উপমন্ত্রী শামীমের কমেছে আয় ও স্থাবর সম্পত্তি, করেছেন জমি বিক্রি
পানি সম্পদ উপমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম এবার দ্বিতীয় বারের মতো শরীয়তপুর-২ (নড়িয়া-সখিপুর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। গত ৫ বছরে কমেছে তাঁর আয় ও স্থাবর সম্পত্তি। এছাড়াও সংসদ সদস্য হওয়ার আগে তিনি ৩৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬১০ টাকা মূল্যের একটি (জমি) বাড়ি বা এপার্টমেন্টের মালিক ছিলেন। বর্তমানে ওই জমিটি আর নেই। তিনি বিক্রি করেছেন।
এছাড়াও গাড়ি বাবদ ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার ৯৬২ টাকা ঋণ রয়েছেন তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্রের সাথে জমা দেওয়া হলফনামাসূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
হলফনামাসূত্রে , এনামুল হক শামীম পেশায় একজন রাজনীতিবিদ। তিনি এমএ পাশ।এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় পেশার বিবরণীতে লিখেছিলেন একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক, একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা- চেয়ারম্যান ও বেসরকারি একটি ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক ছিলেন তিনি। এবার তিনি এসব পদে আর নেই। তাই গত পাঁচ বছরে অর্ধকোটিরও বেশি টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পত্তি কমেছে এনামুল হক শামীম, তাঁর স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় এনামুল হক শামীমের বাৎসরিক আয় ছিল ২৩ লাখ ২৮ হাজার ১৪৭ টাকা। বর্তমানে তার বাৎসরিক আয় ১৮ লাখ ৩৪ হাজার ৯৭৮ টাকা। পাঁচ বছরে তার বাৎসরিক আয় কমেছে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ১৬৯ টাকা। পাঁচ বছর আগে তার উপর নির্ভরশীলদের বাৎসরিক আয় ছিল ১ লাখ ৯৩ হাজার ২৯৩ টাকা। বর্তমানে নির্ভরশীলদের বাৎসরিক আয় ৬৮ হাজার ৩৪ টাকা। পাঁচ বছরে নির্ভরশীলদের আয় কমেছে ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৯ টাকা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এনামুল হক শামীম ও তার উপর নির্ভরশীলদের বাৎসরিক আয় ছিল ২৫ লাখ ২১ হাজার ৪৪০ টাকা। এনামুল হক শামীম, তার স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের বাৎসরিক মোট আয় কমেছে ৬ লাখ ১৮ হাজার ৪২৮ টাকা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় উল্লেখিত তার বার্ষিক আয়ের ১৮ লাখ ৩৪ হাজার ৯৭৮ টাকা তিনি বাড়ি, এপার্টমেন্ট ও দোকান ভাড়া বাবদ ৫ লাখ ২২ হাজার ৭২০ টাকা; শেয়ার, সঞ্চয় ও ব্যাংক আমানত বাবদ ২ লাখ ৭৪ হাজার ২৫৮ টাকা ও চাকুরি বাবদ ১০ লাখ ৩৮ হাজার টাকা আয় তার।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় এনামুল হক শামীমের বার্ষিক আয় ছিল ২৩ লাখ ২৮ হাজার ১৪৭ টাকা। এসব টাকা তিনি ব্যবসা খাত থেকে বছরে ৭ লাখ ৫৫ হাজার। শেয়ার, সঞ্চয় ও ব্যাংক আমানত বাবদ ১ লাখ ১২ হাজার ৬৪৭ টাকা, পেশা (শিক্ষকতা, চিকিৎসক, আইন, পরামর্শক ইত্যাদি) খাত থেকে ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৫০০ টাকা, ব্যাংকের পরিচালক সভার ভাতা বাবদ ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা আয় করতেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামার তথ্য অনুযায়ী এনামুল হক শামীমের অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ৫৬ লাখ ২ হাজার ৮৫৩ টাকা। বর্তমানে তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৭৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৫২ টাকা। পাঁচ বছর আগে তার অস্থাবর সম্পদ ছিল ১ কোটি ১৮ লাখ ৪৪ হাজার ৪৯৯ টাকা। বর্তমানে তিনি ৩৩ হাজার ৫৭৫ (ইউএসডি) ডলারের মালিক। পাঁচ বছর আগে ছিলেন ৪২ হাজার ৫৭৫ (ইউএসডি) ডলারের মালিক।
৫ বছরে উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমের স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ৩৮ লাখ ৭৯ হাজার ৩৭ টাকা। বর্তমানে তার স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ এক কোটি ৭১ লাখ ১৯ হাজার ৩৬৩ টাকা। পাঁচ বছর আগে তার স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের অস্থাবর সম্পদ ছিল এক কোটি ৩২ লাখ ৪০ হাজার ৩২৬ টাকা। বর্তমানে তার স্ত্রীর নামে হলফনামায় দেখানো হয়েছে ৪৩ হাজার ১৬৯ (ইউএসডি) ডলার রয়েছে। পাঁচ বছর আগে তার স্ত্রী কোনো (ইউএসডি) ডলারের মালিক ছিল না।
এছাড়াও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় এনামুল হক শামীম বিবাহের সময় তিনি নিজে ১৫ তোলা স্বর্ণ ও তার স্ত্রী ৩৫ তোলা স্বর্ণ উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন মর্মে বর্ননা দিলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় উল্লেখ করেছেন বিবাহের সময় তিনি ১৫ তোলা ও তার স্ত্রী ৫০ তোলা স্বর্ণ উপহার পেয়েছেন।
এনামুল হক শামীমের স্ত্রী ও তার ওপর নির্ভরশীলদের স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ কমেছে। বর্তমানে তাদের স্থাবর সম্পত্তির মূল্য ৭৯ লাখ ১৭ হাজার ১১০ টাকা। পাঁচ বছর আগে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৭৯ হাজার ১১০ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পত্তি ছিল। সে হিসেবে স্থাবর সম্পত্তি কমেছে ৫৭ লাখ ৬২ হাজার টাকার।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে বর্তমানে উপমন্ত্রী শামীমের নগদ এক লাখ ৯৫ হাজার ৫০০ টাকা রয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ৩৬ লাখ ৪১ হাজার ২৮৭ টাকা। বিভিন্ন ধরণের সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানত খাতে রয়েছে ৩৮ লাখ ৩৫ হাজার ৬৫ টাকা। মটরগাড়ি (অর্জনকালীন মূল্য) ৭৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার। ইলেট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র রয়েছে ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকার। এছাড়াও তার অন্যান্য অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ১২ লাখ ৩০ হাজার ৫০০ টাকা। তার ২ লাখ ৬০ হাজার টাকার সরকারি লাইসেন্স প্রাপ্ত পিস্তল, বন্দুক ও গুলি রয়েছে।
শরীয়তপুর-২ (নড়িয়া-সখিপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমের স্ত্রীর বর্তমানে নগদ ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা রয়েছে। এছাড়া তার স্ত্রীর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ৩৬ লাখ ১৬ হাজার ৮২ টাকা, বন্ড, ঋণপত্র ও শেয়ার বাজারে ২৫ লাখ ১৫ হাজার ৯৮৬ টাকা, বিভিন্ন ধরণের সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানত খাতে রয়েছে ৬৮ লাখ ৭৭ হাজার ৪৭৯ টাকা, ইলেট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র রয়েছে ৫ লাখ টাকার। অন্যান্য খাতে উপমন্ত্রীর স্ত্রীর রয়েছে ১৪ লাখ ২৩ হাজার ২২৮ টাকা। শামীমের ওপর নির্ভরশীলদের বিভিন্ন ধরণের সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানত খাতে রয়েছে ১১ লাখ ৬ হাজার ৫৮৮ টাকা।
স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে এনামুল হক শামীমের নিজ নামে ৬ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ১৯২ দশমিক ৯২৪ শতাংশ কৃষি জমি, ১ লাখ ৫৭ হাজার টাকা মূল্যের ২ দশমিক ৮৯৮ শতাংশ অকৃষি জমি রয়েছে। ৩৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬১০ টাকা মূল্যের একটি বাড়ি বা এপার্টমেন্ট রয়েছে তার। পাঁচ বছর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তিনি স্থাবর সম্পত্তি উল্লেখ করেছিলেন ১ লাখ ২ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ১৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ কৃষি জমি ও ৩২ লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্যের অকৃষি জমি ছিল তার। এছাড়াও সংসদ সদস্য হওয়ার আগে তিনি ৩৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬১০ টাকা মূল্যের একটি (জমি) বাড়ি বা এপার্টমেন্টের মালিক ছিলেন। বর্তমানে ওই (জমি) বাড়িটি আর নেই। তিনি বিক্রি করেছেন। এছাড়াও গাড়ি বাবদ ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার ৯৬২ টাকা ঋণ রয়েছেন তিনি।
বর্তমানে তাঁর স্ত্রী ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা মূল্যের অকৃষি জমির মালিক। পাঁচ বছর আগে স্ত্রী ২৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা মূল্যের অকৃষি জমির মালিক ছিলেন। এছাড়াও তার ওপর নির্ভরশীলরা বর্তমানে ৩২ লাখ ৩০ হাজার টাকা মূল্যের অকৃষি জমির মালিক। পাঁচ বছর আগে নির্ভরশীলরা ৪৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের অকৃষি জমির মালিক ছিলেন।
শামীমের নামে শরীয়তপুরের ডামুড্যা থানায় ১৯৯৩ সালের ১৫ জানুয়ারি একটি মামলা রুজু হয়েছিল। তবে মামলাটি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই রাষ্ট্র কর্তৃক প্রত্যাহার করা হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন