এপ্রিলেই মহাকাশে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট
দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত না হলেও দেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’ এপ্রিলেই মহাকাশে যাচ্ছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। মার্চের শেষ সপ্তাহের (২৬-৩১ মার্চ) যেকোনও দিন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হওয়ার কথা থাকলেও উৎক্ষেপণ-সংস্থার কাছ থেকে চূড়ান্ত দিনক্ষণ না পাওয়ার কারণে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই আসতে পারে সেই মাহেন্দ্রক্ষণটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্পের প্রকল্প-পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মেজবাহউজ্জামান জানান, প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে ৩০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের উপস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে। সেখানে আরও উপস্থিত থাকবেন তথ্যপ্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদসহ এ প্রকল্পের পরিচালক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার ও বিটিআরসির কর্মকর্তারা। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ অনুষ্ঠানটি অনলাইনে সম্প্রচার করা হবে। সেখান থেকে নিয়ে বিটিভি সম্প্রচার করতে পারে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে দেশে থেকেই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ অনুষ্ঠান পর্যবেক্ষণ করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
প্রকল্প-পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মেজবাহউজ্জামান আরও বলেন, ‘অফিসিয়ালি এখনও তারিখ জানানো হয়নি। আমরা অপেক্ষা করছি। তবে এপ্রিলেই এটা হবে। তারিখ নির্দিষ্ট করে সংশ্লিষ্টরা (যুক্তরাষ্ট্রের স্পেস এক্স নামক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রতিষ্ঠান) আমাদের অন্তত ১৫ দিন আগে জানাবেন।’ ১৫ মার্চের পরে তারিখটি জানা যেতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে এ পর্যন্ত কয়েকবার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের তারিখ বদলানো হয়েছে। প্রথমত, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বরে উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। পরে নতুন তারিখ ঠিক হয় এ বছরের ১ মার্চ। আবারও পরিবর্তন হয় সম্ভাব্য তারিখ। নতুন তারিখ ধরা হয় মার্চের শেষ সপ্তাহ বা ২৬-৩১ মার্চের মধ্যে যে কোনোদিন। কিন্তু এ সময়ের মধ্যেও মহাকাশে উড়ছে না বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। এখন এপ্রিলের যেকোনও দিন উৎক্ষপণের চূড়ান্ত সময় নির্ধারণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ উপলক্ষে সারাদেশে যেন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে সেজন্য সেমিনার, সিম্পোজিয়ামসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ অনুষ্ঠান বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
স্যাটেলাইটটি নির্মাণ করেছে ফ্রান্সের থ্যালাস অ্যালেনিয়া নামের একটি প্রতিষ্ঠান। স্যাটেলাইটের কাঠামো তৈরি, উৎক্ষেপণ, ভূমি ও মহাকাশের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ভূ-স্তরে দু’টি স্টেশন পরিচালনার দায়িত্ব এ প্রতিষ্ঠানটিরি। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। স্যাটেলাইটে থাকছে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার। এগুলোর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ২০টি ব্যবহার করবে বাংলাদেশ। অন্যগুলো ভাড়া দেওয়া হবে। স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ এর গ্রাউন্ড স্টেশন তৈরি করা হয়েছে গাজীপুর ও রাঙ্গামাটিতে।
উল্লেখ্য, ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রির অরবিটাল স্লটে (নিরক্ষরেখায়) উড়বে বাংলাদেশের নিজস্ব প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণের জন্য ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে ১৫ বছরের জন্য অরবিটাল স্লট বা নিরক্ষরেখা (১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি) লিজ নিয়েছে বাংলাদেশ। ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার ব্যয়ে এ স্লট বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সঙ্গে রাশিয়ার ইন্টারস্পুটনিক ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব স্পেস কমিউনিকেশনের মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়। চুক্তি অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হওয়ার কথা ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সেসময় উৎক্ষেপণ সম্ভব হয়নি। ইন্টারস্পুটনিকের সঙ্গে ১৫ বছরের চুক্তি হলেও এ চুক্তি তিন ধাপে ৪৫ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। এই প্রকল্পে সরকারের যে টাকা খরচ হবে তা স্যাটেলাইট ভাড়া দিয়ে ৮ বছরে তুলে এনে এই প্রকল্পকে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) বাংলাদেশকে নিরক্ষরেখার ১০২ ডিগ্রি স্লট বরাদ্দ দেয়। কিন্তু প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশ তাতে বাধা দেয়। দেশগুলোর আপত্তির মুখে বাংলাদেশ বিকল্প উপায় খুঁজতে থাকে। বিকল্প হিসেবে ৬৯ ডিগ্রিতে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রস্তাব দেওয়া হয় বাংলাদেশকে। কিন্তু বিকল্প প্রস্তাবেও আপত্তি তোলে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও চীন।
সর্বশেষ ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রিতে (পূর্ব) স্লট বরাদ্দ পাওয়া যায়। কিন্তু এই স্লটটিও খালি ছিল না। স্লটটি ছিল ইন্টারস্পুটনিকের। কিন্তু অর্থের সংস্থান না হওয়ায় রাশিয়ার মহাকাশবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইন্টারস্পুটনিকের নিজস্ব দু’টি স্লটের বিপরীতে (৮৪ ও ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি) দুই মাসের একটি শর্তহীন চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্প শুরুর আগেই বিদেশি বিশেষজ্ঞ বা পরামর্শক নিয়োগ এবং প্রকল্প গবেষণায় সরকারের ব্যয় হয় ৮৬ কোটি টাকা। এই টাকা সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে পারলে বছরে ১ কোটি ১০ লাখ ডলার সাশ্রয় হবে বাংলাদেশের। নিজস্ব স্যাটেলাইট না থাকায় এখন অন্য দেশের স্যাটেলাইট ভাড়া করে প্রয়োজন মেটাতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। অন্যদিকে দেশের স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলো বিভিন্ন দেশের স্যাটেলাইট ভাড়া করে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে আসছে। নিজস্ব স্যাটেলাইট হলে ভাড়ার টাকা আর বিদেশে পাঠাতে হবে না। ওই অর্থের পরিমাণ প্রায় ৫ কোটি ডলার। এই পরিমাণ অর্থ সরকার প্রতি বছর রাজস্ব হিসেবে আয় করতে পারবে।-সৌজন্যে : বাংলাট্রিবিউন
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন