ঈশ্বরীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত
স্টাফ রিপোর্টার: ‘পয়সা না দিলে কাজ হয় না। ভূমি অফিস থেকে বলা হয়, ‘জমির এ কাগজ নাই, ঐ কাগজ নাই।’ তার চেয়ে খরচাপাতি করে তাড়াতাড়ি খারিজ করে নেওয়াই ভালো।’ এমন কথা বললো শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামের বাসিন্দা মুনসুর মোড়ল। তিনি আরো বলেন, ‘ভ‚মি অফিসে আগে ভোগান্তি আরো বেশি ছিল। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় সব কাজ ইন্টারনেটে হওয়ায় ভোগান্তি এখন কমেছে।’ দেশের ভূমি অফিসগুলোতে দুর্নীতির দৌরাত্ম্য নতুন নয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ঘুষ বাণিজ্য এখনও দূর হয়নি। নামজারি, দলিল তোলা, বিভিন্ন ধরনের ফরম নিতে ভূমি অফিসে ঘুষ দিতে হয়। বিগত ৩-৪ মাস ভূমি কর্মকর্তা এবং বাইরের দালালদের সমন্বয়ে অফিসগুলোতে তৈরি হয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি সাধারণ মানুষ। একটি ছোট কাজও ঘুষ ছাড়া করা যায় না। সিন্ডিকেটগুলো সংগঠিতভাবে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অর্থ আদায় করে থাকে। ‘মিষ্টি খাওয়া’র নামে এসব অর্থ আদায় করা হয়।
সরেজমিনে জেলার অনেক ভ‚মি অফিসে খোজ খবর নিয়ে দেখা যায় হর হামেশেই চলছে এসব কাজ। কিন্তু! শ্যামনগর উপজেলার একটি অফিসে দুর্নীতি, অনিয়ম ও সিন্ডিকেট থাকলেও নেই জাতির পিতার ছবি। সংবিধানের অনুচ্ছেদ-৪ অমান্য করে চলছে এ অফিসের কার্যক্রম। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছবি অবশ্যই সরকারি কার্যালয়ে রাখতে হবে। কিন্তু সবচেয়ে বড় উপজেলা শ্যামনগরের ঈশ্বরীপুর ইউনিন ভ‚মি অফিসে এধরনের রাষ্ট্র অবমাননা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
২১মার্চ সকাল ১১টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঈশ^রীপুর ইউনিয়ন সহকারী কর্মকর্তা (ভ‚মি) এর কার্যালয়ে নেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। কর্মরত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার গাইনেরও নেই ছবি টাঙানোর উদ্যোগ। এছাড়া শ্যামনগর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) এঁর বিনা অনুমতিতে নিজ উদ্যোগে শ্রীফলকাটী মৌজায় ২৭৮ নং এস,এ খতিয়ানের মালিকগণকে নোটিশ প্রদান করেন। ২১ মার্চ হাজিরার দিনে অর্ধশত জমির মালিকগণ উপস্থিত হলে ১১.৮৯ একর জমির কাগজপত্র যাচাই করেন এবং মালিকগনকে জানান, কাগজের ত্রুটি আছে। তিনি উক্ত ত্রুটিপূর্ণ কাজগপত্র নিরসনের জন্য মিষ্টি খাওয়ার নামে টাকা দাবি করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি বলেন, টাকা না দিলে ঐ জমি খাস খতিয়ানভুক্ত হবে। এ নোটিশের পরবর্তী শুনানীর তারিখ ৮এপ্রিল ২০১৮।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪-এর শিরোনামে দেয়া হয়েছে ‘জাতির পিতার প্রতিকৃতি’। সেখানে বলা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতির কার্যালয় এবং সকল সরকারি ও আধা সরকারি অফিস স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের প্রধান ও শাখা কার্যালয় সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিদেশে অবস্থিত বাংদেশের দূতাবাস ও মিশন সমূহে সংরক্ষন ও প্রদর্শন করিতে হইবে। কিন্তু শ্যামনগর উপজেলার ঈশ^রীপুর ইউনিয়ন ভ‚মি অফসে সহকারী কর্মকর্তার কার্যালয়ে জাতির জনক ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকেই। (অফিসের ভিডিও, স্টিল ছবি ও নোটিশ সংরক্ষিত আছে)
ঈশ্বরীপুর বাজার মোড়ের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম, আব্দুল গফ্ফার, কেরামত আলী ও ছবেদা খাতুনসহ অনেকেই বলেন, ‘ওরা দাখিলা করতে নেয় ৩হাজার টাকা পর্যন্ত। একবার এক সেনা কর্মকর্তা লুৎফর রহমানের ৪০ হাজার টাকার দাখিলায় চাইলো ৭০ হাজার টাকা। তাই দেয়নি বলি ওনার দাখিলা কাটার পরেও বাতিল করে ঐ অফিসার। স্থানীয়রা বলেন ওই অফিসের অফিসার প্রদীপ কুমার গাইন এ উপজেলায় বিগত ১০বছর ধরে আছে। তাই টাকা না দিলি তিনি কাজ করেনা। উনার জন্যি সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পিছিয়ে রইছে। উনি দাখিলা বাতিল করেন বলে সরকারের রাজস্ব আদায় কমছে। আর জমির নামপত্তন করতে নেয় ৮-ন হাজার।
সরকারের নিয়ম ১১৫০ টাকার কথা জানালে বলে কাজ হবেনা। সব অফিসে দেখি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। কিন্তু ওই অফিসার এসব নিয়ম টিয়ম মানে না। আমাদের দাবী এ এলাকায় একজন সৎ অফিসার আসুক।’
ঈশ্বরীপুর ইউনিয়ন সহকারী কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার গাইন বলেন, ‘ঘুষ বা দুর্নীতি নিয়ে আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ঠিক নয়। আমি স্থানীয় সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে চলি। বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন ড্রিল মেশিন ছিলনা বলে লাগানো হয়নি তবে ছবি আছে।’
শ্যামনগর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) সুজন সরকার বলেন, ‘আমি কিছুদিন আগেও এ অফিস পরিদর্শন করেছি কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি চোখে পড়িনি। এছাড়া দুর্নীতির অভিযোগ সত্য হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এব্যাপারে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান জানান, ‘বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি অফিসে না থাকলে সেটা রাষ্ট্রীয় অবমাননা করা হয়। এ বিষয়ে আমি খোজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন বলেন, ভ‚মি অফিসের কিছু অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য আমি সংগ্রহ করছি। সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপনাদেরও কোন তথ্য জানা থাকলে আমাকে দিতে পারেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন