উন্নয়ন বাজেটের ৪০% কৃষিখাতে বরাদ্দের দাবিতে গাইবান্ধায় বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ স্মারকলিপি
উন্নয়ন বাজেটের ৪০% কৃষিখাতে বরাদ্দের দাবিতে সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষকফ্রন্ট গাইবান্ধা জেলা শাখার উদ্যোগে রোববার (৪ জুন) জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। বিক্ষোভ মিছিল পুর্বে শহরের ১নং রেলগেটে সংগঠনের নিজস্ব কার্যালয়ের সামনের চত্ত¡রে সমাবেশ অনুুষ্ঠিত হয়। মিছিল শেষে নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অর্থমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।
কৃষকনেতা জাহিদুল হকের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন স¤পাদক এবং বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের জেলা সদস্যসচিব মনজুর আলম মিঠু, সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্টের জেলা সংগঠক চপল সরকার, ওয়ারেছ মন্ডল রাঙ্গা, সবুজ মিয়া, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের জেলা আহবায়ক শামিম আরা মিনা।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ, দেশের মোট শ্রমশক্তির অর্ধেক কৃষি খাতে নিয়োজিত, অথচ সম্ভাবনাময় এই খাতটি সবচেয়ে অবহেলিত। সার, বীজ, কীটনাশক, সেচ, বিদ্যুৎসহ সকল কৃষি উপকরণের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সার,বীজ, কীটনাশকে ভেজাল দিয়ে মুনাফা লুটছে। কৃষক লাভজনক দাম তো দূরের কথা, ফসলের উৎপাদন খরচও তুলতে পারছে না। ফলে ক্ষুদ্র কৃষক জমি হারিয়ে ভ‚মিহীন এবং মাঝারি কৃষক গরীব কৃষকে পরিণত হচ্ছে। খরা, বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল নষ্ট হয়ে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
করোনাকালেও কৃষক ঝুঁকি নিয়ে উৎপাদন অব্যাহত রেখে ১৮ কোটি মানুষের মুখে অন্ন যুগিয়েছে। সরকার যে কৃষি প্রণোদনার কথা বলছে তা ধনী কৃষক বা উৎপাদনের সাথে যারা যুক্ত নয় তারাই পাচ্ছে, দলীয়করণ-দুর্নীতির ফলে প্রকৃত কৃষক কিছুই পাচ্ছে না। কৃষি প্রধান বাংলাদেশে কৃষির সঙ্গে যুক্ত মানুষগুলোই সবচেয়ে বিপর্যস্ত। ক্ষেতমজুরদের এমনিতেই বছরে ৯ মাস কাজ থাকে না, ফলে সারা বছরের কাজ ও খাদ্যের নিশ্চয়তা নেই। উপরন্তু কৃষিতে ক্রমাগত যান্ত্রিকীকরণের ফলে তাদের কাজ আরও সীমিত হচ্ছে, যা বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় সেই সংকট আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। কাজের প্রয়োজনে নিজ এলাকার বাইরে গেলে সেখানে নিরাপদ যাতায়াতসহ স্বাস্থসম্মত খাদ্য ও আবাসনের কোন আয়োজন থাকেনা।
সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ নিয়েও চলে ব্যাপক দুর্নীতি-অনিয়ম। তহশিল অফিস, ভ‚মি অফিস, সাব রেজিস্ট্রি অফিস, সেটেলমেন্ট অফিস, পুলিশ থানা ও ব্যাংকে ঘুষ-দুর্নীতি-হয়রানির শিকার হচ্ছে কৃষক। দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে মেরে দিচ্ছে পাচার করছে, সেই ঋণখেলাপী ব্যাংক ডাকাতদের বিরুদ্ধে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বরং সমাদর করা হচ্ছে । অথচ ১০/২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ফসলের দাম না পাওয়া ও বন্যা-খরাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল নষ্ট হওয়ায় পরিশোধ করতে না পারলে কৃষকের নামে সার্টিফিকেট মামলা দিয়ে হয়রানি ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হচ্ছে।
সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কো¤পানির বন্ধ্যা বীজ কৃষিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। কৃষক কৃষি উপকরণ কিনতেও ঠকে, ফসল উৎপাদন করে বেচতেও ঠকে। ভয়ংকর এই পরিস্থিতি থেকে কৃষি-কৃষক-ক্ষেতমজুরদের রক্ষার কোন পরিকল্পনা ঘোষিত বাজেটে নেই। তাই আসন্ন জাতীয় বাজেটে কৃষি খাতে উন্নয়ন বরাদ্দের ৪০ ভাগ বরাদ্দ দিয়ে কৃষি-কৃষক-ক্ষেতমজুরদের রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, প্রতিবছর শ্রমশক্তি যতই বাড়ছে সেই তুলনায় কর্মসংস্থান বাড়ছে না। কিন্তু রাষ্ট্রীয় শিল্প-কলকারখানা বন্ধ করা হচ্ছে ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চলছে ছাঁটাই। চাল-ডাল-আটা-ভোজ্যতেল সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি জিনিসের দাম এখন সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। কিন্তু দেশে শ্রমিক, কৃষক, চাকরিজীবী, ছোট দোকানদারসহ সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি।
জ্বালানি তেল ও সকল পরিবহনের ভাড়া বেড়েছে। শিক্ষা-চিকিৎসার খরচ, বাড়িভাড়া ক্রমাগত বাড়ছে। তাই আসন্ন জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে শ্রমজীবী ও নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য সারাদেশে আর্মিরেটে রেশনে নিত্যপণ্য সরবরাহ করাসহ বয়স্ক-বিধবা-প্রতিবন্ধীদের মাসিক ১০ হাজার টাকা ভাতা প্রদান করারও জোর দাবি জানান।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন