এবার বিশ্বে নতুন আতঙ্ক ‘মারবুর্গ ভাইরাস’

গিনিতে প্রথম মারবুর্গ ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে। ইবোলার সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)—এর মতোই প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ পশ্চিম আফ্রিকায় এই প্রথম শনাক্ত হলো।

বাদুড়ের মাধ্যমে ছড়ানো এই ভাইরাসটির কারণে মৃত্যুহার ৮৮ শতাংশ পর্যন্ত দেখা গেছে। দক্ষিণ গুয়েকডুতে ২ আগস্ট মৃত্যুবরণ করা এক রোগীর কাছ থেকে নেয়া নমুনা পরীক্ষায় এই ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

আফ্রিকার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক ড. মাতশিদিশো মোয়েতি বলেন, মারবুর্গ ভাইরাসের দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনার অর্থ হলো—‘আমাদের এটিকে তার ট্র্যাকের মধ্যেই আটকাতে হবে।’

মাত্র দুই মাস আগেই গিনিতে ইবোলার দ্বিতীয়বারের মতো প্রাদুর্ভাব শেষ ঘোষণা করেছিলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গত বছর সেই সংক্রমণ শুরু হয়েছিলো আর তাতে প্রাণ হারিয়েছিলো ১২ জন।

জেনেভায় সংস্থাটি বলেছিলো, স্থানীয়ভাবে এর ঝুঁকি খুব বেশি থাকলেও বৈশ্বিকভাবে খুব কম। আমরা একটি দ্রুত প্রতিক্রিয়া বাস্তবায়নের জন্য স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সাথে কাজ করছি। যেটা গিনির অতীত অভিজ্ঞতা এবং ইবোলা পরিচালনার দক্ষতার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। ইবোলাও একইভাবে সংক্রমিত হয়।

এক বিবৃতিতে গিনি সরকার মারবুর্গ সংক্রমণের তথ্য নিশ্চিত করেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মারবুর্গ ভাইরাস সাধারণত রাউসেটাস বাদুড়ের গুহা বা খনি আবাসন উপনিবেশের সংস্পর্শের সাথে যুক্ত। একবার মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে, এটি সংক্রমিত মানুষের শারীরিক তরলের সংস্পর্শে বা দূষিত উপরিভাগ এবং উপকরণের মাধ্যমে অন্যদের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

সিয়েরা লিওন ও লাইবেরিয়ায় সীমান্তের কাছাকাছি বন এলাকার এক গ্রামে এই ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়, গত ২৫ জুলাই ওই ব্যক্তির শরীরে লক্ষণ দেখা দেয়।

স্থানীয় হাসপাতালে তার ম্যালেরিয়া পরীক্ষা করার পর তিনি মারা যান। পরে তার পোস্টমর্টেম রিপোর্টে ইবোলার সংক্রমণ দেখা না গেলেও মারবুর্গ ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১০ জন বিশেষজ্ঞ এরই মধ্যে সেখানে জাতীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে সহায়তা প্রদান করছে, তাদের মধ্যে মহামারীবিদ এবং সমাজ-নৃবিজ্ঞানীও আছেন। সীমান্তেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

ওই ব্যক্তির পরিবারের তিন সদস্য ও একজন স্বাস্থ্যকর্মীকে উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন বলে তাদের পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি সংক্রমণের উৎস ও অন্যান্য ঝুঁকি শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এর আগে সাউথ আফ্রিকা, আঙ্গোলা, কেনিয়া, উগান্ডা ও কঙ্গোতে এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা গেলেও পশ্চিম আফ্রিকায় এটাই প্রথম।

প্রবল জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা ও অস্বস্তি নিয়ে এই রোগ শুরু হয়। এখনও এর কোনও অনুমোদিত ভ্যাকসিন বা অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা পাওয়া যায়নি। তারপরও চলমান চিকিৎসাতেই পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয় বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।