সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক
কবির মৃত্যুর ৬ বছরেও গড়ে উঠেনি স্মৃতি কমপ্লেক্স! দ্রুত বাস্তবায়ন চায় জেলাবাসী
আজ মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক এর ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি না ফেরার দেশে চলে যান। কবির অন্তীম ইচ্ছে অনুযায়ী কবিকে কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজের সবুজ চত্বরে সমাহিত করা হয়।
এখানে সমাহিত হবার ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও গড়ে উঠেনি কবির স্মৃতি কমপ্লেক্স। ছাত্র শিক্ষক ,সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের মানুষসহ জেলাবাসী চান দ্রুত গড়ে উঠুক স্মৃতি কমপ্লেক্সটি সেই সাথে হয়ে উঠুক গবেষণাকেন্দ্র।
বাংলা সাহিত্যের সব্যসাচী খ্যাত সৈয়দ শামসুল হক ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম শহরের থানা পাড়ার পৈত্রিক নিবাসে জন্মগ্রহণ করেন। সৈয়দ হক তার বাবা-মায়ের আট সন্তানের মধ্যে সবার বড়। বাবা সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন ও মা হালিমা খাতুন। বাবা পেশায় ছিলেন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার। বাংলা সাহিত্যের সব শাখায় সমানভাবে পদচারণার জন্য সৈয়দ শামসুল হককে “সব্যসাচী লেখক” বলা হয়। তিনি ১৯৬৪ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়সে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন।
এছাড়াও তিনি একুশে পদক এবং স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন। ১৯৬৬ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়সে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন তিনি। বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে ১৯৮৪ সালে একুশে পদক এবং ২০০০ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
১৯৫০-এর দশকে প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস “দেয়ালের দেশ”। এছাড়াও তার লেখা অন্যান্য উপন্যাসগুলোর মধ্যে খেলারাম খেলে যা, নিষিদ্ধ লোবান, সীমানা ছাড়িয়ে, নীল দংশন, বারো দিনের জীবন, তুমি সেই তরবারী,কয়েকটি মানুষের সোনালী যৌবন ও নির্বাসিতা।
তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে: একদা এক রাজ্যে, বৈশাখে রচিত পঙক্তিমালা, পরানের গহীন ভিতর, অপর পুরুষ, অগ্নি ও জলের কবিতা। পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় ও নুরুলদীনের সারা জীবন সৈয়দ শামসুল হকের বিখ্যাত কাব্যনাট্য।
৫ ভাই ৩ বোনের মধ্যে সবার বড় কবি সৈয়দ হক ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত তিনি এখানেই লেখাপড়া করেন,শৈশব আর কৈশরের নিবিড় সর্ম্পকের কারনে মৃত্যুর পর এখানেই শায়িত হবার শেষ ইচ্ছে প্রকাশ করেন কবি। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সালে কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজের সবুজ চত্বরে রাষ্ট্রিয় মর্যাদায় শায়িত করা হয় সব্যসাচী এই লেখক কবিকে সেসময় বিভিন্ন কর্তাব্যাক্তি এথানে স্মৃতি কমপ্লেক্স গড়ে তোলার কথা বলেন। সে অনুযায়ী বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের উচ্চ পদস্থ ব্যাক্তিরা এখানে পরিদর্শনও করেছেন। কিন্তু এক এক করে ৬ বছর কেটে গেলেও কবির সমাধিস্থলে এখনও ইট সিমেন্টের শক্ত গাঁথুনি গড়ে উঠেনি। হয়নি স্মৃতি কমপ্লে· লাইব্রেরী কিংবা গবেষণাকেন্দ্র।
শিল্পকলা একাডেমি কিংবা সংস্কৃতি মন্ত্রনালয় থেকে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কিনা তাও জানা নেই কবির স্বজনদের। এ বিষয়ে কবির ছোটভাই সৈয়দ আজিজুল হক বলেন,আমরা এখনও অন্ধকারে রয়েছি।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছাত্রীরা চায় দ্রুত কবির সমাধিস্থলে একটি স্মৃতি কমপ্লে· গড়ে উঠুক। যেখানে সারা বাংলাদেশের ছাত্র ছাত্রীরা আসবে, তারা গবেষনা করতে পারবে। জেলার সাংস্কৃতিক কর্মীরা চায় কবির সমাধিস্থল হয়ে উঠুক সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্রবিন্দু।এ বিষয়ে সভাপতি, কুড়িগ্রাম জেলা সম্মিলিত সাংকৃতিক জোটআহবায়ক শ্যামল ভৌমিক বলেন আমরা চাই সংস্কৃতি মন্ত্রনালয় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন করুক।
দুলাল বোস, সাধারণ সম্পাদক ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি তিনি দাবি করেন সৈয়দ হক সারাদেশের মানুষের কাছে পরিচিত তার স্মৃতি কমপ্লে· হলে এখানে সারাদেশের মানুষ আসবে। এ বিষয়ে গণকমিটি কুড়িগ্রামের সাবেক সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন অবহেলা আর অযতেœ সারাবছর যেন পড়ে না থাকে, কবির সমাধিস্থল। এ বিষয়ে তিনি চান দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপ।
সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়,শিক্ষা মন্ত্রনালয়,গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের কতৃপক্ষ কুড়িগ্রামে পরিদর্শন করে গেছেন এমনকি অর্থ মন্ত্রনালয়েরও সদিচ্ছা রয়েছে বলে জানালেন, একুশে পদকপ্রাপ্ত ও উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা,গবেষক ্এ্যাড, আব্রাহাম লিংকন। তিনি আরো বলেন যারা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া কুড়িগ্রামকে তুচ্ছ তাছিল্য করেন, এখানে দ্রুত কবির সমাধিস্থল স্থাপিত হলে এই এলাকাটি একটি পর্যটন স্থানে পরিণত হবে তখন এ জেলা আর পশ্চাদপদ থাকবেনা।
কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজ কতৃপক্ষ শিক্ষামন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে কবির সমাধিস্থল নির্মানের জন্য ইতিমধ্যে জায়গা বরাদ্দ দিয়েছে বলে জানান,কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মির্জা মোঃ নাসির উদ্দিন।তিনি আরো বলেন এখানে কমপ্লে· গড়ে উঠলে জাতি সন্মানিত হবে,কবি সন্মানিত হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন