কক্সবাজারের মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ
কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের দরপত্র আগেই স্থগিত করে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল)। সিপিজিসিবিএল নতুন করে এমন একটি কোম্পানির সঙ্গে দরকষাকষি করেছে, যারা দরপত্রের নিয়ম লঙ্ঘন করে মাতারবাড়ি পাওয়ার প্ল্যান্টে কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল।
সম্প্রতি (২৭ মে) ইউনিক সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়ামের আর্থিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে প্রকল্পটির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। তবে সিপিজিসিবিএলের একটি অংশ অবৈধ সুবিধা পাওয়ার জন্য বাতিল আর্থিক প্রস্তাব পুনরায় চালুর চেষ্টা করছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।
বাতিল করা প্রস্তাব ফের চালু করে কনসোর্টিয়ামকে কয়লা আমদানির অনুমতি দেওয়ার জন্য প্রকল্পের কর্মকর্তারা সম্প্রতি একটি বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে। তবে সিপিজিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বিশেষ সুযোগ নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে আজাদ বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ সত্য নয়। টেন্ডার মূল্যায়ন এখনো চলছে। মূল্যায়নের সময় এর বেশি কিছু বলা যাবে না।’
কক্সবাজারের মহেশখালীতে ১২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন জুনের শেষ সপ্তাহে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর থেকে দ্বিতীয় ইউনিটের পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হলেও একই মাসের ২৬ তারিখ থেকে প্রথম ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়।
দেশি-বিদেশি কোম্পানির অংশগ্রহণে চারটি কনসোর্টিয়াম যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দরপত্র দাখিল করে এতে অংশ নিলেও ‘আর্থিক সক্ষমতার অভাবের’ অজুহাতে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেওয়া হয়।
২৭ মে টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠকে কর্মকর্তারা সব আর্থিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।
২৯ মে প্রকল্প কর্মকর্তাদের ‘স্বেচ্ছাচারিতার’ কারণে বাতিল হওয়া তিনটি কনসোর্টিয়ামের একটি দরপত্র পুনর্মূল্যায়নের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে চিঠি পাঠায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, কমপক্ষে ১.২ মিলিয়ন টন কয়লা আমদানির অভিজ্ঞতার শর্ত ছিল, যা কয়লা আমদানি সংক্রান্ত দরপত্রের জন্য একটি প্রাসঙ্গিক শর্ত। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট ফার্মকে অন্যায় সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে শর্তটি শিথিল করা হয় এবং ১.২ টন লোহা, সার, রাসায়নিক, সিমেন্ট বা খাদ্যশস্য আমদানির অভিজ্ঞতাকে যোগ্যতা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা একটি ‘অসম প্রতিযোগিতা’ তৈরি করে।
দরপত্রে অংশগ্রহণকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে একটি কনসোর্টিয়ামের আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা সরবরাহের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
এতে অংশ নেওয়া একটি কনসোর্টিয়ামের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের ব্যাপক অভিজ্ঞতা এবং কয়লা সরবরাহে সাফল্য রয়েছে। কিন্তু সেগুলো বিবেচনা না করে, বিস্তারিত কিছু না জানিয়ে, প্রযুক্তিগত বিষয়ে কোনো প্রশ্ন না করে এবং আমাদের ব্যাখ্যা করার কোনো সুযোগ না দিয়ে ‘প্রযুক্তিগতভাবে অযোগ্য; ঘোষণা করা হয়।’
টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী সংস্থাগুলোর মতে, একটি একক সংস্থার দরপত্র ‘প্রযুক্তিগতভাবে যাথোপযুক্ত প্রতিযোগিতামূলক ও রাষ্ট্রের জন্য লাভজনক নয় বলে ঘোষণা করার পরও একটি একক প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়ারে মাধ্যমে টেন্ডার প্রক্রিয়াটি প্রশ্নবিদ্ধ ও পক্ষপাতমূলক।
টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অভিযোগের বিষয়ে কারিগরি কমিটির সদস্য ও সিপিজিসিবিএলের নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) মো. শহীদ উল্লাহর সঙ্গে ফোনে ও টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন