একাই ১৩টি দোকান দখল করলেন আ.লীগ নেতার ছেলে
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিকেনগর ইউনিয়নের বিকেনগর আনন্দ বাজারের ১৩টি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান তালাবব্ধ করে দখলে নিয়েছেন চেয়ারম্যানের ছেলে মো. আজাদুল ইসলাম।
বুধবার সন্ধ্যায় আজাদুল ইসলাম শতাধিক লোকজন নিয়ে ওসব ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান তালাবদ্ধ করার পাশাপাশি নিজের নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন বলে জানিয়েছেন দোকানের মালিকরা।
বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, জাজিরা-কাঁঠলবাড়ি ফেরিঘাট সড়কের পাশে প্রায় ৩০ বছর আগে বিকেনগর আনন্দ বাজারটি গড়ে উঠে। বাজারে দিন দিন বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বাড়তে থাকে। গত কয়েক বছর ধরে ওই বাজারে ভালোভাবেই ব্যবসা করে আসছিলেন ব্যবসায়ীরা।
কিন্তু হঠাৎ করে বুধবার সন্ধ্যায় মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাদিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মো. জাহাঙ্গীর বেপারীর ছেলে আজাদুল ইসলাম শতাধিক লোকজন নিয়ে বিকেনগর আনন্দ বাজারের পশ্চিম ও পূর্বপাশের ডায়াগনস্টিক সেন্টার, দর্জি, সেলুন, মুদি, পান, হোটেল, হার্ডওয়্যার, লেপ-তোশক ও চায়ের দোকানসহ ১৩টি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান তালবদ্ধ করে দেন। একই সঙ্গে নিজের নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন তিনি।
পরে এসব দোকানের প্রকৃত মালিকরা বিকেনগর আনন্দ বাজার বণিক সমিতির সভাপতি সাইদুল সরদারকে বিষয়টি জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেননি তিনি।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যানের ছেলে আজাদুল ইসলাম বলেন, জাজিরা উপজেলার বিকেনগর ইউনিয়নের ৯৮নং বড়কৃষ্ণনগর মৌজার ৩৩ শতাংশ জমির পৈতৃক সূত্রে মালিক আমি। ৩৩ শতাংশ জমির মধ্যে ওই ১৩টি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান। গত ছয় মাস ধরে এসব ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেয়ার জন্য বললেও শোনেননি ব্যবসায়ীরা। তাই ১৩টি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান তালাবদ্ধ করে দিয়েছি।
বাজারের ভ্যারাইটিজ স্টোরের মালিক মোকলেছ বেপারী বলেন, ৩০ বছর ধরে আমি বিকেনগর আনন্দ বাজারের সরকারি জমিতে ব্যবসা করে আসছি। কিন্তু হঠাৎ প্রভাব খাটিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় আজাদুল লোকজন নিয়ে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তালাবদ্ধ করে দেন। এ ঘটনার পর বাজার বণিক সমিতির সভাপতিকে বিষয়টি জানালে কোনো ব্যবস্থা নেননি। তাই বৃহস্পতিবার বিকেলে আজাদুলের বিরুদ্ধে জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও জাজিরা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
একই বাজারের মিষ্টির দোকানের মালিক মোক্তার ছৈয়াল বলেন, আমি ৮ বছর ধরে এই বাজারে মিষ্টির ব্যবসা করে আসছি। বুধবার সন্ধ্যায় আজাদুলের নেতৃত্বে ৮০-৯০ জন লোক এসে আমাকে দোকান থেকে বের করে দেয়। পরে দোকানে তালা মেরে বন্ধ করে দেয় তারা।
বাজারের চায়ের দোকানদার জলিল দেওয়ান বলেন, কয়েক বছর ধরে আমি এই বাজারে চা বিক্রি করছি। চা বিক্রি করে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোনোরকমে বেঁচে আছি। কিন্তু আজ ওরা আমার দোকানটা বন্ধ করে দিলো। এখন আমি সংসার চালাব কিভাবে?।
এ ব্যাপারে বিকেনগর আনন্দ বাজার বণিক সমিতির সভাপতি ও বিকেনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুল সরদার বলেন, ব্যবসায়ীরা বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে ইউএনও ও ওসির সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করব।
এ বিষয়ে জাজিরা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, দোকান বন্ধ সম্পর্কে ব্যবসায়ীরা বৃহস্পতিবার বিকেলে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস বলেন, ব্যবসায়ীরা আমার কাছে অভিযোগটি নিয়ে এসেছিল। পরে জাজিরার ওসিকে আমি ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন