এক মাসে ধর্ষণের শিকার ৩৩২ নারী
সারাদেশে গত এপ্রিল মাসে ৩৩২ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। গত মার্চ মাসে এ সংখ্যা ছিল ৩২৪। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ধর্ষণের শিকার নারীর সংখ্যা বেড়েছে ৮ জন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই’র মাসিক আইন-শৃঙ্খলা প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, দিন দিন বেড়েই চলছে ধর্ষণ কিংবা নারী নির্যাতনের ঘটনা। বিশ্লেষকরা বলছেন, ধর্ষণ বন্ধে আইনের বাস্তবায়ন সুনিশ্চিত করার সঙ্গে রাজনৈতিক অঙ্গীকারও বাস্তবায়ন করতে হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণ যাতে বৃদ্ধি না পায় সেজন্য কঠোর আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ইভটিজিং প্রতিরোধ আন্দোলনের ন্যায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানসহ সর্বস্তরের জনগণের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
এ বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনাররা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণ যাতে বৃদ্ধি না পায় সে লক্ষ্যে কঠোর আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ইভটিজিং প্রতিরোধ আন্দোলনের ন্যায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানসহ সর্বস্তরের জনগণের সম্পৃক্তার মাধ্যমে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কার্যক্রম চলমান।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত মোতাবেক নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণ যাতে বৃদ্ধি না পায় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গত ২৩ মার্চ এডিশনাল আইজি, পুলিশের স্পেশাল ব্র্যাঞ্জের ডিজি, র্যাব, সব পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি এবং পুলিশ সুপারকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট ইউনিট কর্তৃক বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
তবুও কমছে না নারী ধর্ষণ। খোদ রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনার রেশ না কাটতেই বনানীতে ‘জন্মদিনের দাওয়াতে’ ডেকে নিয়ে গত মঙ্গলবার রাতে আরও এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগে বুধবার ওই তরুণী বনানী থানায় বাহাউদ্দিন ইভান নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
বনানী থানার পুলিশ বলেছে, বাহাউদ্দিন সপরিবারে বনানীর ন্যাম ভিলেজের একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন। তার বাবা ব্যবসায়ী। মঙ্গলবার রাতে বাহাউদ্দিন তার জন্মদিনে দাওয়াতের কথা বলে পূর্বপরিচিত ও অভিনেত্রী এক তরুণীকে (২১) বাসায় ডাকেন। রাত দেড়টার দিকে তিনি ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেন। তখন বাসায় বাহাউদ্দিন ছাড়া কেউ ছিলেন না। রাত সাড়ে ৩টার দিকে বাহাউদ্দিন তাকে বাসা থেকে বের করে দেন। এরপর তরুণী বনানী থানায় যান। বুধবার সকালে তিনি বাহাউদ্দিনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন।
এর আগে গত ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের দাওয়াতে ডেকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে শাফাত আহমেদ, শাফাতের বন্ধু নাঈম আশরাফ ওরফে আবদুল হালিমসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অপর তিন আসামি হলেন শাফাতের বন্ধু সাদমান সাকিফ, গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও দেহরক্ষী রহমত আলী ওরফে আজাদ। শাফাতসহ সব আসামি বর্তমানে কারাগারে আছেন। এ মামলায় ওই পাঁচজনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নারী নির্যাতনের ঘটনা এমনভাবে সাজান যে, সেটা আদলতে গেলেও আরেকটা সমস্যার জন্ম দেয়। তাই আইনের বাস্তবায়ন সুনিশ্চিত করার সঙ্গে রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে হবে। বিভিন্ন দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা রয়েছে। তবে আমাদের দেশে যে হারে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে সেটা আমাদের সংক্ষুব্ধ করে। অপরাধীদের পার পেয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি নতুন-নতুন ঘটনার জন্ম দিচ্ছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন