উদ্বেগ এখন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ঘিরে
সদ্যসমাপ্ত এসএসসি পরীক্ষার তিক্ত অভিজ্ঞতার প্রেক্ষাপটে আসন্ন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে ‘সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা’ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর অংশ হিসেবে অন্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বিত কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। তবুও এইচএসসি পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া নিয়ে উদ্বেগমুক্ত হতে পারছেন না শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
তারা জানিয়েছেন, এপ্রিলে শুরু হতে যাওয়া এই পরীক্ষার আগে এত কম সময়ে পরীক্ষা পদ্ধতি বদলানো সম্ভব নয়। বর্তমান পদ্ধতিতে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো অসম্ভব বলেও প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন শিক্ষা সচিব (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ)। আবার এবার থেকে সব বোর্ডে একই প্রশ্নপত্রে এইচএসসি পরীক্ষা হবে। অভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা হলে দেশের কোথাও প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে তা সব বোর্ডের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এদিকে মন্ত্রণালয়ের কঠোর নিরাপত্তা ও নজরদারির মধ্যেও প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের সদস্যরা বেপরোয়া। সব মিলে আসন্ন এই পরীক্ষা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে।
মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত ৫ ফেব্রুয়ারি এইচএসসির প্রশ্নপত্র ছাপানো শুরু হয়েছে। আগামী ৩ মার্চ থেকে জেলা পর্যায়ে প্রশ্নপত্র পাঠানো হবে। পরীক্ষার এক মাস আগে প্রশ্নপত্র জেলা প্রশাসকদের ট্রেজারিতে পৌঁছে দেওয়ার নিয়ম আছে। ২ এপ্রিল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু। বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতিতে দুই মাস আগে প্রশ্ন ছাপাতে হয়। এত অল্প সময়ের মধ্যে নতুন পরীক্ষা পদ্ধতিতে যাওয়া সম্ভব নয়।
সদ্য শেষ হওয়া এসএসসি পরীক্ষার আবশ্যিক ও ঐচ্ছিক মিলিয়ে মোট ১৫টি বিষয়ের মধ্যে ১২টিরই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ আছে। অভিযোগের প্রাথমিক কিছু সত্যতাও পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত ‘পরীক্ষা মূল্যায়ন কমিটি’। এ অবস্থায় আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে অনেক অভিভাবকও উদ্বিগ্ন। ফাঁস রোধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘কঠোর ঘোষণায়ও’ আস্থা রাখতে পারছেন না তারা।
প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে- শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমন শঙ্কার সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু করতে যাচ্ছে কিনা- এ প্রশ্নে মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তা বলেন, ‘উদ্বেগ বা শঙ্কা মোটেও নেই তা নয়। প্রশ্ন ফাঁস রোধে কঠোর করণীয় নির্ধারণে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে শিগগিরই বৈঠক করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এ বৈঠকে করণীয় নির্ধারণ করা হবে। ফাঁস ঠেকাতে মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কঠোর উদ্যোগ নিচ্ছে। ফাঁসকারীদের আইনের মুখোমুখি করে কঠোর হওয়ার বার্তা দেওয়া হবে।’ তারা জানান, এবারের এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় সারা দেশে ৫২টি মামলায় ১৫৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযান চলবে।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেছেন, আগামী এইচএসসি পরীক্ষায় কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছি, যেগুলো আগে নিইনি। তবে অতি অল্প সময়ে বড় পরিবর্তনে যাব না। প্রতিদিন নতুন কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা আমরা করছি। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব, গোয়েন্দা সংস্থা ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, আলাদা আলাদা প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়ার সুবিধা ছিল। কোনো বিষয়ের প্রশ্ন ফাঁস হলে তা একটি বোর্ডের বিষয় হতো। একই প্রশ্নে পরীক্ষা হলে কোনো এলাকায় ফাঁস হলে তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, ক্রমাগত প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তারা ২০১৪ সাল থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা বোর্ডভিত্তিক আলাদা আলাদা প্রশ্নে নেয়। কিন্তু প্রশ্ন আলাদা হওয়ায় বৈষম্যের অভিযোগ তোলেন বেশ কয়েকজন শিক্ষাবিদ ও অভিভাবক। তারা সব বোর্ডে অভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানান। সেই দাবি অনুসারে অভিন্ন প্রশ্নপত্র পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ার আগে মন্ত্রণালয় ও সব শিক্ষা বোর্ড জোরাল প্রস্তুতি নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে সাধারণ আটটি বোর্ডের চেয়ারম্যানকে গত বছরের অক্টোবরে নির্দেশও দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন