপেক্ষে) বিকাল ৫টা পর্যন্ত টিকিট বিক্রি করা হবে। ঈদ উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও অতিরিক্ত যাত্রী বহনে সাত জোড়া ( ১৪টি ট্রেন) বিশেষ ট্রেন ও ১৫০টি যাত্রীবাহী বাড়তি বগি প্রস্তুত করা হচ্ছে রেলওয়ে পাহাড়তলী ও সৈয়দপুর ওয়ার্কশপে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এর মধ্যে ওয়ার্কশপ দুটিতে বাড়তি বগি প্রস্তুতে প্রায় ২ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। নির্ধারিত সময়ের পরও এসব শ্রমিক অভারটাইম করছেন।
টিকিট কালোবাজারি রোধ ও যাত্রী নিরাপত্তায় ঢাকা কমলাপুর-বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা ও সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলোতে আরও সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে।
বিশেষ ব্যবস্থায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ২৬টি ও চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে ১০টি কাউন্টার থেকে একযোগে টিকিট বিক্রি শুরু হবে। নারী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আলাদা টিকিট কাউন্টার রাখা হয়েছে।
যাত্রীসেবা বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত যাত্রীবহনে এবারও বিশেষ ট্রেন ও অতিরিক্ত বগি সংযোগ করা হচ্ছে জানিয়ে রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক বলেছেন, ঈদকে সামনে রেখে রেলওয়েতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। যাত্রীসেবা বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত যাত্রীবহনে ৭ জোড়া বিশেষ ট্রেন ও প্রায় ১৬০টি বগি সংযোগ করা হচ্ছে।
টিকিট কালোবাজারি রোধে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মহিলা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আলাদাসহ অতিরিক্ত টিকিট কাউন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, এখন রেলওয়েতে প্রচুর যাত্রী চলাচল বাড়ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ২৭০টি কোচ এবং ইঞ্জিন আমদানির মাধ্যমে এর মধ্যে ১১৬টি নতুন ট্রেন প্রবর্তন করা হয়েছে। আরও প্রায় ৭শ’টি কোচ এবং ইঞ্জিন আমদানি প্রকল্প চলমান রয়েছে।
এদিকে রেলওয়ের পাহাড়তলী ও সৈয়দপুর কারখানায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শ্রমিকরা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১৬০টি বগি রেলওয়ে বহরে সংযুক্ত করতে দিন-রাত কাজ করছেন।
পাহাড়তলী রেলওয়ে ওয়ার্কশপের কর্মব্যবস্থাপক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, প্রায় ৮শ’ শ্রমিক নির্ধারিত সময়ের পরও ওভারটাইম করছেন শুধু অতিরিক্ত বগিগুলো যথাসময়ের মধ্যে প্রস্তুত করতে। তিনি বলেন, ঈদে অতিরিক্ত যাত্রীবহনে প্রায় ৮০টি বগি মেরামত করে দেব। এর মধ্যে ৪৫টি বগি মেরামত সম্পূর্ণ হয়েছে। বাকিগুলো ১৮ কিংবা ১৯ আগস্টের মধ্যে সম্পূর্ণ হবে।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার কর্মব্যবস্থাপক কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম জানান, প্রায় ১১শ’ শ্রমিক পুরোদমে কাজ করছি। ৮০টি বগি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মেরামত করতে হচ্ছে। এ জন্য শ্রমিকরা তাদের নির্ধারিত সময়ের পরও ওভারটাইম করছেন।
তিনি বলেন, কিছু কিছু বগি খুবই পুরনো ও নড়বড়ে ছিল। এসব বগি খুব যত্নসহকারে মেরামত করে রঙ করা হচ্ছে। যাত্রীদের সেবা বৃদ্ধিতে আরামদায়ক সিটসহ যাবতীয় নতুনের মতো করা হচ্ছে।
এদিকে মঙ্গলবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশন ধোয়ামোছা হচ্ছে। একই সঙ্গে অতিরিক্ত কাউন্টার প্রস্তুতসহ স্টেশনের ভেতর ও স্টেশন চত্বরে নতুন করে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী জানান, ঈদকে সামনে রেখে পুরো স্টেশন নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা হচ্ছে। ৮ আগস্ট বুধবার (আজ) সকাল ৮টা থেকে ৫ দিনব্যাপী অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হচ্ছে। ২৬টি কাউন্টার থেকে একযোগে টিকিট বিক্রি করা হবে। ৬৫ শতাংশ টিকিট কাউন্টার থেকে বিক্রি করা হবে।
বাকি টিকিট ভিআইপি কোটা ও ই-টিকিটে বিক্রি করা হবে। চট্টগ্রাম রেলওয়ে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান যুগান্তরকে জানান, প্রতি ঈদেই আমরা অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও সেবা বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়, এবারও নিচ্ছি।
ঈদ উপলক্ষে ১০টি কাউন্টার থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় অগ্রিম টিকিট বিক্রি হবে। ঢাকা রেলওয়ে থানার ওসি ইয়াছিন ফারুকী জানান, টিকিট কালোবাজারি রোধে পুরো স্টেশনের সঙ্গে কাউন্টারের ভেতর ও বাইরে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপনা করা হচ্ছে। ছাদে যাত্রী ওঠা রোধে আমরা কঠোর হচ্ছি।
রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন বলেন, এবারও ঈদ উপলক্ষে মাঠ পর্যায়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। যাত্রীসেবা ও অতিরিক্ত যাত্রীবহন নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করা হচ্ছে। ছোট-বড় রেলওয়ে স্টেশনগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। টিকিট কালোবাজারি রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কালোবাজারিদের কাছে থাকা প্রায় সব টিকিটই নকল, এসব নকল টিকিট না কিনতে অনুরোধ জানান তিনি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন