একের পর এক অপরাধ, নিবিড় পর্যবেক্ষণে বিকাশ

অবৈধ লেনদেনের সহজ মাধ্যম বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিং ‘বিকাশ’। হুন্ডিতে রেমিট্যান্স প্রেরণ, অর্থ পাচার, চাঁদাবাজি, অপহরণ, জঙ্গি ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন সব ধরনেরই লেনদেন হচ্ছে বিকাশে।

গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে এসব অবৈধ লেনদেনের প্রমাণও মিলেছে। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বেশ কয়েকবার সতর্কও করা হয়েছে। আইনের ব্যত্যয় ঘটলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এর আগে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) অবৈধভাবে লেনদেনের অভিযোগে ‘বিকাশ’ এর ২ হাজার ৮৮৭ এজেন্টের অ্যাকাউন্ট বন্ধের নির্দেশনা দেয়। একই সঙ্গে ওইসব এজেন্টের লেনদেন অনুসন্ধানে গোয়েন্দা সংস্থাকে চিঠি দেয় বাংলাদেশে ব্যাংক। অনুসন্ধানে অভিযোগ প্রমাণ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। একই সঙ্গে দেশের কয়েকটি জেলায় অভিযান চালিয়ে বিকাশের সাতজন এজেন্টকে বুধবার গ্রেফতার করেছে। এরপর ৮টি মানি লন্ডারিং মামলা দায়ের করা হয়।

এ বিষয়ে সিআইডির অর্গানাইজ ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে সারাদেশে ২ হাজার ৮শ’ বিকাশ এজেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে। এর মধ্যে ২৫টি এজেন্ট নম্বর থেকে বিপুল পরিমাণ টাকার অবৈধ লেনদেন হয়েছে বলে জানানো হয়। তিনি বলেন, একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমাতে প্রবাসীদের আয়ের অর্থ অবৈধভাবে দেশে পাচার করছে, যা মানি লন্ডারিং আইনে অপরাধ। চক্রটি ব্যাংকিং সেবায় না গিয়ে অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে সে টাকা লেনদেন করছে। এক্ষেত্রে দেশে থাকা কতিপয় বিকাশ এজেন্ট এর সঙ্গে জড়িত।

সিআইডির এর কর্মকর্তা বলেন, বিকাশ এজেন্টরা কোনো ধরনের নিয়মের তোয়াক্কা না করে বার্তা অনুযায়ী কাঙ্খিত জায়গায় টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছে। এতে বিকাশের হিসাব ব্যবহার করছে। ফলে বিদেশ থেকে সরাসরি টাকা বাংলাদেশে না আসায় রেমিট্যান্স কমছে বাংলাদেশের। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যসহ লেনদেনে। এমন লেনদেন মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১৭ (সংশোধিত ২০১৬) এর ২ (ক) ও (২) ধারা অনুযায়ী অর্থ বা সম্পত্তি পাচারের পর্যায়ভুক্ত। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছে। আরও যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মত বিকাশও লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি গাইডলাইন দেয়া আছে। যেকোনো প্রতিষ্ঠান আইন বা নীতিমালা অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর আগেও বিকাশকে সতর্ক করেছি। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি আইনের ব্যত্যয় ঘটলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, বিকাশের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিআইডি অনুসন্ধান করেছে। সবার সম্মিলিত চেষ্টার অংশ হিসেবে এটি একটি উদাহরণ। এর ফলে মোবাইল ফাইন্যান্স সার্ভিসের নিয়মনীতি মেনে সব এজেন্ট ব্যবসা করবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক একাধিকবার বিকাশকে সতর্ক করেছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন মেনেই বিকাশ ব্যবসা করছে, কোনো আইন অমান্য করছে না বলে জানান তিনি।

বিএফআইইউ সূত্র জানায়, ২ হাজার ৮৮৭টি এজেন্ট একাউন্ট মূল টার্গেট। অবৈধভাবে রেমিট্যান্স প্রেরণে বিকাশের একাউন্ট দিয়ে লেনদেন করা হয়েছে। তাদের নামে সব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে বলা হয়। একই সঙ্গে তদন্ত ও আইনগত ব্যবস্থা নিতে বিকাশের ওইসব এজেন্টের হিসাবের তথ্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে দেয় বিএফআইইউ। গোয়েন্দা সংস্থাকে দেয়া চিঠিতে বিএফআইইউ জানায়, বেনামে, ছদ্মনামে বা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে এক পরিচয়পত্রের বিপরীতে একাধিক ব্যক্তিগত হিসাব (অ্যাকাউন্ট) বন্ধ করা হলে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে।

অবৈধভাবে প্রেরিত রেমিট্যান্স মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বিতরণ বন্ধ হলে বৈধ পথে বাড়বে প্রবাসী আয়। অপহরণ, জঙ্গি অর্থায়ন ও অন্যান্য অপরাধে অর্থায়ন নিয়ন্ত্রণে আসবে। একই সঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনে গ্রাহকের নিজ হিসাবের ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে।

উল্লেখ্য, দেশে ১৮টি মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের বিকাশ ও ডাচবাংলা ব্যাংকের রকেট সবচেয়ে জনপ্রিয়। এছাড়া ইউক্যাশ, শিওরক্যাশ, মাইক্যাশ, এমক্যাশ, ফার্স্ট পে, ওকে ব্যাংকিং, হ্যালো, মোবাইল মানি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।-সৌজন্যে : জাগো নিউজ