ওরা বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলো, মৃত্যু হলো কেন?

আমার বোনের সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই, আমাকে তোমরা তার কাছে নিয়ে যাও। সকালে কলেজে যাওয়ার সময় তার সঙ্গে আমার কথা হয়নি। আমি তার সঙ্গে একটু কথা বলবো।

কুর্মিটোলা হাসপাতালে মামা সেলিম মিয়ার কোলে মাথা রেখে কথাগুলো বলছিলো দুপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী দিয়া খানম মীমের (১৫) বড় বোন রোকেয়া খানম। রোকেয়া মহাখালী টি এন্ড টি মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী।

বরিশালের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার জইনা তালুকদার বাড়ির জাহাঙ্গীর হোসেনের তিন সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় ছিল দিয়া। বর্তমানে মহাখালী দক্ষিণপাড়া বড় মসজিদ এলাকায় থাকতো তারা।

সেলিম মিয়া বলেন, প্রতিদিন কলেজে যাওয়ার সময় দিয়া আমাকে সালাম দিয়ে যেতো। আমি দিয়াদের বাসার পাশেই থাকি। এখন আর আমাকে সালাম দিবে না আমার ভাগ্নি দিয়া।

এদিকে, আবদুল করিম রাজিবের (১৬) মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন তার খালাতো ভাই মেরাজ উদ্দিন।

তিনি বলেন, দক্ষিণখান আশকোনা বাজার এলাকায় আমি থাকি। ওদের বাড়ি নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায়। আমার কাছে থেকেই রাজিব লেখাপড়া করতো। তারা খুব গরিব। তার বাবা নুরুল ইসলাম অনেক আগেই মারা গেছেন। তারা চার ভাই বোন, রাজিব ছিল দ্বিতীয়। বোনদের বিয়ে হবার পরে তার মা মহিমা খাতুনের স্বপ্ন ছিল রাজীবকে নিয়ে। মায়ের স্বপ্ন চুরমার করে দিয়ে রাজিব চলে গেল পরপারে।

জানা যায়, ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন মা মহিমা।

এদিকে, শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর অকাল মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না তাদের সহপাঠী ও কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা। তারা কুর্মিটোলা হাসপাতালে এসে ভিড় করেছে। সহপাঠীদের মধ্যে আবদুল্লাহ আল-আমিন নামে এক ছাত্রসহ আরও অনেকে বলেন, তারাতো কলেজ শেষ করে বাসায় যাওয়ার জন্য রাস্তার পাশে বাসের অপেক্ষা করছিল। এমন যদি হতো তারা রাস্তা পার হচ্ছে, বাসচাপায় মৃত্যু, তাহলে মেনে নিতাম। তারা তো রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল বাসের অপেক্ষায়, তাহলে কেন বাসচাপায় তাদের মৃত্যু হলো?

রোববার (২৯ জুলাই) দুপুরে হোটেল র‌্যাডিসনের সামনে জিল্লুর রহমান মিরপুর-এয়ারপোর্ট রোডে সড়ক দুর্ঘটনায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ওই দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।