একসঙ্গে কাজ করার শপথ সাঈদ-মুরাদের
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ও মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব মিটমাট করলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার সাবেক মেয়র হানিফের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভা ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে মঞ্চের সামনে এনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করান কাদের।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটি দক্ষিণ সিটি করপোশন মাঠে অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে শাহে আলম মুরাদ নিজ উদ্যোগেই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সব সংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কাজ করবে, আজকের দিনে এই হোক আমাদের শপথ। ভেদাভেদ ভুলে ঢাকা শহরকে পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে গড়ে তুলতে মেয়র সাঈদ খোকনকে সহায়তা করব, মেয়র হানিফের মৃত্যুবার্ষিকীতে এই হোক আমাদের প্রত্যয়।’
সভাপতির বক্তব্যে সাঈদ খোকন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশে সব ধরনের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বদ্ধপরিকর-এমন আশ্বাস দেন।
এ ছাড়া প্রয়াত মেয়র হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন বলেন, ‘২৮ নভেম্বর থেকে পরবর্তী ১৫ দিন রক্তদান কর্মসূচি, দরিদ্রদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ ও বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে।’
এর আগে মেয়র সাঈদ খোকন ও শাহে আলম মুরাদের মধ্যে অনুসারীদের মধ্যে দফায় দফায় দ্বন্দ্ব ও হাতিহাতি হলেও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশে মেয়র হানিফের মৃত্যুবার্ষিকীতে দুই নেতা এক মঞ্চে আসেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত, সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন কাউন্সিলর আবু আহমেদ মান্নাফি।
এর আগে গত রোববার শাহে আলম মুরাদ ও সাঈদ খোকনের দ্বন্দ্ব অবসান করার উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। ওই দিন সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে দলের সাংগঠনিক আলোচনায় হাজির করা হয় শাহে আলম মুরাদ ও সাঈদ খোকনকে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ওবায়দুল কাদের মুরাদ ও সাঈদ খোকনকে নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে দলের স্বার্থে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান। এ সময় উভয় পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিতে চাইলে ওবায়দুল কাদের থামিয়ে দেন এবং পরোক্ষ বক্তব্যে সতর্ক করে দেন। নিজ উদ্যোগে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে মেয়র হানিফের স্মরণানুষ্ঠন সফল করার তাগিদ দেন।
এ সময় ওবায়দুল কাদের ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি।
ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগে এক সময় আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, হাজী সেলিম ও ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের আধিপত্য ছিল। বর্তমানে সেটা অনেকাংশেই দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ ও মেয়র সাঈদ খোকনের নিয়ন্ত্রণে। তবে, শাহে আলম মুরাদ একক সিদ্ধান্তে দল পরিচালনা করার কারণে দলের একটা বিরাট অংশ এরই মধ্যে মুরাদের বিপক্ষে চলে যায়। প্রকাশিতব্য যে চূড়ান্ত কমিটি রয়েছে সেখানে মায়া, হাজি সেলিম, জালাল ও সাঈদ খোকনের লোকদের জায়গা না দেওয়ায় বিভেদ চূড়ান্ত পর্যায়ে যায়।
গত ১৬ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১০ টায় আজিমপুর পার্ল হারবার কমিউনিটি সেন্টারে নাগরিক সমাবেশকে সফল করার লক্ষে ও নতুন সদস্য সংগ্রহের জন্য ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ একটি বর্ধিত সভা আয়োজন করে। সভায় বাধা দিতে সামনের রাস্তায় সিটি করপোরেশনের ময়লা ফেলে সভা ভণ্ডল করার চেষ্টা করে। পরে দক্ষিণের নেতাকর্মীরা ময়লার স্তূপ কিছুটা সরিয়ে ওই কমিউনিটি সেন্টারে প্রবেশ করে সভা চালাতে থাকে।
মুরাদের দাবি ছিল, এটি সাঈদ খোকন গ্রুপের কাজ।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও পরিস্থিতি দেখে তিনি চলে যান। বিশেষ অতিথি হিসেবে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এরপর দুপুরে রাজধানীর আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শাহে আলম মুরাদের কর্মীদের সঙ্গে সাঈদ খোকনের কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় অনেক মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পুলিশ উভয়পক্ষের আটজনকে আটক করে।
ওই ঘটনার পর তাঁদের দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকট আকারে ধরা পড়ে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর তাঁদের দ্বন্দ্বের আমলনামা জমা হয় গণভবনে। এই দুই পক্ষের নেতারা স্বপক্ষের যুক্তি তুলে ধরে অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগও দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই পক্ষের অভিযোগ শোনেন। তিনি দলের মধ্যে বিভেদ নয় বরং দলের হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি এ ধরনের দৃষ্টিকটু দৃশ্য আর দেখতে চান না বলেও হুঁশিয়ার করে দেন।
এর আগে গত মাসে মগবাজার ফ্লাইওভার উদ্বোধনের দিন মুরাদের লোকজন সাঈদ খোকনের লোকদের মঞ্চে উঠতে দেয়নি। এ নিয়েও হাতাহাতি হয়েছে। এরপর জেল হত্যাদিবস উদযাপনের প্রস্তুতি সভায় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপের উপস্থিতিতে শাহে আলমের ওপর চড়াও হয় সাঈদ খোকনের লোকজন। এ সময় সাঈদ খোকনকে পুলিশি নিরাপত্তায় ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন