এক বছরে নিখোঁজ ৯১, ফিরেছে ২৬
২০১৭ সালে দেশে ৯১ জন নিখোঁজ হয়েছিলেন দাবি করে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানিয়েছে, এদের মধ্যে ফিরে এসেছে ২৬ জন। বাকিদের সন্ধান এখনও মেলেনি।
রবিবার খৃষ্টীয় বছরের শেষ দিন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকার সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য দেয়া হয়েছে।
গত কয়েক বছর ধরেই নিখোঁজ, অপহরণ ও গুম নিয়ে আলোচনা হচ্ছে দেশ জুড়ে। এর মধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন লিপিবদ্ধ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে মানবাধিকার সংগঠনটি।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সমন্বয়ক আবু আহমেদ ফয়জুল কবির এই প্রতিবেদন তুলে ধরেন। বিদায়ী বছরের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে ‘চরম উদ্বেগজনক’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ, গুম ও গুপ্তহত্যার ঘটনার পাশাপাশি এ বছর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের নিখোঁজ হওয়ার ক্ষেত্রে যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা।’
সাবেক রাষ্ট্রদূত থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রকাশক, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক দলের নেতা, পৌর মেয়র- কেউই বাদ পড়েননি গুম ও নিখোঁজের এই তালিকা থেকে। এছাড়া আগের বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় বছরজুড়ে অব্যাহত ছিল রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর ক্রসফায়ার, গুলি বিনিময় ও বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।’
এই এক বছরে যে ৯১ জন গুম হয়েছে তাদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ৬০ জনকে তুলে নেয়া হয় বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। এর মধ্যে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে দুইজনের, ফেরত আসেনি ৪৩ জন।
আর ৩১ জনের অন্তর্ধানের বিষয়ে কোনো তথ্য বা অভিযোগ নেই। এদের মধ্যে নয় জন ফেরত এসেছে, ছয়জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বিদায়ী বছরে ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ, বা গোলাগুলিতে এবং নিরাপত্তা হেফাজতে ১৬২ জন নিহত হয়েছে বলেও জানানো হয় প্রতিবেদনে। এর মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে ১২৬ জন।
বাকিদের মধ্যে নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতনে ১২ জন, গ্রেপ্তারের আগে ও পরে ১৮ জন, গ্রেপ্তারের পর ‘আত্মহত্যা’য় একজন, অসুস্থ হয়ে চারজন এবং একজনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়।
এই এক বছরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ২১২টি প্রতীমা, ৪৫টি বাড়ি-ঘর ও ২১টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে বলেও জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র। এসব ঘটনায় একজন নিহত ও ৬৭ জন আহত হয়।
আসকের প্রতিবেদন অনুযায়ী এই এক বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, জনপ্রতিনিধি, সন্ত্রাসী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা ১২২ জন সাংবাদিককে নির্যাতন, হামলা, হুমকি অথবা হয়রানি করেছেন।
যৌন হয়রানিসহ সহিংসতার শিকার হয়ে এই এক বছরে ১২ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিন নারীসহ খুন হয়েছেন ১৩ জন।
এ বছর সারাদেশের ৮১৮ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ৬৫৯ জন। এই বছর ৩০৩ জন নারী যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ১৪৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে এবং ১০ জন আত্মহত্যা করেছেন।
এ বছর সালিশ ও ফতোয়ার মাধ্যমে ১০ জন নারী নির্যাতনের শিকার হন। এ বছর এক হাজার ৬৭৫ শিশু হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৩৩৯ শিশুকে হত্যা করা হয়, আত্মহত্যা করেছে ১১৭টি শিশু।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা, জ্যেষ্ঠ উপ-পরিচালক রওশন জাহান পারভীন, নীনা গোস্বামী প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন